Posts

গল্প

ভালোবাসার শেষ চিঠি – একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

October 6, 2025

Shahanaz Parvin

Original Author শাহানাজ পারভীন

96
View

অধ্যায় ১: প্রথম দেখা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। সকালটা ছিল রোদেলা, কিন্তু তানিয়ার মনটা অদ্ভুতভাবে অচেনা এক কাঁপন নিয়ে ভরা। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, নতুন স্বপ্ন।
সে ধীরে ধীরে ক্লাসরুমে ঢুকল, আর সেখানেই প্রথম দেখল তাকে—আরাফাত।

সাদা শার্ট, কাঁধে কালো ব্যাগ, চোখে আত্মবিশ্বাস।
তানিয়া একবার তাকিয়ে আবার বইয়ের দিকে মন দিলেও, মনে মনে বারবার সেই মুখটাই ভেসে উঠছিল।

দিন কেটে যাচ্ছিল, ধীরে ধীরে কথা বাড়ছিল।
গ্রুপ প্রজেক্টের অজুহাতে একসঙ্গে সময় কাটানো, কফির কাপের পাশে গল্প বলা—
অজান্তেই তাদের বন্ধুত্ব রঙ নিচ্ছিল ভালোবাসার।

অধ্যায় ২: অনুভবের শুরু

তানিয়া নিজেও জানত না কখন আরাফাত তার দিনের শুরু আর রাতের শেষ হয়ে উঠেছে।
একদিন বৃষ্টিতে ভিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আরাফাত হঠাৎ বলল,
“তুমি জানো, বৃষ্টির গন্ধটা তোমার মতো—শান্ত আর মিষ্টি।”

তানিয়া হেসে ফেলেছিল, কিন্তু সেই হাসির আড়ালে বুক কেঁপে উঠেছিল।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে তানিয়া বুঝে গিয়েছিল, ভালোবাসা আসলে এমনই—
চুপচাপ এসে মন দখল করে নেয়, কোনো অনুমতি ছাড়াই।

রাতভর মেসেঞ্জারে কথা, সকালে ক্লাসে দেখা—
প্রতিদিনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো একসঙ্গে গড়ে তুলছিল এক অপূর্ণ সুন্দর গল্প।

অধ্যায় ৩: দূরত্ব

এক বিকেলে আরাফাত বলল,
“তানিয়া, আমার বাবা খুব অসুস্থ। আমি হয়তো বিদেশে যেতে পারি।”

তানিয়া থমকে গেল। কফির কাপে হাত কাঁপছিল।
“তুমি গেলে… আমি?”

আরাফাত মাথা নিচু করে বলল,
“তুমি আমার বিশ্বাস, তানিয়া। আমি ফিরে আসব—তোমার কাছেই।”

তানিয়া হাসল। সেই হাসিতে ছিল অদ্ভুত এক কষ্টের আভা।
সেদিনই শেষ দেখা হয়েছিল তাদের।

এরপর ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমে গেল।
মেসেজের উত্তর আসা বন্ধ, ফোনের ওপাশ নীরব।
তানিয়া বুঝতে পারল, অপেক্ষা নামের যন্ত্রণা কত গভীর হতে পারে।

অধ্যায় ৪: অপেক্ষা

পাঁচ বছর কেটে গেছে।
তানিয়া এখনও প্রতিদিন জানালার পাশে বসে থাকে,
হাতে এক কাপ কফি আর টেবিলে ছড়িয়ে থাকে পুরনো চিঠিগুলো।

প্রতিটি চিঠি যেন ওর হৃদয়ের টুকরো।
সে কখনো পাঠায়নি, কেবল লিখেছে—“আজ তোমায় খুব মনে পড়ছে…”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন এগিয়ে গেছে,
কিন্তু তানিয়ার মন আটকে আছে সেই শীতের বিকেলে,
যখন সে বলেছিল—“আমি অপেক্ষা করব।”

অধ্যায় ৫: ভালোবাসার শেষ চিঠি

এক সকালে ডাকপিয়ন দরজায় কড়া নাড়ল।
একটা খাম—পুরনো, হলুদ হয়ে যাওয়া, তবু নামটা স্পষ্ট—
“তানিয়ার জন্য।”

চিঠিটা খুলতেই চোখ ভিজে গেল।
আরাফাতের হাতের লেখা—

“তানিয়া, আমি প্রতিদিন তোমাকে লিখেছি।
কিন্তু ডাকবাক্সে ফেলার সাহস পাইনি।
এখন সময় ফুরিয়ে আসছে…
যদি আর না দেখা হয়, জেনে রেখো—
তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর গল্প।”

চিঠির শেষে লেখা—

“তুমি হাসবে, তানিয়া। কারণ তুমি হাসলে, আমি বেঁচে থাকি।”

তানিয়া চিঠিটা বুকের কাছে টেনে নিল।
জানালার বাইরে সূর্য অস্ত যাচ্ছে,
আর তার চোখের জলে মিশে যাচ্ছে ভালোবাসার শেষ আলো।

❤️ উপসংহার

কিছু ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না,
কেবল চিঠির মতো ভাঁজ হয়ে থাকে জীবনের পাতায়।
তানিয়া জানে—আরাফাত নেই,
তবু ওর প্রতিটি নিশ্বাসে এখনো ওর নাম লেখা আছে।

Comments

    Please login to post comment. Login