Posts

গল্প

অভিশপ্ত ব্রিজ

October 5, 2025

choto bivuti

Original Author ছোট বিভূতি

173
View

গত বছরের ঘটনা । সবেমাত্র ঠাণ্ডা পরতে শুরু করেছে । আমি বিকাল ৫ টায় বাসা থেকে বের হয়েছি । অনেকদিন পর দেশে এসেছি । নিজের এলাকা খুব বেশি পরিবর্তিত হবার দরুন নিজেই নিজের এলাকা চিনতে পারছিনা । ছোট ছোট ছেলে পেলে আমার সামনেই মনের সুখে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে । আমি ওদের কে চিনতে পারছিনা আবার ওরাও আমায় চেনেনা । বাসার গেট থেকে বের হয়ে রিক্সা নিলাম । গন্তব্য চিরাচরিত রাজবাড়ী ষ্টেশন যেখানে দিনের পর দিন সন্ধ্যে হলেই মিলনের দোকানের চা আর উত্তম দার দোকানের সিগারেট । আমায় দেখে উত্তম দা খুব খুশি । সিগারেট এর দাম নিতে অস্বীকৃতি জানালেন । যদিও আমার পকেটে তখন ১ প্যাকেট ডানহিল রেড । ভেবেছিলাম পুরাতন কোন বন্ধু দেখলে ১ টা সিগারেটে কাজ চালিয়ে নিব । আমিও খুশি হয়ে উত্তম দা কে চা ও সামুচা খাওয়ালাম । সন্ধ্যে হয়ে গেছে একটু আগে । পরিচিত অধিকাংশ বন্ধু তখন ঢাকায় বসবাসরত । নিজের কাছে নিজেই একটু একাকী বোধ করলাম ।

রিক্সা নিয়ে নানার বাড়ীতে ছুটলাম। গিয়ে দেখি ছোট মামা তার পুরাতন বাজাজ বাইকটা বাড়ীর উঠানে রেখে দিয়েছেন । মামির কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিলাম । একটু একটু হাত কাঁপছিল । অনেকদিন বাইক চালানো হয়নি । গন্তব্য ফুপুর বাড়ি । কিছুদিন হল ফুপু চলে গিয়েছিলেন না ফেরার দেশে । ভেবেছিলাম ফুপুর বাড়ীতে গিয়ে ফুপুর কবরটা জিয়ারত করে আসবো । অদ্ভুত শব্দ করে আমার ভটভটি ছুটে চলেছে । রাজবাড়ীর রেল গেট পার হয়ে একটু একটু ছুটে চলেছি । ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম মুরগী ফার্ম । বাইক থামিয়ে এক কাঁপ আদা চা সাথে একটা সিগারেট ধরালাম । মুরগি ফার্ম থেকে আমার ফুপুর বাড়ি মহিশবাথান ২০ মিনিটের পথ । আমার ভট ভটি চলছে । পুরো রাস্তা ঘুটঘুটে কাল অন্ধকার । সামান্য সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম ফুপুর বাড়ি । ওখানে পৌঁছেই দেখা হল ভাতিজা রিমনের সাথে । রিমনের সাথে ফুপুর কবর জিয়ারত করে ফুপুর বাসায় বসলাম । তখন বাজে রাত ৯ টা । সাজ পিঠা সাথে দেশি মুরগির মাংস । ঝট পট ৭-৮ টা পিঠা খেয়ে উঠে বসলাম । একটু বেশিই সেদিন খেয়ে ফেলেছিলাম । ভাবি বলেছিল সেদিন থেকে যেতে কিন্তু অন্যের বাসায় থাকলে কেন যেন আমার ঘুম হয়না ।

