Posts

উপন্যাস

বাসর ভেঙে পর্ব ৩

October 3, 2025

Humayun Kabir

205
View

বাসর ভেঙে
হুমায়ুন কবীর৩/১৯/২৫

ভালো লাগার যে ফুলটি সময়ের অমোঘ স্রোতে  ভেসে  চলে যায় সে আর ফিরে আসেনা। তারপর বর্তমান আর ভবিষ্যৎ এর বাগানে কত কত নাক্ষত্রিক  ফুল ফুটে ঝলমল করে তবু প্রেমিক মালির মন পড়ে থাকে সেই ভেসে যাওয়া ফুলটির প্রতি।

হাবিবের জীবনে সবই  জুটেছে।জুটেও জোটেনি শুধু লিলির প্রেম।

শুক্রবারের দিন অফিস ছুটি। হাবিব অফিসের
সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে। পূর্বপাশের নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে হেমন্তের মিষ্টি মিষ্টি রোদ এসে গায়ে লাগছে। সকালের এই রোদ হাবিবের খুব ভালো লাগে। এইতো সে চেয়েছিলো। যা চেয়েছিলো হাব্বি তার চেয়েও বেশি পেয়েছে।অফিস বিল্ডিংটা  একতলা । পাঁচটা রুম। সামনে  বিস্তর খোলা  জায়গা। উঠানের শেষমাথায় সিড়ি বাধানো পুকুর। চারিদিকে আম, কাঁঠাল, জাম,জামরুল নারকেল, সুপারির বাগান।  সবই হাবিবরা  ভোগ করে। বাড়ির মালিক বিরাট বড়লোক ঢাকায় থাকে। হাইওয়ে থেকে অল্প দূরত্বে গ্রামের ভিতর তার এই বিশাল বাড়ি। মালিক পক্ষের কেউ এখানে থাকেনা। বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য তো লোক প্রয়োজন। লোক রাখতে গেলে টাকা লাগে। অফিস ভাড়া হওয়াই সেটা আর লাগছেনা। মালিক ও খুশি, হাবিবও খুশি। হাবিবের মা, বোন মহা খশি। হাবিব এই অফিসের ম্যানেজার। তিনটা রুমে আফিস। দুইটা রুমে হাবিব মা বোন নিয়ে থাকে।

সময় পেলে হাবিব আর তার বোন   দীর্ঘ সময় ধরে পুকুরে সাতার কাটে। ছুটছুট খেলে।  মা তাকিয়ে তাকিয়ে  দেখে। পুকুরের সিড়ির উপরে কৃষ্ণচূড়া  গাছের নিচে ইট-বালু সিমেন্ট দিয়ে বেঞ্চ তৈরি করা।  মা সেখানে বসে পান খায় আর ছুর ছুট খেলা দেখে। পুকুরে প্রচুর মাছও আছে। তারা মাঝে মাঝে মাছ ধরে।

হাবিব রোদে বসে তেল মাখতে মাখতে  মাকে ডাকলো, মা, মনি কই?

হাবিব তার ছোট  বোন বিথিকে  মনি বলে ডাকে। বড়বোন ইতির বিয়ে হয়ে গেছে।সে শ্বশুর বাড়ি থাকে।

মা বলল-   দেখ, মনে হয় অর্পাদের বাড়ি গেছে।

- কেন ?

- ওরা মনে হয় পিকনিক করবে।

- পিকনিক?

-শুক্রবারের দিন।জুমার নামাজ পড়তে যাব।  মনে করলাম, সকাল সকাল দুই ভাইবেন একটু সাতার কাটবো। তা আর হলো না। প্রতি সপ্তাহে পিকনিক।

- কল দিয়ে আসতে বল।

- ও মোবাইল নিয়ে গেছে?

-না। অর্পার সেটে কল দে।

- নাম্বার নেই।

শোন অর্পা কিন্তু খুব ভালো মেয়ে।  সুন্দরী বুদ্ধিমতী। অনার্স পড়ে। আমাকে কী সুন্দর করে খালাম্মা, খালাম্মা বলে ডাকে।তুই ওর কাছে কল দিতে চাসনে কেন?  কল দে।

- মা, শোন অর্পার বাপ মোহাম্মদ আজগর শেখ কিন্তু উকিল। উকিলদের এড়িয়ে চলা উচিত কোথায় কোন আইনের প্যাচে ফেলে জেলে ভরে দেবে।

মা কৃত্রিম রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,তোর যত সব আজগুবি কথা। এডভোকেট আজগর শেখ  তোকে খুব পছন্দ করে।

হাবিব একটু আহত কন্ঠে বলল,  মা, তুমি কি লিলির কথা ভুলে গেছো? লিলি আমার  বিয়ে করা বউ। আমি সারা জীবন ওর জন্য  অপেক্ষা করবো।

মা হাবিবের বেদনার্ত আহতকণ্ঠ শুনে চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পর নিজে নিজেই বলতে লাগল,  বাজান, আমার হাতের ব্যথাটা খুব বেড়েছে।

-  চলো বিকেলে ডাক্তারের কাছে।

- ডাক্তারের কাছে যেয়ে আর কি হবে? ডাক্তার বলেছে, আমি যেন বাটনা না বাটি। ভারী জিনিস উঁচু না করি। অন্তত রান্নাবান্না করার জন্য তো একটা লোক লাগে। নাকি? আমি আর কতদিন?

- মা, আমার বিয়ের  কথা উঠলে, লিলির কথা উঠলে তোমার হাতের ব্যথা বাড়ে কেন?

মা মৃদু হেসে বলল, থাপ্পড় দিয়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো। শোন, আগামী মাসে আমি বাড়ি যাব। তোর মামা খুব অসুস্থ।

- তুমি না থাকলে আমার ভাত কে রেধে দেবে?

- অর্পাকে বলে যাব।

- বড় লোকের মেয়ে ও আমার ভাত রেধে দেবে?

-  দেবে।

-বলেছে?

-বলেছে।

- মা, শোন তোমাকে আর ভাত রাধতে হবে না।

-কে রাধবে?

- আমি নিজে। আমি নিজে রেঁধে তোমাদের খাওয়াবো। আমি মেসে থাকতে কত রেখে খেয়েছি।তুমি জানো না?

- পারবি?

- পারব। আমি তো তোমারই ছেলে। পারবো না কেন?

-আচ্ছা সে দেখা যাবে।

Comments