দৃশ্যমান দ্বিপাক্ষিক এই যুদ্ধবিরতি রাজিতে গাজার স্বাধীনতাকামী মানুষদের জীবনে সাময়িক সময়ের জন্য হয়ত স্বস্তি নামল। কিন্তু এতে একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথ সুগম হবে এই প্রতীতি বোধ করি না। কারণ হামাস যে দখলদার ইসরায়েলের ব্রেইন চাইল্ড -এই বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়ার মতো তেমন কিছুই এখনো ঘটেনি। চুক্তির পক্ষ আসলে দুইটি নয়, ঘুরেফিরে ওই একটিই। শান্তি আলোচনা বা চুক্তিতে গাজার স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষের এতটুকু পার্টিসিপেশন নেই। কার সাথে কে, কীসের চুক্তি করছে তা ধুলায় অন্ধকার!
কাজেই মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আমাদের প্রতিবাদ জারি রাখছি। গাজার স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে আমাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখছি। সেইসাথে ইম্পেরিয়ালিস্টদের বলয়ের বাইরে এসে মুক্তচিন্তা প্রকাশ না করতে পারার অক্ষমতা অকপটে স্বীকার করছি।
২০ দফা পরিকল্পনা চুক্তির ক্লজ অনুযায়ী গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ন্যায্য হিস্যা গাজাবাসীর পক্ষে যাচ্ছে না এটা নিশ্চিত। দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার খবর প্রথম সামনে এনে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, 'আমি খুব গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস -দুই পক্ষই সই করেছে। এর অর্থ হলো খুব শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে। আর ইসরায়েল সমঝোতার ভিত্তিতে একটি এলাকা বরাবর সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম ধাপ।'
গাজার টেকনোক্র্যাট প্রশাসনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন যিনি তিনিই বলছেন, ইসরায়েল গাজার অধিকৃত এলাকা ছেড়ে যাবে না। সংশয়টা এখানেই।
গাজার বাসিন্দা আবু হাশেম রয়টার্সকে বলেছেন, 'প্রথম ধাপের যে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হচ্ছে, তা গা'জাবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে ঠিকই তবে মানুষ ইসরাইল সরকারকে বিশ্বাস করে না প্রথম ধাপের পর আবারো হামলা শুরু হয় কিনা তা নিয়ে ভয় কাজ করছে।'
আগের হিসাব নাইই বলি, কেবল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গেল দুই বছরে দখলদার ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ইতোমধ্যে ৬৭ হাজার মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ -যার অনেকাংশই শিশু, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফি'লিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা মোতাবেক ওই চুক্তিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সুযোগ হিসেবে দেখে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গ'জায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো এবং উদ্ধার ও পুনর্গঠনে কাজ শুরুর কথা বলছেন।
তবে আসল কথা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার সংগঠন ডনের ফিলিস্তিন-ইসরায়েলবিষয়ক পরিচালক মাইকেল শেফের ওমের-মান। তিনি বলেন, 'যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তগুলো ইসরায়েল মেনে চলছে কি না, তা নজরদারিতে রাখতে হবে। গাজা ঘিরে এখন পর্যন্ত যত যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে তা সবই লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।'
তাহলে এত জল ঘোলা শেষে, এত বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করবার পর হঠাৎ এইসময় চুক্তির আলাপ সামনে কেন এল? হতে পারে এবার নাহয় পরেবার নোবেল শান্তি পুরস্কার নেতানিয়াহু এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিচ্ছে নরওয়ের পার্লামেন্ট।
ধনাঢ্য সুইডিশ রসায়নবিদ ও উদ্যোক্তা আলফ্রেড নোবেল তাঁর উইল অনুযায়ী বাকি পুরষ্কারগুলো রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এবং সুইডেনের কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের কাছে রাখলেও শান্তি পুরস্কার প্রদানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন নরওয়ের পার্লামেন্টকে। ধারণা করা হয়, তিনি যখন তার উইল লিখেছিলেন, তখন নরওয়ে ও সুইডেন রাজনৈতিকভাবে একই ইউনিয়নে যুক্ত ছিল, তাই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
একমাত্র নোবেল শান্তি পুরস্কারেই রাজনীতিটা জিইয়ে রাখা হয়েছে। বৈশ্বিক ওই রাজনীতির এখনকার হটস্পট যে গাজা -তা কে না জানে!
লেখক: সাংবাদিক
১০ অক্টোবর ২০২৫
300
View