রাতের খাবার শেষ করে কিছুক্ষন পর বাইক স্টার্ট দিলাম । চারিদিকে পাতিল কাল অন্ধকার । ভাতিজা রিমন সিগারেট ধরিয়ে আমার ঠোঁট এ গুঁজে দিল । বললো কাকা সামনে স্কুল আছে । জায়গাটা খুব বেশি ভাল না । সাবধানে গাড়ী চালায়েন । ওর কথায় কান দিলাম না । এক্সেলেতর এ চাপ দিয়ে গাড়ী চালানো স্টার্ট করলাম । গাড়ী চলছে ভট ভট ভট ভট । ভাঙ্গাচোরা ইটের রাস্তা । ২য় গিয়ারে গাড়ী দিয়ে ঝাঁকি খেতে খেতে সামনে যাচ্ছি । হাতের ডানে ছোট খাল আর বামে বাঁশ ঝোপ । খালের উপর বাঁশের সাঁকো চোখে পড়লো ।খালের পরেই ধু ধু ধানের ক্ষেত । চারিদিক অন্ধকার বিঁধায় সামনে খুব বেশি দূর দেখা যায়না । কিছুক্ষন যাবার পর কেন জানি হঠাৎ বাইক বন্ধ হয়ে গেল । একটু ঘাবড়ে গেলাম । শীতের রাত তাই জন মানব শূন্য রাস্তা । গাড়ী আবার স্টার্ট দিলাম । বাইকের হেড লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখলাম সামনে কাল কুকুর । ঠিক আমার বাইকের ১০ হাত সামনে । গাড়ীর স্টার্ট আবার বন্ধ হয়ে গেল । এবার সত্যিই ভয় পেলাম । নিজের হাত নিজেই দেখতে পাচ্ছিলাম না । কি ভয়ংকর সেই অন্ধকার । পকেট থেকে লাইটার বের করে আগুন জ্বালালাম । দেখি কুকুরটি আমার বাইকের আনুমানিক ৪ হাত সামনে । ভয়তে শিরদাঁড়া ঠাণ্ডা হয়ে এসেছিল । সিগারেট জ্বালালাম । ৩-৪ টা টান দেয়ার পর বুঝতে পারলাম সামনে দুটি চোখ জ্বল জ্বল করছে । একবার ভেবেছিলাম বাইক ফেলে দৌড় দিব পেছনে । কিন্তু পরক্ষনে ভাবনাটা ঝেড়ে ফেললাম । বাম হাতে সিগারেট রেখে ডান হাতে বাইকের ভার দিলাম । এবার জোরে বিসমিল্লাহ্‌ বলে গাড়ী স্টার্ট দিলাম । প্রথম চান্সেই গাড়ী স্টার্ট নিল । হেড লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখলাম কাল কুকুরটা লেজ নাড়তে নাড়তে বামে খাঁদে নেমে গেল । কিন্তু মনের ভয় যেন দ্বিগুণ হয়ে গেল । আমার হাতের বামেই ১৫ হাত দূরে সেই স্কুল । যেই স্কুলের কথা একটু আগেই আমার ভাতিজা আমায় বলেছিল । ৪ তম গিয়ারে গাড়ী টানতে লাগলাম । ডানে তখন বাঁশ ঝোপ আর বামে স্কুলের দেয়াল । এক টানে মহিসবাথানের মোড়ে এসে পৌঁছাইলাম ।

মোড়ের কাছে কোন দোকান খোলা পেলামনা । কিন্তু সামনে আবার সেই কাল কুকুর । কুকুরকে পাশ কাঁটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি । তখন বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল । পেছনে আর তাকাইনি । যেতে যেতে শুধু ভাবছি । আর মনে মনে এর ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টায় । কিছুদূর যেতেই চলে এলাম কাজী বাঁধার ব্রিজের গোঁড়ায় । রাস্তার দুপাশে শুধুই গাছপালা আর ধু ধু ধান ক্ষেত । হঠাৎ গাড়ীর স্টার্ট আবার বন্ধ হয়ে গেল । সামনে কুয়াশায় কিছুই প্রায় দেখা যায়না । আবার লাইটার জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালাম । তেলের পাইপটা চেক করে নবটা একটু ঢিল করে দিলাম । গাড়ী স্টার্ট দিলাম কিন্তু কি আশ্চর্য ! বাইকের পেছনে কেউ বসেছে । বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কীভাবে ব্যাপারটা মেনে নেই ? ঘাড়ের কাছে কেউ গরম নিঃশ্বাস ফেলছে । পেছনে আর তাকালাম না । জানতাম পেছনে তাকালে হয়তো এই ধরিত্রীকে আর দেখাই হতনা । বুঝতে পারছিলাম কেউ একজন আমার পেছনের আসনে । কখনো কোনদিন জেনে বুঝে কারোর ক্ষতি করিনি । সুতরাং ভয় পেয়েও নিজের উপর ভরসা হারালাম না । অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমি মাটি পাড়া পৌঁছে গেলাম আলোর মাঝে । বাইক থামিয়ে বুঝতে পারলাম পেছনে কেউ নেই । স্থানীয় চার দোকানির কাছে জেনেছিলাম চা খেতে খেতে বহু বছর আগে কাজী বাঁধার ব্রিজ ছিল একটা শ্মশান ঘাট আর সেখানে ২ বছর আগে এক হিন্দু মহিলা বালিয়া কান্দি যাবার পথে তাঁর স্বামী সহ বাইক এক্সিডেন্ট এ মারা যায় । এলাকার লোকজন এখন ও মাঝে মাঝে ঐ মহিলাকে দেখে ।

*বি দ্র ঃ গল্পটি কাল্পনিক কিন্তু যাচাই করলে কল্পনা পিছু ছাড়বেনা ।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • MD Salman Nasafi 1 month ago

    ভাই এখান থেকে কত টাকা ইনকাম করেছেন