Posts

চিন্তা

শান্তির ওপরে রাজনীতি!

October 12, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

74
View

নরওয়ের পার্লামেন্ট বোর্ড এবার এমন একজনকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছেন, যিনি নিজেই ফোন করে তাঁর প্রাইজটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে দিয়েছেন। নোবেল কমিটি নাকি ভীষণ পেরেশানিতে ছিল ট্রাম্পকে নোবেল না দিলে কিজানি কী করে ফেলেন তিনি! কায়দা করে এমন একজনের কাছে এবারের শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছে যেটি আখেরে ওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারপাজই সার্ভ করেছে।

নিকোলাস মাদুরো ২০১৩ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। মার্কিনবিরোধী বামপন্থী এই নেতার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগ আছে। তো এর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন করেই মারিয়া করিনা মাচাদো শান্তিতে নোবেল লরিয়েট হয়েছেন। চরম দক্ষিণপন্থী মাচাদো পরিষ্কারভাবে মার্কিনপন্থী। ডানপন্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোরতরভাবে বামবিরোধী। দুইয়ে দুইয়ে মিলে গেল -ফলাফল চার হওয়ার কথা। এখানে এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ফল হলো পাঁচ। বস্তুত সামান্য একটু ঘুরিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই শান্তি পুরস্কার দিয়েছে নোবেল কমিটি। এবং এটাই নিপাতনে সিদ্ধ। ভেনিজুয়েলা তেল সম্পদে সমৃদ্ধ। সুতরাং তাকে অনেক ঝড় সইতে হবে বৈকি। ওই ঝড়ের হৃষ্টপুষ্ট বীজ রোপণ করে রাখল নরওয়ের পার্লামেন্ট!

নোবেল কমিটি বলেছে, মাচাদো শান্তির অগ্রদূত যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারেও ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের শিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন। নোবেল কমিটি তাকে ‘শান্তির অগ্রদূত’ আখ্যা দিয়েছে; অথচ এই মাচাদো ইসরায়েল ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোরতর সমর্থক, যা প্রকারান্তরে তাকে ‘গাজায় বোমাবর্ষণ ও গণহত্যার সাথী’ বানিয়েছে; এমনকী তিনি নিজ দেশের সরকার উৎখাতে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপও চেয়েছেন। এসবই তাকে ‘শান্তি পুরস্কারের অযোগ্য’ এবং নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করেছে বলে মত সমালোচকদের।

পুরষ্কার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই হোয়াইট হাউস এ ঘোষণার সমালোচনা করে বলে, নোবেল কমিটি ‘শান্তির ওপরে রাজনীতিকে স্থান দিয়েছে’। বিশ্বব্যাপী ৬-৭টি যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পুরস্কার পেতে ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর তাদের এ মন্তব্য আসে। অবশ্য পরে মাচাদো তার পুরস্কার ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টও পরে জানান, মাচাদো পুরস্কার পাওয়ায় তিনি খুশি।

আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ঘোরতর বিরোধী এবং পাকিস্তানের ঢালাও গণহত্যা ও অগণন নারীর সম্ভ্রমহানির পক্ষাবলম্বনকারী হেনরি‌ কিসিঞ্জারও শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। এদিকে আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের পরিচিত নেত্রী সুচিও তাই -যার অনাচারের বোঝা সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে আমরাই বইয়ে চলেছি।

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নোবেল শান্তি পুরস্কার বরাবরই ইম্পেরিয়ালিস্টদের ডিপ স্টেটের স্বার্থ রক্ষা করে। এবারো এর ব্যত্যয় হয়নি। এখানে এবং সেখানে কিঞ্চিৎ নজর দিলেই এর সত্যতা নিরূপণ করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক 
১০ অক্টোবর ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login