Posts

উপন্যাস

ক্যাম্পাস প্রেম, পর্ব৩

October 7, 2025

Humayun Kabir

194
View

২৬

নেমে  আসছে। আমি  নিচ থেকে তার চোখ দুটা দু'টো দেখার চেষ্টা করছি। দেখা যাচ্ছে না। সে নিচের সিড়িতে চোখ রেখে রেখে নেমে আসছে। আমার ইচ্ছে গুলো বন্দি  পাষাণ প্রাসাদে  মাথা কুটে মরছে। অবশেষে দোতলার সিডির মাথায় সমতল অংশে তার সাথে চোখা চোখি হলো। সে হাসলো। সে হাসি আবৃত মুখের বোঝা গেলো না। বোঝা গেলো চোখের সবুজ উদ্যানে। লাখো পাখি একসাথে  মুক্তির গান গেয়ে উঠলো। কী বলি কি না বলি। শেষে মুখ থেকে কিছুই বের হলো না। অবচ কতো কথারা  মনের ভিতর মিছিল করছে। নীরবতার ছেদ টানলো তৌফিক - চল, নিচে। ফর্ম জমা দিয়ে আসি।

বললাম, -চল।

২৭

 পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত বদল করলাম।এক অজানা ভয় পেয়ে বসেছে। আমার ভিতর একটা চাওয়া মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে প্রবল প্রতাপে।  তাকে এখনি থামিয়ে দিতে  হবে, নাহলে   নষ্টের নাগালে আমাকে তছনছ হতে হবে।যদি ঐ রূপের নেশায় নেশা সক্ত হয়ে পড়ি? তারপর  চাওয়া পাওয়ার হিসেব যদি না মেলে?। তখন, ? আমি নিজেকে কড়া ব্রেকে থামিয়ে দিলাম।যাদের উপকার করেছি,যাদের জন্য খেটেছি তারাই আমাকে সাথে সাথে ভুলে গেছে। আর একে তো একপ্রকার এড়িয়েই গিয়েছি।সুতরাং তাকে নিয়ে ভবিষ্যতের কোনো ভাবনা ভাবা বোকামী ছাড়া আর কিছু না।আমি পিছিয়ে এলাম।অন্য একটা কাজের অজুহাতে  তাদের ছেড়ে দিলাম।

২৮

তাকে ভুলতে চেষ্টা করলাম।রাশমিন আর তৌফিক সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।

আমি বাংলা ডিপার্টমেন্টে  ফিরে এলাম। মন ছটফট করছে। ইচ্ছে হচ্ছে রাশমিনকে খুজে বের করি। তার সানিধ্যে যাই। ভালো লাগাবে। আবার নিচে এলাম।ক্যান্টিনে ঢুকে সিগারেট  ধরালামা।হঠাৎ  শ্লোগানে  শ্লোগানে ক্যাম্পাসটা কেঁপে কেঁপে উঠল।  দ্রুত সিগারেট শেষ করে  মিছিলে যোগদিলামা।  মিছিলোত্তর সমাবেশ এবং বক্তৃতা হলো।সমাবেশে  কেন্দ্রীয় নেতা আবির ভাই এবং রশিদ  ভাইয়ের হত্যার প্রতিবাদে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হলো। এর পরই শুরু হলো দাতাল করিমের জ্বালময়ি  বক্তৃতা। জ্বালা তার বক্তৃতা বর্ষণের জন্য না,  উচু দাঁত খিচিয়ে বিচিত্রভাবে মুখ বিকৃতি করার জন্য। 

২৯

করিম ক্যাম্পাসের সভাপতি। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার সামনের দু'টো বড়বড় দাঁত  এন্টিনার মত দুই দিকে প্রসারিত হায়ে পড়ে। তার এই বিখ্যাত দাঁত দুটোর জন্যই সবাই তাকে দাঁতাল করিম নামে ভূষিত করেছে। প্রকাশ্যে নয়,  আড়ালে আবডালে । প্রোগ্রাম শেষ।বসে আছি  কদম তলার টেন্ডে। জুমন ভাই কড়া মেজাজে জানতে চাইলো,মিছিলে যেতে দেরি হলো কেন? অনেক কিছু ইনিয়ে বিনিয়ে বলে কাটিয়ে দিলাম। জুমন ভাই  আমাদের জেলা সভাপতি। সে চায় আমি যেনো সবসময় সামনে সামনে থাকি।আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ   দায়িত্ব নেওয়ার মত করে তিনি আমাকে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু দাঁতাল করিম বিরোধিতা করে। তার পছন্দের ব্যক্তি  শাহিন।শাহিনও আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। করিম, আমি, শাহিন আমরাএকই হলে থাকি।

৩০

 হলে করিমের সমর্থক বেশি। জুমন ভাই বাইরে থাকে।হলে তার সমর্থক কম। সে দিক দিয়ে আমার এন্টি  গ্রুপ সুবিধাজনক পজিশনে আছে। । এই অবস্থায়  প্রগ্রামে কোনোরকম  শৈথিল্য অবনতির লক্ষ্মণ।। 

হলে ফিরে দুপুরের খাবার ঠিকমতো খেতে  পারলাম না।  ঐ চোখ দুটি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। এ যেনো চোরাবালি। যতোই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি ততোই তলিয়ে যাচ্ছি। দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে ফিরে এলাম, সময় কাটতে চায় না। সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে রুমটা ঘোয় ধোয়া ধোয়া করে ফেললাম। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো। শহরের ভিতর প্রগ্রাম আছে। এখনি মিছিল নিয়ে বের হতে হবে। কি আর করা, তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম

