বাংলাদেশেরপ্রশাসনিক কাঠামোতে একটি দীর্ঘদিনের প্রচলিত প্রথা হলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের 'সরকারি সফর'। অনেক ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন পর্যায়েরব্যক্তিবর্গ প্রায়ই অফিসিয়াল ট্যুর/ দাপ্তরিক পরিদর্শনের অজুহাতে নিজএলাকা বা নিকটবর্তী দর্শনীয়স্থানে সফর করেন। এই সফরের প্রকৃতউদ্দেশ্য যতটা না দাপ্তরিক, তারচেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিগত স্বার্থনির্ভর। এতে রাষ্ট্রের সম্পদঅপচয় হচ্ছে।
এইধরনের সফরে দেখা যায় অনেক কর্মকর্তাগণ নিজের এলাকার কাছাকাছি কোনো স্থানীয় অফিসে হঠাৎ পরিদর্শন করেন। অথচ সফরের আগাম পরিকল্পনা, কর্মসূচি ও রিপোর্ট প্রদানইত্যাদি কিছুই অনুসরণ করা হয় না। সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভ্রমণ অথবা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন।
এইসফরে অফিসের পক্ষ থেকে যাতায়াত, খাবার, আপ্যায়ন, আবাসন ইত্যাদি সমস্ত ব্যয় বহন করা হয়, যাকে সাধারণত টিএ/ডিএ (ভ্রমণ ভাতা ও দৈনিক ভাতা) হিসেবে অভিহিত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় অফিসগুলোকেও সফরকারীর সম্মানার্থে অতিরিক্ত খরচ করতে বাধ্য করা হয়, যা তাদের নিয়মিতকার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে।
এইঅপচয় রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:
1. কঠোরনীতিমালা প্রণয়ন : সরকারি সফরের জন্য একটি কঠোর ও স্বচ্ছ নীতিমালাতৈরি করতে হবে। সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য, কর্মসূচি, ফলাফল এবং রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করতে হবে।
2. অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় কঠোরতা: সরকারি সফরের পূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর থেকেঅনুমোদনের জন্য যৌক্তিক ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্যসহ আবেদনজমা দিতে হবে এবং তা যাচাই-বাছাইকরে অনুমোদন দিতে হবে।
3. মাঠপর্যায়ে সফর সীমিতকরণ: ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া নিজেদের এলাকা বা পরিচিত অঞ্চলেদাপ্তরিক সফর নিরুৎসাহিত করতে হবে।
4. ব্যয়নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ: সফরের পর ভ্রমণ ভাতারখরচ ও সফরের অর্জননিয়ে নিরীক্ষা করতে হবে এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
5. দাপ্তরিককাজে প্রযুক্তি ব্যবহার : আজকের ডিজিটাল যুগে অধিকাংশ দাপ্তরিক কার্যক্রম অনলাইন বা ভার্চুয়ালি সম্পন্নকরা সম্ভব। ভিডিও কনফারেন্স, ভার্চুয়াল মিটিং ইত্যাদির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেওয়াযেতে পারে। কোভিড-১৯ এর সময়কাল এর ভালো উদাহরণহতে পারে ।
এছাড়া ,দাপ্তরিকসফরের নামে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির এই প্রবণতা বন্ধকরতে সময়ে সময়ে সরকারি সার্কুলার প্রকাশ করা উচিৎ।