Posts

চিন্তা

বর্তমানে যুবকদের ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণ

October 16, 2025

Ataul Molla

52
View

বর্তমানে যুবকদের ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণ
 

১. অশ্লীলতা ও হারাম কনটেন্টের সহজলভ্যতা.

হারাম কনটেন্ট চোখ ও হৃদয়কে গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়।

আজকের যুগে অশ্লীলতা যেন বাতাসে ভাসছে মোবাইল স্ক্রিনে, বিলবোর্ডে, এমনকি শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্মেও। যা একসময় পাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য, তা আজ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এ দৃশ্য চোখে ঢুকে অন্তরকে কালো করে, ঈমানকে দুর্বল করে, এবং আল্লাহর ভয় অন্তর থেকে মুছে দেয়.

আল্লাহ বলেন

 قُلْ لِّـلۡمُؤۡمِنِيۡنَ يَغُـضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِهِمۡ وَيَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَهُمۡ‌ ؕ ذٰلِكَ اَزۡكٰى لَهُمۡ‌ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِيۡرٌۢ بِمَا يَصۡنَـعُوۡن ۞

“ঈমানদার পুরুষদের বল, তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কাজ সম্পর্কে অবহিত।

(সূরা আন-নূর: ৩০)

রাসূলুল্লাহ বলেছেন:

 «العَيْنَانِ تَزْنِيَانِ، وَزِنَاهُمَا النَّظَرُ»

“দুটি চোখও ব্যভিচার করে, আর তাদের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি।”

( মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ৮৫০৭ ,সহীহ মুসলিম ২৬৫৭)

চোখ হলো হৃদয়ের দরজা যা দিয়ে যা প্রবেশ করে তাই অন্তরকে আলোকিত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে।

২. ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা ও অপব্যাখ্যা.

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় ইসলামী বিরোধী এমন পোস্ট ছড়ানো হয়।

যেমন, “আল্লাহ আছেন এর প্রমাণ কী?” বা “হাদিস কি নির্ভরযোগ্য?” এসব প্রশ্ন অনেক তরুণের মনে বিভ্রান্তি ও দ্বিধা তৈরি করে।

আল্লাহ বলেন:

 فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَة

“যাদের অন্তরে কুমতি আছে, তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য অস্পষ্ট আয়াত অনুসরণ করে।”

(সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৭)

অনেক তরুণ দ্বীনের বিরোধী নয়, বরং বিকৃত উপস্থাপনার শিকার। মিডিয়া, ভ্রান্তপন্থী দল, এমনকি কিছু অজ্ঞ বক্তা ইসলামকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন তা কেবল কষ্ট, সংকীর্ণতা আর উগ্রতার প্রতীক। ফলে তরুণদের মনে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসার পরিবর্তে ভয় ও সংশয় জন্ম নেয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 ﴿يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ﴾

“তারা কথাগুলো তাদের আসল জায়গা থেকে বিকৃত করে।”

(সূরা আন-নিসা: আয়াত ৪৬)

মহান নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :

سَيَكونُ في آخِرِ أُمَّتي أُناسٌ يُحَدِّثُونَكُمْ ما لَمْ تَسْمَعُوا أنتُمْ ولا آباؤُكُمْ، فإيَّاكُمْ وإيَّاهُم

“আমার উম্মতে এমন লোক আসবে, যারা তোমাদের এমন কথা বলবে যা না তোমরা শুনেছ, না তোমাদের পিতারা সুতরাং তাদের থেকে সাবধান হও।”

(সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৬)

ইবন সিরীন (رحمه الله) বলেন:

«إن هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم»

নিশ্চয় এই জ্ঞান দ্বীন—তাই দেখো কার কাছ থেকে তোমরা তা নিচ্ছো।

(সুনান আদ-দারিমি, سنن الدارمي, হাদিস নং ৪২৪ )

৩.নাস্তিক্যবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী বন্ধুর প্রভাব.

বন্ধুর প্রভাব মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।  একজন যুবক যখন নাস্তিক বা ধর্মবিদ্বেষী বন্ধুর সাথে মেলামেশা করে, তখন তাদের  কুমন্ত্রণায় অন্তরে দ্বীনের প্রতি সন্দেহ জন্মায়।

রসুলুল্লাহ বলেছেন:

 الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِل

“মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর থাকে, তাই তোমাদের প্রত্যেকে যেন দেখে সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে”

(আবু দাউদ হাদীস নং ৪৮৩৩, তিরমিযি ২৩৭৮)

সালাফদেরউক্তি(পূর্বের নেক মানুষ)

“তুমি যাদের সাথে বসবে, তাদের মধ্যে আল্লাহর কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় এমন কাউকে বেছে নাও।”

বন্ধু জীবনের দিক নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। ভালো বন্ধু জান্নাতের পথে সাহায্য করে, আর খারাপ বন্ধু জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন;

(اَلۡاَخِلَّاۤءُ يَوۡمَئِذٍۢ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الۡمُتَّقِيۡنَ ) ۞

“সেদিন বন্ধু-বান্ধব একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে, মুত্তাকীদের ছাড়া।”

(সূরা আয-যুখরুফ: আয়াত ৬৭)

৪. পরিবার ও সমাজের তারবিয়াহর অভাব.

