Posts

উপন্যাস

চাঁদের নীচে রাজকন্যা

October 9, 2025

Ibn Jayaan

140
View

🕊️ অধ্যায় ১: রাজপ্রাসাদের ছায়ায় চন্দ্রবংশের সুবিশাল প্রাসাদ পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে আছে, চারপাশে ফুলে ঢাকা অশোকবন। সন্ধ্যার বাতাসে শঙ্খধ্বনি ভেসে আসছে রাজমন্দির থেকে। রাজকন্যা অরুণা, সোনালি পোশাক পরে জানালার ধারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ তার জন্মোৎসব, কিন্তু হৃদয়টা ভারী। রাজা তার বিয়ে স্থির করেছেন পার্শ্ববর্তী রাজ্যের রাজপুত্রের সঙ্গে — এক অপরিচিত মানুষ। অথচ অরুণা চায় স্বাধীনতা, ভালোবাসা, নিজের মতো বাঁচতে। প্রাসাদের বাইরে, ঘোড়াশালায় কাজ করে এক তরুণ — অভিজিৎ। রাজপরিবারের কাছে সে এক সাধারণ কর্মচারী, কিন্তু চোখে তার আগুন, হৃদয়ে স্বপ্ন। ঘোড়া প্রশিক্ষণে তার হাতের জাদু রাজ্যের সবাই জানে। এক ঝড়ের রাতে রাজপ্রাসাদের অঙ্গনে ঘোড়া উন্মত্ত হয়ে গেলে অরুণা জানালার ধারে এসে চিৎকার করে ওঠে। অভিজিৎ দৌড়ে এসে ঘোড়াটাকে শান্ত করে। সেই মুহূর্তে তাদের চোখ একে অপরের সঙ্গে মিলে যায়— নীরবতায় কিছু একটা জেগে ওঠে। অরুণা কাঁপা গলায় বলে, “তুমি... সাহসী।” অভিজিৎ মাথা নিচু করে বলে, “রাজকন্যার নিরাপত্তা আমার দায়িত্ব।” সেই রাতের পর থেকে, জানালার ধারে আলো জ্বলে থাকে — আর অন্ধকারে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ দেখে যায়।

🌹 অধ্যায় ২: নিষিদ্ধ প্রেম দিন যায়, রাত আসে। রাজকন্যা অরুণা আর অভিজিৎ একে অপরকে গোপনে দেখতে থাকে। কখনও প্রাসাদের বাগানের ছায়ায়, কখনও পূর্ণিমার আলোয়। অভিজিৎ তাকে বলে, “তুমি রাজকন্যা, আমি শুধু একজন সৈন্য... তবু তোমাকে ছাড়া আমার জীবন শুন্য।” অরুণা হাসে, “প্রেম কি বংশ দেখে হয়, অভিজিৎ? আকাশের চাঁদও তো রাজা নয়, তবু সবাই তাকে ভালোবাসে।” তাদের ভালোবাসা ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হয়, কিন্তু রাজপ্রাসাদের দেয়ালেরও কান আছে। একদিন রাণীর দাসী দেখে ফেলে তাদের গোপন সাক্ষাৎ। খবর যায় রাজা চন্দ্রসেন-এর কানে। রাজার চোখ লাল হয়ে ওঠে — “এক সৈন্য আমার কন্যার দিকে চায়? এ অপমান নয়, বিদ্রোহ!” অভিজিৎকে বন্দি করা হয় রাজদণ্ডে। অরুণা কাঁদতে কাঁদতে রাজাকে অনুরোধ করে, “পিতা, ও অপরাধ করেনি, ও শুধু ভালোবেসেছে।” কিন্তু রাজা গর্জে ওঠেন, “রাজকন্যার ভালোবাসা রাজ্যের নিয়ম ভাঙতে পারে না!” অরুণা সেদিন সিদ্ধান্ত নেয় — সে তার ভালোবাসার জন্য যুদ্ধ করবে। 

💔 অধ্যায় ৩: চাঁদের নীচে প্রতিশ্রুতি রাত। রাজপ্রাসাদের কারাগারে অভিজিৎ বন্দি। অরুণা কালো ওড়না পরে প্রাসাদের পাহারাদারদের ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় তার সামনে। অভিজিৎ অবাক, “তুমি! এখানে কেন?” অরুণা চোখ ভিজে বলে, “ভালোবাসা বন্ধন মানে না, অভিজিৎ। আজ আমি রাজকন্যা নই, শুধু তোমার অরুণা।” দূরে বজ্রপাত, আকাশ কালো। তারা দু’জন পালিয়ে যায় প্রাসাদ থেকে ঘোড়ায় চেপে — বৃষ্টিতে, পাহাড়ে, নদীর ধারে। কিন্তু ভাগ্য নির্মম। রাজকীয় সৈন্যরা ধাওয়া করে। অভিজিৎ অরুণাকে নদীর ওপারে তুলে দিয়ে বলে, “তুমি যাও, আমি সামলাই। তোমাকে কিছু হতে দেব না।” শেষবারের মতো তারা চোখে চোখ রাখে — সেই দৃষ্টিতে ছিল হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি, যে প্রেম মৃত্যুকেও হার মানায়। অভিজিৎ রাজসৈন্যদের হাতে নিহত হয়। অরুণা তার দেহকে বুকে নিয়ে চিৎকার করে ওঠে, “তুমি মরে যাওনি, অভিজিৎ — তুমি আমার হৃদয়ে আছো!” বছর পর, লোককথায় ছড়িয়ে পড়ে— চন্দ্রবংশের পাহাড়ে পূর্ণিমা রাতে এখনো দেখা যায় এক ছায়া— রাজকন্যা অরুণা, চাঁদের আলোয় খুঁজে বেড়ায় তার ভালোবাসা।

🌕 শেষ কথা: তাদের প্রেম হারিয়ে গেলেও, ভালোবাসা অমর রয়ে গেল— কারণ সত্যিকারের প্রেম কখনো রাজবংশ বা মৃত্যুর দেয়ালে থামে না।

Comments

    Please login to post comment. Login