অংশ ১: প্রথম ভালোবাসা ও অপেক্ষা
অধ্যায় ১: প্রথম দেখা
বর্ষার পরের এক বিকেল। গ্রামের মাঠে কাদা জল জমেছে, নদীর ধারে হালকা কুয়াশা ভেসে আসছে।
মাহিরা তার নানি বাড়ি যাচ্ছিল, বাঁশের সাঁকো পার করে নদীর ধারে।
হঠাৎ পা পিছলে সে পড়ে যায়।
ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ হাত বাড়িয়ে দিল—
> “সাবধানে! ভিজে গেছে সাঁকোটা?”
মাহিরা তাকিয়ে দেখল এক অচেনা ছেলে—সাদা শার্ট, ভিজে চুল, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ।
ছেলেটি হাসল, চোখে হাসি আর মৃদু কৌতুক।
> “তুমি মাহিরা, তাই না? তোমাদের স্কুলে তোমার নাম অনেকবার শুনেছি।”
মাহিরা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল।
> “হ…হ্যাঁ… আর… আমি… ঠিক আছি।”
ছেলেটি এক হাত দিয়ে তাকে ধরে তুলল, অন্য হাত দিয়ে বইয়ের ব্যাগ ঠিক করল।
> “আমি আরিয়ান। পাশের গ্রামের ছেলে। শহরে পড়াশোনা করতে যাই, কিন্তু মাঝে মাঝে গ্রামে ফিরি।”
সেই বিকেলে তারা নদীর ধারে বসে একে অপরের ছোট ছোট গল্প শোনালো।
মাহিরা দেখল—আরিয়ানের হাসি যেন এক নতুন আকাশের রং নিয়ে এসেছে তার জীবনে।
কয়েক সপ্তাহ পরে, আরিয়ান শহরে ফিরে গেল। বিদায়ের সময় বলল—
> “আমি দূরে থাকব, কিন্তু তোমাকে ভুলব না। প্রতিটা সপ্তাহে চিঠি লিখব। তুমি পড়বে, এবং আমার মতো অনুভব করবে।”
মাহিরা হাতে চিঠি ধরল, মৃদু হাসল, চোখে জল আর হৃদয়ে আনন্দ।
বাক্সে প্রথম চিঠিটি ঢোকাল।
তাঁর মনে হল—ভালোবাসা মানে শুধু দেখা নয়, অনুভবও হয়।
---
অধ্যায় ২: চিঠির শুরু
প্রথম চিঠি এল সপ্তাহের শেষ দিকে।
> “প্রিয় মাহিরা,
শহরের আকাশে আজ একদম ভোরের মতো পরিষ্কার আলো। তোমার কথা মনে পড়ছে, নদীর ধারে বসে তুমি আকাশের দিকে তাকাচ্ছো। আমি জানি দূরে আছি, কিন্তু মন তোমার সঙ্গে।
-আরিয়ান।”
মাহিরা চিঠি হাতে ধরে হাসল।
বাক্সের ভিতরে ছোট্ট চিঠিটি যেন তার হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠল।
প্রতিটি সপ্তাহে চিঠি আসে, আর মাহিরা পড়ে পড়ে হেসে, কাঁদে, অনুভব করে—যে ভালোবাসা চোখে দেখা ছাড়া ছুঁয়ে যায় হৃদয়ে।
বন্ধুরা বলত,
> “তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো, শুধু চিঠির জন্য?”
মাহিরা হেসে বলত,
> “ভালোবাসা কখনো কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে না। ওটা হৃদয়ে থাকে।”
---
অধ্যায় ৩: অপেক্ষার দিনগুলো
বছর কেটে যায়।
মাহিরার জীবনে আরিয়ান নেই, কিন্তু চিঠির মাধ্যমে তার উপস্থিতি অম্লান।
প্রতিটা বিকেল সে নদীর ধারে বসে আকাশের রঙের সঙ্গে তার ভালোবাসার ছোঁয়া অনুভব করে।
একদিন হঠাৎ চিঠি বন্ধ হয়ে যায়।
মাহিরার মন খারাপ হয়। গ্রামের লোকেরা গুজব ছড়িয়ে দেয়—“আরিয়ান শহরে অন্য কারও সঙ্গে।”
মাহিরা চিঠি বাক্সে ভরে রেখে পড়া বন্ধ করে দেয়।