🌅 শেষ বিকেলের রোদে

ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় বিকেলের সূর্যটা একটু নরম হয়ে আসছে। ট্রাফিকের শব্দের মাঝেও তানিয়া হেডফোনে গান শুনছিল। প্রতিদিনের মতোই অফিস শেষে বাসার পথে হাঁটছিল সে।
ঠিক তখনই রাস্তার পাশের বুকস্টলে চোখে পড়ল একটা পুরনো বই— “তোমায় খুঁজে ফেরি”। নামটা যেন বুকের ভিতর কেমন একটা কাঁপন ধরিয়ে দিল।

হাত বাড়িয়ে বইটা তুলতেই পাশে কেউ নরম গলায় বলল,
— “এই বইটা নিলে আমারটা হয়ে যাবে না কিন্তু।”
তানিয়া তাকিয়ে দেখল এক ছেলেকে— হালকা দাড়ি, চোখে মায়া, মুখে হালকা হাসি।
ছেলেটা বলল,
— “আমি এই বইটার জন্যই আসছিলাম।”
তানিয়া একটু হেসে বলল,
— “তাহলে ভাগাভাগি করে পড়ব?”

দু’জনেই হেসে ফেলল। সেই এক মুহূর্তে যেন অচেনা দু’জনের মধ্যে একটা গল্পের শুরু হয়ে গেল।
---

☕ কফির কাপ আর কথার স্রোত

দু’দিন পর আবার দেখা। একই জায়গায়, একই সময়। এবার দু’জনের হাতেই কফির কাপ।
আদনান— সেই ছেলেটা— বলল,
— “তুমি কি সবসময় এত হাসো?”
তানিয়া চমকে বলল,
— “কেন?”
— “কারণ তোমার হাসিটা একটু অন্যরকম… শান্ত।”

কথা বাড়তে লাগল, সময় থেমে গেল যেন। অফিসের ক্লান্তি, জীবনের চাপ— সব মিলিয়ে তানিয়ার মনে হচ্ছিল, সে হয়তো এই ছেলেটার মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে একটা শান্তির আশ্রয়।

প্রতিদিন দেখা, গল্প, চা, হাসি— সব মিলিয়ে দু’জনের সম্পর্কটা নিঃশব্দে প্রেমে রূপ নিচ্ছিল।

---

🌧️ বৃষ্টি আর বিদায়

কিন্তু একদিন হঠাৎ বৃষ্টি নামল, সেই বিকেলে আদনান এল না। ফোনও বন্ধ।
তানিয়া অপেক্ষা করল, ঘন্টা ঘন্টা… দিন গড়িয়ে সপ্তাহ।
শেষমেশ একদিন ফোন এলো— বিদেশ থেকে।
আদনান বলল, “আমার হঠাৎ চাকরির সুযোগ হয়েছে মালয়েশিয়ায়। তাড়াহুড়ো করে চলে আসতে হয়েছে। আমি তোমায় জানাতে পারিনি… কিন্তু আমি তোমায় ভুলে যাইনি।”

তানিয়া কিছু বলল না, শুধু জানালার ধারে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনল। হয়তো সেই শব্দেই তার চোখের জল মিশে গেল।

---

🌤️ শেষ বিকেলের রোদে

ছয় মাস পর—
তানিয়া আবার সেই বুকস্টলের সামনে।
একটা বই হাতে নিতে গিয়েই পেছন থেকে চেনা গলা শোনা গেল,
— “এই বইটা আজও আমারটার মতো মনে হয়।”

তানিয়া ঘুরে তাকাল। আদনান দাঁড়িয়ে, আগের মতোই সেই হাসি মুখে।
তারা কিছু বলল না। শুধু চোখে চোখ রেখে হাসল।
বাতাসে শুকনো পাতার নরম শব্দের সাথে যেন বলা হয়ে গেল সব অপ্রকাশিত কথা।

শেষ বিকেলের রোদে, দু’জনের ছায়া এক হয়ে গেল।
---

🌸 শেষ।