লেখালেখি এমন একটি মাধ্যম যে মাধ্যমের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরা যায়। তার পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের কথা তুলে ধরা যায়।
লেখালেখির মাধ্যমে লেখক, কবি, তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র প্রকাশ ঘটাতে পারে, যেখানে সাধারণ মানুষের দেখা শেষ হয়ে যায়, সেখান থেকে লেখক বা কবির দেখা শুরু হয়।
লেখক সত্ত্বা সবার থাকে না, উচ্চ শিক্ষিত হলেই যে সে লিখতে পারবে তা নয়, কেন যেন মনে হয় লেখক সত্ত্বা সৃষ্টিগত একটি ব্যাপার যা ¯্রষ্টার প্রদত্ত। এই আমিত্ব সত্ত্বা কিছু মানুষের ভিতর দেখা যায়, যারা লিখতে পারে।
কিছু মানুষ লিখতে পারে তার মানে অসংখ্য মানুষ লিখতে পারে না। তার মানে এই নয় অসংখ্য পাঠক সমাজ কিছু বোঝে না বা জানে না। হয়তো অনেক সময় কিছু শ্রেণির পাঠক লেখকদের থেকেউ অনেক জ্ঞান রাখে। তাহলে বিষয়টি এই রকম হলো যে লেখককে অনেক কিছু জানতে হবে, অনেক কিছু দেখতে হবে, তারপর মননশিল্পের মাধ্যমে লিখতে হবে।
প্রত্যেক লেখককে মননশিল্পকে ঘষেমেজে পরিস্কার করে তার পরেই লেখার মাধ্যমে তার প্রস্ফুটিত কল্পনা লেখার অক্ষরে ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে লিখলেই তা লেখা হয় না। তা সবার কাছে গ্রহণ যোগ্য হয় না।
হ্যাঁ গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নিজের কাছে, পাঠকের কাছে। সূর্য যখন উদয় হয়, তখন অন্ধকার দূর হয়ে যায়। তেমনি লেখক/কবির লেখাতে আলোর কিরণ থাকতে হবে, যাতে পাঠককূল তার মননের অন্ধকার দূর হতে সাহায্য করে।
যদি হেরোডোটাস লিখতে শুরু না করতো, তবে সে ইতিহাসের জনক হতে পারতো না। তাই লিখতে হবে। সুন্দর করে,পরিমার্জন করে, পরিশীলিত করে। তবে তা পাঠকের কাছে সময়ের কাছে, কালের কাছে উত্তীর্ণ হতে থাকবে। প্রকাশ ঘটবে শিল্পবোধ। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় লিখতে হয়-
“মরিতে চাই না সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে বাঁচিবারে চায়।।
হ্যাঁ লেখক, কবি বাঁচতে চায়। তার লেখার মাধ্যমে, তার কবিতার মাধ্যমে।
একজন লেখক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি তার লেখারগুলোতে সাহিত্য শৈল্পিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ সৃষ্টির দায়িত্ব নেন। লেখকের কাজের মধ্যে থাকা ধারণা সৃজনশীল অভিব্যক্তির প্রবর্র্তক। লেখক তার লেখার তথ্য সংগঠিত করা এবং এটি একটি সুসংগত এবং অর্থপূর্ণ উপায়ে উপস্থাপন করে। লেখদের বিভিন্ন শৈলী, দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুপ্রেরণা থাকতে হবে।
প্রত্যেক লেখকের মধ্যে আমিত্ববোধ সামগ্রীকভাবে জাগ্রত থাকা উচিৎ। এই আমিত্ব বোধই তার লেখালেখিকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। কারণ লেখক সত্ত্বা সাধারণ কিছু না, তা অনন্য এক সত্ত্বা। যে সত্ত্বার মাধ্যমে সে নিজের ভিতর এক নতুন জগৎ তৈরি করতে পারে।
একজন লেখক তার নিজের মতামত বা লেখকের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত মতামত, বিশ^াস বা দৃষ্টিভঙ্গি তা নিজের লেখাতে উল্লেখ করতে পারে। একজন লেখকের মতামত তাদের ব্যক্তিগত পটভূমি, অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক বা আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, একজন লেখকের দ্বারা প্রকাশিত মতামতগুলি অগত্যা সর্বজনীন সত্য। একমত প্রতিফলিত করে না তবে তাদের স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে।
একজন লেখক/কবি বিভিন্ন রূপে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন শৈলীতে নিজেকে প্রকাশ ঘটাতে পারেন, তবে কিছু কিছু গুণাবলী, বৈশিষ্ট্য থাকে যা সাধারণত লেখালেখিতে কর্মজীবনে উপকার বয়ে আনতে পারে।
এখানে কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো যা একজন লেখকের/কবির জন্য মূল্যবান হতে পারে:
আবেগপ্রবণ: একজন লেখকের/কবির লেখা কবিতা এবং গল্প বলার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা থাকা উচিত। আবেগ সৃজনশীলতাকে প্রেরণা দেয় এবং চ্যালেঞ্জিং সময়ে আপনাকে অনুপ্রাণিত থাকতে সাহায্য করবে।
কৌতূহলী: বিশ্ব সম্পর্কে জানার কৌতূহলী হওয়া এবং জ্ঞানের তৃষ্ণা থাকা একজন লেখককে/কবিকে বিভিন্ন বিষয় অন্বেষণ করতে এবং তাদের বুঝার প্রসারিত করতে দেয়, যা তাদের লেখাকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
পর্যবেক্ষক: পর্যবেক্ষণের একটি তীক্ষ্ণ অনুভূতি একজন লেখককে তাদের পারিপার্শ্বিকতার বিবরণ, সূক্ষ্মতা এবং সূক্ষ্মতা লক্ষ্য করতে সাহায্য করে। এই দক্ষতা তাদের প্রাণবন্ত বর্ণনা এবং বাস্তবসম্মত চরিত্র তৈরি করার ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
কল্পনাপ্রসূত: একজন লেখকের/কবির অনন্য রকমের গল্প / কবিতা তৈরি করতে, আকর্ষক বিশ্ব তৈরি করতে এবং পাঠকদের বিমোহিত করে এমন আকর্ষণীয় চরিত্রগুলি তৈরি করার জন্য একটি প্রাণবন্ত কল্পনা থাকতে হবে।
অধ্যবসায়ী: লেখা একটি একাকী এবং চ্যালেঞ্জিং প্রচেষ্টা হতে পারে। একজন লেখককে স্থিতিশীল হতে হবে এবং স্থির থাকতে এবং উন্নতি করতে বাধা, প্রত্যাখ্যান এবং আত্ম-সন্দেহ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হতে হবে।
সহানুভূতিশীল: অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আবেগগুলির সাথে বুঝা এবং সহানুভূতি একজন লেখককে প্রামাণিক চরিত্র এবং সম্পর্কিত গল্প তৈরি করতে সহায়তা করে যা পাঠকদের সাথে অনুরণিত হয়।
স্ব-প্রতিফলিত: অন্তর্নিহিত এবং স্ব-সচেতন হওয়া একজন লেখককে তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস এবং অভিজ্ঞতা অন্বেষণে সহায়তা করতে পারে, যা আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং অর্থপূর্ণ গল্প বলার দিকে পরিচালিত করে।
পরিশেষে বলতে হয়, লেখক/কবি কে হতে হবে অন্তদৃষ্টি সম্পূর্ণ ব্যক্তি সত্ত্বা। সত্য ও আলোর প্রতীক।