Posts

গল্প

ডিগ্রির গর্ব নাকি বেকার জীবনের জ্বালা?

October 6, 2025

Bittu Ansari

Original Author মহম্মদ মুস্তফা

45
View

“মা, কিছু খেতে দাও তো তাড়াতাড়ি, আমার অফিস যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে”—এ কথাটি প্রতিদিনের মতোই সকালে উঠে তার মাকে বলল তরুণ।

তরুণ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব মেধাবী। নানা বিষয়ে ভালো ফল করে অনেকগুলো ডিগ্রি অর্জন করেছে সে। কিন্তু এত পড়াশোনার পরও তার জীবনের প্রকৃত সংগ্রাম শুরু হয় যখন চাকরি খুঁজে পায় না। সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে দিন-রাত এক করে চেষ্টা করতে থাকে তরুণ, কিন্তু একের পর এক পরীক্ষায় হতাশ হতে হয় তাকে।

এদিকে তার বাবার শরীরের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। সংসারের খরচ, বাবার চিকিৎসা আর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন চাপে পড়ে যায় তরুণ। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নেয়, সরকারি চাকরির প্রস্তুতি আপাতত বন্ধ করে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজবে। কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে দেখে, কল সেন্টারের বাইরে তেমন কোনো সুযোগ নেই। গরিবি আর পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে তাকে কল সেন্টারের কাজই ধরতে হয়।

প্রথম দিন অফিসে যোগ দিয়েই বুঝে যায়, এই কাজ মোটেও সহজ নয়। সিনিয়রদের তিরস্কার আর গ্রাহকদের রাগ-গালিগালাজ—সব মিলিয়ে তার দিন কাটতে থাকে হতাশায়। তবু সে হাল ছাড়ে না। অফিসে যাওয়া-আসার পথে আবারও বই হাতে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে থাকে, যদিও তেমন ফল আসে না।

একদিন অফিসে ঘটে যায় বড় একটা ঘটনা। এক জুনিয়র কর্মীর ভুলের জন্য পুরো ব্যাচকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। তরুণের কাঁধে তখন সংসারের দায়, ঋণের চাপ—সব মিলিয়ে সে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। পরিবারের কাউকে কিছু বলতেও পারে না, কারণ জানলে সবাই আরও চিন্তিত হয়ে পড়বে। তাই প্রতিদিন চাকরির নাম করে টিফিন নিয়ে বের হয়, আর দিনভর নদীর ধারে এদিক-ওদিক ঘুরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। তার জীবন যেন হতাশা আর লুকোনো যন্ত্রণায় ভরে যায়।

তবু তরুণ বিশ্বাস হারায় না। সে মনে মনে ভাবে—ধৈর্যই আমার একমাত্র শক্তি, একদিন নিশ্চয়ই ঈশ্বর আমার দিকে তাকাবেন।

ঠিক সেইভাবেই একদিন নদীর ধারে বসে তরুণ জলেতে পাথর ছুড়ছিল। হঠাৎ তার বন্ধুর ফোন এল। ফোনে বন্ধু জানাল, “তুই দু’ বছর আগে যে রেলওয়ে পরীক্ষাটা দিয়েছিলিস, আজ তার রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমি তোর অ্যাডমিট কার্ড দিয়ে চেক করলাম—তুই চাকরিটা পেয়ে গেছিস!”

এই খবর শুনে তরুণ প্রথমেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাল। তারপর দৌড়ে বাড়ি গিয়ে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল—“বাবা-মা, এতদিন যা কষ্ট গেছে তা আমি পরে বলব। আজ শুধু বলি—তোমাদের ছেলে আর বেকার নেই। আমি রেলওয়েতে চাকরি পেয়েছি।”

তার মুখের আনন্দ দেখে মা-বাবার চোখে জল এসে গেল। এতদিন যেসব প্রতিবেশীরা বলত—“তরুণ, এত ডিগ্রি করেও তুই বেকার”—তারাই এখন তাদের ছেলে-মেয়েদের উদাহরণ দিয়ে বলতে লাগল—“দেখো, পড়াশোনা আর ধৈর্য কাকে বলে। তরুণ দাদার মতো চেষ্টা করে একদিন বড় হতে শিখো।”

তরুণের মনে হলো—কত কষ্ট, কত লড়াই, কিন্তু ধৈর্য আর চেষ্টা বৃথা যায়নি। সত্যিই সময় কাউকে ঠকায় না। একদিন না একদিন সঠিক সময় আসে।

মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়ে তরুণ মনে মনে বলল—“আজ আমার জীবন সার্থক হলো। তোমাদের দোয়া যেন আমার নতুন জীবনকে সুন্দর করে তোলে।”
 

Comments

    Please login to post comment. Login