Posts

নিউজ

নোবেল পুরস্কার ২০২৫: কে জিতবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাহিত্য সম্মাননা?

October 9, 2025

নিউজ ফ্যাক্টরি

217
View

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সুইডিশ একাডেমি ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে। বেস্টসেলিং লেখকদের তুলনায় কম পরিচিত, অখ্যাত লেখকদের পুরস্কার দেয়ার প্রবণতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। উদাহরণ হিসেবে ২০২৪ সালের নোবেলজয়ী লেখকের কথা বলা যেতে পারে। গত বছর একাডেমি দক্ষিণ কোরিয়ার হান কাংকে বেছে নিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিল। তিনি প্রথম এশিয়ান নারী হিসেবে মর্যাদাবান এই পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। অথচ তাকে খুব কম মানুষই চিনতেন। এমনকি অনেক প্রকাশকও তার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।  

প্রতি বছর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে বাজির কারবার চলে। সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে বাজি ধরা হয়। এটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রচারিতও হয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞরাও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। এই বছর বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে বিজয়ী সম্ভবত একজন পুরুষ হবেন এবং তিনি ইউরোপীয় হবেন।  

সুইডেনের  সেরেজেস রেডিওর সংস্কৃতি সমালোচক লিনা কালমটেগ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমার ধারণা একজন ইউরোপীয় পুরুষের কাছে এই পুরস্কারটি যাচ্ছে। কারণ একাডেমি গত বছর একজন অ-ইউরোপীয় নারীকে এই পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছিল।

এবার সুইস লেখক ক্রিশ্চিয়ান ক্রাচট, হাঙ্গেরির লাজলো ক্রাসনাহোরকাই, পিটার নাদাস এবং রোমানিয়ার মিরসিয়া কার্তারেস্কুর নাম আলোচনায় রয়েছে। সুইডিশ পত্রিকা ডাগেন্স নাইহেটার এর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বিয়র্ন ওয়াইম্যান এএফপিকে বলেন, ৫৮ বছর বয়সী জার্মান ভাষার উত্তর-আধুনিকতাবাদী লেখক ক্রাচট সাহিত্য মহলে একজন সমাদৃত ব্যক্তি। তিনি পপ সংস্কৃতি এবং ভোগবাদ নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি এবারের নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, নোবেল ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে এই বছরের গোথেনবার্গ বইমেলায় সুইডিশ একাডেমির অনেক সদস্য ক্রাচটের একটি ইভেন্টের সময় সামনের সারিতে বসে ছিলেন। এটি ইঙ্গিত দেয় তিনি এবার নোবেল পেতে যাচ্ছেন। কারণ ২০০৪ সালে অস্ট্রিয়ান নাট্যকার এলফ্রিডে জেলিনেক যখন পুরষ্কার জিতেছিলেন, তখনও একই ঘটনা ঘটেছিল।   

১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এটি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত পশ্চিমা পুরুষ লেখকদের প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়। ১২১ জন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে মাত্র ১৮ জন নারী রয়েছেন। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক এশীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের লেখক ছিলেন। 

২০১৮ সালে #মিটু আন্দোলনের প্রভাবে সুইডিশ একাডেমির একজন নারী সদস্যের স্বামীর যৌন কেলেংকারির খবর প্রকাশিত হয়। এই ঘটনার জেরে সে বছর সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি এর আগে কখনোই এত বড় সংকটে পড়েনি। এরপর সুইডিশ একাডেমি নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে জাতিগত বৈচিত্র্য এবং লিঙ্গ সমতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।      

এর ফলে ২০১৮ সালের পর পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী লেখকদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। ওয়াইম্যান বলেন, পাঁচ বা ছয় বছর আগে হান কাং এর মতো লেখকদের কথা কল্পনাও করা যেত না। অতীতে একাডেমি বয়স্ক পুরুষ লেখকদের সম্মান জানাত। অথচ কাং যখন জিতেছিলেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫৩ বছর।

ওয়াইম্যান জানান, তিনি মনে করেন এ বছর পুরস্কারটি সম্ভবত অ্যাংলো-স্যাক্সন, জার্মান বা ফরাসি ভাষার কোনো লেখকের হাতে যাবে।    

এদিকে লিনা কালমটেগ বলেন, 'পূর্ববর্তী বিজয়ীদের তালিকায় এক ধরনের প্যাটার্ন দেখা যায়। সে হিসাবে এই বছরটি ইউরোপীয়দের জন্য। এছাড়া গত বছর একজন নারী ছিলেন, আসুন এ বছর একজন পুরুষকে বেছে নিই।'   

অনেকের ধারণা কানাডার অ্যান কারসন, চিলির রাউল জুরিতা, ভারতের অমিতাভ ঘোষ এবং আর্জেন্টিনার সিজার আইরা এবারের নোবেল পুরস্কার পাবেন।কালমটেগ এএফপিকে বলেন, সর্বশেষ দক্ষিণ আমেরিকান হিসেবে নোবেল জিতেছিলেন পেরুর মারিও ভার্গাস ইয়োসা। তবে এবারও এই অঞ্চলে পুরস্কারটি যাবে না। তবে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী হিসেবে মেক্সিকান লেখ্ক ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজার নাম উল্লেখ করেন তিনি।  

এই বছরের সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী লেখকদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার জেরাল্ড মুরনানেও রয়েছেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী লেখক অ্যালেক্সিস রাইটকেও অনেকেই বিবেচনায় রাখছেন। পরিশেষে বলা যায়, সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ কে পাবে তা নিয়ে এরকম হাজারটা মতভেদ আছে, প্রত্যাশা আছে, ভবিষ্যদ্বানী আছে। তবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার আগে এই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে কিছুই বলা যাবে না।  

সূত্র: এএফপি 

Comments

    Please login to post comment. Login