৩১

স্লোগান সুখর মিছিলের ভিতর ও বার বার সেই চোখ দুটো মনের পর্দায় ভেসে ভেসে উঠতে লাগালো। আমি মিছিল থেকে  এক ফাঁকে বেরিয়ে দড়াটানা সি ব্রীজে এসে বসলাম।অবসরের বন্ধু সিগারেট, তাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে সময় কাটাচ্ছি।  সময় যেন আসাড় জং ধরা  ভারি গাড়ি।সে কিছতেই নড়ছে না। চোখের সামনে দিয়ে মানুষ, রিক্সা , ভ্যান মটরসাইকেল - গাড়ির স্রোত বয়ে যাচ্ছে।  আমি দেখেও দেখছিনা।শুনেও শুনছি না।চোখ জুড়ে  চোখের মেলা। বোরকার  ফাঁকে দুটো চোখ, জলজ চঞ্চল। কখন কবে আবার দেখা হবে? বারবার মন চাচ্ছে মানিকছড়া চলে যাই। রাশমিনকে একনজর দেখে আসি।মানিকছড়া গেলেই দেখা হবে। মানিকছড়া যশোর শহর থেকে বেশি দূরে না।মাত্র ত্রিশ টাকার রাস্তা। 

৩২

মাত্র ১০ মিনিট লাগবে।  আর মানিকদিহি প্রতিটি লোকই তো আমার সুপরিচিত। সুতরাং যাওয়া কোন সমস্যা না। কিন্তু ব্যাপার হল, সেখানে আমি বেশ ক বছর যাই না। এখন এই সন্ধারাতে হঠাৎ হাজির হলে সবাই কি ভাববে? ভাবছি। কোন ফুল কিনারা করতে পারছিনা। ধুর, এত ভাবতে গেলে কিছুই হবে না। ঝট করে রেলিং থেকে নেমে পড়লাম। আর কোন ভাবনা নয়। এখন শুধু মানিকছড়ার পথে চলে যাওয়া। সামনে হঠাৎ কোথা থেকে তৌফিক  এসে হাজির হলো। তার মুখে সেই চির পরিচিত কেবলা গ্লাস মার্কা হাসি। এখন সে পরে আছে সাদা রং এর একটা গেঞ্জি। বুকের মাঝ বরাবর একজন রেসলারের পেশি বহুল শরীর। শফিককে ঐরকম শুধুমাত্র জাংগিয়া করা অবস্থায় একদিন দেখতে হবে ওই রেসলারের মতো  দেখা যায় কিনা। 

৩৩

তৌফিকের স্বপ্ন রেসলার না হতে পারলেও ঐরকম একটা  শরীর  তৈরি করা। অবশ্য  জন্মসূত্রেই ওর শরীরটা রেসলার টাইপ। তৌফিক বলল, কিরে তুই এখানে? তোদের না মিছিল চলছে? 

-আরে রাখ তোর মিছিল। রাশমিনের  কথাটা কি ভাবে তুলি?  ইতস্ত  করতে করতে বললাম,  তারপর খবর কী বল? ফর্মটর্ম জমা দিতে পেরেছিস? 

- না সমস্যা হয়নি। 

 রাশমিন  চলে গেছে? 

- না, আছে । 

-কোথায়? 

-তোর মাথায়। 

-ফাজলামো রাখ

- হ্যাঁ, ও তিনটার ট্রেনে চলে গেছে। 

৩৪

আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। তৌফিক বলে কী? যশোর থেকে মানিকছড়া এইটুকু পথ ট্রেনে যাবে  কেন? তাছাড়া মানিকছড়া কোন ট্রেন স্টেশন নেই,।

- কি বললি তোর মাথা টাথা ঠিক আছে? মানিকছড়া থেমে যাবে কেন? 

তৌফিক হো,হো করে হেসে উঠে বলল, এই শালার ছাগল। মানিকছড়া ট্রেনে যাবে কেন? ওতো গেছে খুলনায়।

-  কেন খুলনায় কেন?

- আরে, আরে ও তো ওর খালু  বাড়ি খুলনায়  থেকে লেখাপড়া করে, এইজন্যে ওকে তুই চিনিস না।

 এতক্ষণে আমি বুঝলাম,  কেন ও মানিকছড়ায় বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও আমি ওকে চিনি না। 

৩৫

রফিক আবার বলতে শুরু করলো,রাশমিন প্রথমবার ইন্টারমিডিয়েটে খুব বেশি  ভালো করতে পারেনি। তাই এইবার আবার ইমপ্রুভ দিচ্ছে। সেই জন্যই খুলনায় গেছে। 

আমার আশার গুড়ে বালি। কিন্তু আমার যে অবস্থা বালিওয়ালা গুড়ও কোন সমস্যা না। যত বাধাই থাক না কেন রাশমিন যদি মানিকছড়া থাকতো আমি যেতামই। এবং দেখা করতাম। এখন দেখছি গুড়ে বালি তো দূরের কথা গুড়িই তো নেই। 

জানিনা আর কখনো দেখা হবে কিনা। হতাশায় মনটা ভরে গেল। তখন কলেজে যদি তাকে সময় দিতাম। ইচ্ছে করছে মাথার চুল গুলি বসে বসে টেনে টেনে ছিঁড়ি। আপাতত আর কোন উপায় নেই। 

Comments

    Please login to post comment. Login