Posts

গল্প

শেষ যাত্রা

October 14, 2025

sk jibon

Original Author মো: ইসমাইল হোসেন

34
View

 

রাতটা ছিলো মেঘলা। রাস্তায় বাতিটাও আধো নিভে গেছে।
এক মা কোলের শিশুকে জড়িয়ে বসে আছে রাস্তার ধারে। গায়ে তার পুরোনো চাদর, মুখে ধুলা, চোখে অনিদ্রার ভার।
ছেলেটা ঘুমোচ্ছে, মায়ের বুকের ভেতর একটুখানি উষ্ণতা খুঁজে পেয়েছে — পৃথিবীর সব কষ্টের মধ্যেও সেই মায়ের বুকটাই ছিল তার নিরাপদ আশ্রয়।

পাশ দিয়ে যারা যাচ্ছিল, তারা কেউ করুণা দেখালো না।
কারো চোখে ছিল অবহেলা, কারো মনে ঘৃণা —
“ভিখারির দল…”, কেউ একজন বিড়বিড় করে চলে গেলো।

মা শুধু একবার আকাশের দিকে তাকাল।
চোখে জল, ঠোঁটে নীরব প্রার্থনা —
“হে ঈশ্বর, আমার সন্তানের ঘুমটা যেন শান্তিতে কাটে।”

বছর কেটে গেল।
সেই রাস্তাতেই একদিন এক দামি গাড়ি এসে থামলো।
সেখান থেকে নামলো এক যুবক — পরিচ্ছন্ন পোশাক, চোখে সফলতার দীপ্তি।
গাড়ির পাশে হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়লো এক ভিখারিনীর দিকে।
চুল সাদা, গায়ে ধুলা, চোখে অজানা ক্লান্তি।

যুবক থমকে গেলো।
চেনা কিছু লাগলো মুখটায়…

সে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“মা… তুমি?”

বৃদ্ধা কেঁপে উঠলেন।
চোখে জল চলে এলো, ঠোঁটে একটুখানি হাসি—
“তুই চিনলি রে বাবু? আমি ভেবেছিলাম তুই আমায় ভুলে গেছিস…”

যুবক কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমি যখন ছোট ছিলাম, তুমি আমাকে রাস্তায় ফেলে গেলে কেন, মা?”

মা নীরবে মাথা নিচু করলো।
ধীরে ধীরে বললো—
“বাবা, সেদিন আমি তোমাকে ফেলে যাইনি, আমি তোমাকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম।
রাস্তায় ক্ষুধা, রোগ, বৃষ্টি— আমি জানতাম আমি মরবো।
তোমাকে মন্দিরের পাশে রেখে গিয়েছিলাম যেন কেউ ভালো মানুষ তোমাকে তুলে নিয়ে যায়, তুমি বাঁচো…”

যুবক নিঃশব্দে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল মায়ের পায়ে।
“মা, আমি আজ যা হয়েছি, তা তোমার সেই ত্যাগের কারণেই। তুমি আমাকে হারাওনি, তুমি আমাকে পৃথিবীর ভেতর খুঁজে দিয়েছো।”

মা ছেলের চোখে জল মিশে গেলো,
আকাশের মেঘ ভেঙে রোদ পড়লো তাদের উপর।

Comments

    Please login to post comment. Login