বিসমিল্লাহ
আজ সকাল থেকেই মায়ের হাতে অনেক কাজ। কাজ তো প্রতিদিনই থাকে, তবে আজকের কাজগুলো কেমন যেন আনন্দের। মায়ের মুখটাকে মনে হচ্ছে নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ। তিনি একের পর এক কাজ করছেন, যেন একের পর এক নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছেন। চুলার ওপর যে রান্নার ধোঁয়া উড়ছে, এ যেন নতুন বইয়ের গন্ধ। মুমিনের অনুভব জুড়ে আজ শুধু নতুন বই।
মুমিন আজ প্রথম মাদরাসায় যাবে। এদিকে মুহাইমিনও সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে। নতুন শ্রেণিতে তারও আজ প্রথম দিন। তবুও আজকের সকল আনন্দ যেন মুমিনেরই।
নতুন ব্যাগে নতুন বই। দু'জনেরই। মা প্রথমে মুমিনের কাঁধে ব্যাগ তুলে দেওয়ার সময় বললেন-বিসমিল্লাহ। তারপর মুহাইমিনের পালা। এবারও বললেন- বিসমিল্লাহ। ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও বললেন- বিসমিল্লাহ। তাদের বললেন, তোমরাও বলো- বিসমিল্লাহ।
ছুটির পর মুমিন-মুহাইমিন হাত ধরাধরি করে বাসায় ফিরলো। মুমিন তো ভীষণ খুশি। এসেই
মায়ের কাছে গল্প বলতে শুরু করলো। কী দেখেছে, কী পড়েছে। আর চলছে হাসাহাসি। লুটোপুটি। মুহাইমিন তো এ সময়টা আগেই পার করে এসেছে। সে-ও দারুণভাবে উপভোগ করছে মুমিনের এমন খুশির মুহূর্ত। কিন্তু মুহাইমিন আজ কী যেন জানতে চায়! মা বললেন- কিছু বলবে? সে বললো- আজ সকালবেলা এতবার বিসমিল্লাহ বলেছো কেন?
কী দারুণ প্রশ্ন আমার ছেলেটার, বললেন মা!
শোনো- বিসমিল্লাহ এক পবিত্র শব্দ। এর মাধ্যমেই জীবনে সুখ আসে। খুশি আসে। বরকত আসে। এর অর্থ 'আল্লাহর নামে।' কুরআনের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন- ইকরা বিসমি রব্বিক্কা- পড়ো তোমার প্রভুর নামে। সকল কাজে প্রভুর নামটিই প্রথমে নিতে হয়। নূহ (আ)-এর গল্প জানো তো? নৌকাতে উঠেই তিনি বলেছিলেন- বিসমিল্লাহ! সুলাইমান (আ) রানি বিলকিসের কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার প্রথমেই ছিল- বিসমিল্লাহ। সকল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতেন আমাদের নবীজিও। কেউ যদি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে, শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। ঘরে প্রবেশের সময় এবং খাবারের সময় বললে শয়তান তার সাথীদের বলে- আজ রাতে তোমাদের থাকার জায়গাও নেই, খাবারও নেই।
তাই এসো, বেশি বেশি বিসমিল্লাহ বলি, শয়তানকে দূরে রাখি।
মুহাইমিন বললো, তুমি কি বুঝতে পেরেছো, মুমিন? এখন থেকে সকল কাজে আমরা কী বলবো?
মুমিন বললো- বিসমিল্লাহ!