পিতা-মাতার তরফ থেকে দ্বীনের প্রতি উদাসীনতা 

এবং ইসলামী পরিবেশহীন সমাজে বেড়ে ওঠা।

পরিবার হলো সন্তানদের প্রথম বিদ্যালয়। বাবা-মা যদি দ্বীনের আলো পৌঁছে না দেন, সমাজ যদি নৈতিকতার বাতাস বইয়ে না দেয়, তাহলে তরুণের অন্তরে গাফেলতার বীজ গজিয়ে ওঠে। আজ অনেক পরিবারে কোরআনের সুরের বদলে টিভি বা গেমের শব্দ বেশি শোনা যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا﴾

“হে ঈমানদারগণ! নিজেদের এবং আপন পরিবারকে আগুন থেকে রক্ষা করো।”

(সূরা আত-তাহরীম: আয়াত ৬)

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

 «كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»

“তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল, এবং প্রত্যেকেই তার অধীনদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে”

(সহিহ বুখারি হাদিস নং ৮৯৩)

আবদুল্লাহ ইবন উমর (رضي الله عنهما) বলেন:

«أدِّب ابنك فإنك مسؤول عنه»

“তোমার সন্তানকে শিক্ষা দাও, কারণ তুমি তার জন্য দায়িত্বশীল।”

(ইবনুল কাইয়িম, تحفة المودود بأحكام المولود,পৃষ্ঠা ১৭৭ মাকতাবাতুশ শামেলা সংস্করণ, )

যে ঘরে কোরআনের আলো নেই, সেখানে গুনাহের অন্ধকার সহজেই ঢুকে পড়ে।

৫. দুনিয়ারপ্রতি লোভ.

দুনিয়া সুন্দর, কিন্তু এর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ঈমানকে দুর্বল করে । অনেকেই আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার চাকচিক্যকে বড় করে দেখে. যেমন :অর্থ, খ্যাতি ও ক্যারিয়ার পেতে গিয়ে দ্বীনের সাথে আপস করে এবং ইসলাম থেকে গাফেল হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ﴾

“মানুষের কাছে কামনা-বাসনা সুন্দর করে উপস্থাপিত হয়েছে।”

(সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৪)

রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন:

«لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لابْتَغَى ثَالِثًا»

“যদি আদম সন্তানের দুই উপত্যকা পূর্ণ ধন থাকে, তবে সে তৃতীয়টিরও আশা করবে।”

(সহিহ বুখারি হাদিস নং ৬৪৩৬, সহিহ মুসলিম ১০৪৯))

হাসান বাসরী বলেন:

 «حب الدنيا رأس كل خطيئة»

“দুনিয়ার ভালোবাসা সব গুনাহের মূল।”

যে হৃদয় দুনিয়ার প্রেমে ডুবে যায়, আখিরাতের আলো সেখানে জ্বলে না।

(সাখাওয়ী "المقاصد الحسنه ২১৮ নং)

৬. মূল্যবান সময়ের অপচয়.

সময়ের অপচয় এবাদত ও উপকারী কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

সময় হলো মানুষের মূলধন—যা হারালে আর কখনো ফিরে আসে না। অথচ আজকের যুবকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অর্থহীন স্ক্রলিংয়ে কাটায়, কিন্তু নামাজ বা কোরআন পড়ার সময় বের করতে কষ্ট হয়। যে সময়কে মূল্য দেয় না, সে আসলে নিজের জীবনকেই সস্তায় বিক্রি করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿وَالْعَصْرِ * إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ﴾

“সময়ের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।”

(সূরা আল-আসর: আয়াত ১-২)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ» وَالْفَرَاغ

“দুটি নিয়ামত আছে, যাতে অনেক মানুষ প্রতারিত হয় সুস্থতা ও অবসর সময়”

(সহিহ বুখারি হাদিস নং ৬৪১২)

ইবনুল কাইয়িম (رحمه الله) বলেছেন:

«إضاعة الوقت أشد من الموت، لأن الموت يقطعك عن الدنيا وإضاعة الوقت تقطعك عن الله»

“সময় নষ্ট করা মৃত্যুর চেয়েও কঠিন। কারণ মৃত্যু তোমাকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে, কিন্তু সময় নষ্ট করা তোমাকে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে।”

(ইবনুল কাইয়িম, كتاب الفوائد ,পৃষ্ঠা ৬৭

মাকতাবাতুল মাআরিফ (সৌদি) ছাপা সংস্করণ)

৭.গুনাহকে তুচ্ছ ভাবা ও আল্লাহর শাস্তি থেকে গাফেল থাকা.

অনেক তরুণ মনে করে, “এই ছোট গুনাহে কিছু হবে না”কিন্তু ছোট গুনাহ অবহেলার কারণে পাহাড়ের মতো হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

 ﴿وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ﴾

“তোমরা এটিকে তুচ্ছ মনে করো, অথচ আল্লাহর কাছে তা মহা গুরুতর।”

(সূরা আন-নূর: ১৫)

মুমিন গুনাহকে দেখে যেন মনে করে যেন পাহাড় তার উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে আর মুনাফিক দেখে মনে করে যেন একটি মাছি যা নাকে বসেছে ।

যেমনটি রসুলুল্লাহ বলেছেন:

"الْمُؤْمِنَ يَرَى ذَنْبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ، يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذَنْبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا"

মুমিন গুনাহকে দেখে মনে করে যেন তার উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড় কিবে আর পাপাচারী ব্যক্তি দেখে মনে করে তা যেন একটি মাছি যা নাকে বসেছে,

(বুখারি হাদিস নং ৬৩০৮)

সমাধান:

ঈমান নষ্ট করে এমন পথের ফাঁদ থেকে বাঁচতে চাইলে

 ১.চোখের হেফাজত করতে হবে।

২. নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

 ৩.সৎ বন্ধু বেছে নিতে হবে।

৪.পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

৫.দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে হবে।

৬.সময়ের সঠিক মূল্য দিতে হবে।

 ৭.গুনাহকে কখনও তুচ্ছ মনে করা যাবে না।


 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের উপর দৃঢ় রাখুন—আমীন।

Comments

    Please login to post comment. Login