Posts

গল্প

গল্প:নাইট গার্ড#

October 16, 2025

গল্পের সমারোহ

Original Author রিজন হোসেন অনিক

Translated by বাংলা

82
View

#গল্প:নাইট গার্ড#

গল্পটা ওইসময়ের যখন আমি এস এস সি পরীক্ষারর্থী করোনাভাইরাসের কারণে চারপাশে তখন লকডাউন একটা কাজের বড্ড অভাব এদিকে পকেট ফাকাই বলা চলে তাই উপায় না পেয়ে নাইট গার্ডের জব নিই বেতন আহামরি নাহলেও এই অভাবের সময় চলে যায় আমি আকাশ আমার প্রথম পোষ্টিং জোন পড়লো মেইন হাইওয়ে রোড সাইডের দোকানগুলো পাহাড়া দেবার সুবাদে বারী স্যার: আকাশ তুমি আজকেও লেট? বলছিনা ডিউটি জোনে সময়মত আসতে এভাবে যদি লেট করে আসো তাহলে কিন্তু বাদ দিয়ে দিবো।আকাশ:স্যার আর লেট হবেনা এটাই লাস্ট প্লিজ স্যার দ্যাখো আকাশ বেতন তো তোমাকে দেই একটা সাইকেল কিনে নিতে পারোনা???যে বেতন দেন মাস শেষে জ্বরের ওষুধ কেনারও পয়সা থাকে না সাইকেল তো অনেক দূরের কথা মনে মনে বললাম কথাগুলো। যাইহোক কাল থেকে লেট করলে বেতন কেটে নিবো কিন্তু আকাশ কথা গুলো বলে চলে গেল সিকিউরিটি ইনচার্জ শা***লার সব গার্ডের বেতন থেকে খালি টাকা কাটার ধান্দা এমনি এমনিই তো আর পেট উচু হয়নাই😒মনে মনে বলেই ফেললাম কথাগুলো সহসা ফাকা রোডে টহল দিচ্ছিলাম রাত তখন প্রায় ১:২২ রোড ঘাট জনমানব শূন্য কেমন পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে চারপাশে ভাবলাম ধুর!!আশেপাশে কেউ নেই শুধু শুধু টহল দিয়ে কি হবে গিয়ে একটু পড়তে বসি যেই কথা সেই কাজ বই টা নিয়ে পথের ধারে চেয়ারটায় বসে পড়ছিলাম হঠাৎই চোখ গেল একটা দোকানের বাইরে রাখা বেঞ্চের দিকে অন্ধকারে ঠিক ঠাওর করতে পারছিলাম না তবে ওখানে যে কিছু একটা আছে সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম টর্চ টা নিয়ে জায়গা টার দিকে আলো ফেললাম চোখে স্পষ্ট হলো কেউ যেন সেখানে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। আমি বাসির সাইরেন দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম। এতক্ষণে অবয়ব টা স্পষ্ট হলো একটি মেয়ে বসে আছে সাদা রঙের একটা ময়লা  ড্রেস পড়া মেয়েটি কিছু জায়গায় ছিড়ে গেছে মেয়েটিকে দেখে ভাল ঘরের মনে হচ্ছিলো ভাবছিলাম হয়তো কনো বিপদে পড়েছে মেয়েটি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কে এখানে বসে আছেন কেনো এত রাতে?কোথা থেকে এসেছেন মেয়েটি আমার কোনো কথার উত্তর দিলোনা আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম আপনার কনো সমস্যা? আমায় বলতে পারেন আমি এখানকার গার্ড আপনার বাসার ঠিকানা দিন যোগাযোগ করে পৌঁছে দিই আপনাকে। তার কনো প্রয়োজন নেই আমি কাছেই থাকি শুধু এটুকুই বললো মেয়েটি শামীম ভাই:কিরে আকাশ কার সাথে কথা বলিস আরে শামীম ভাই ওই মেয়েটি...মেয়েটি?কোন মেয়েটি আরে ওই!!!আরে কোথায় গেল মেয়েটি শামীম:আরে কার কথা বলছিস তুই এখানে তো কেউ  নেই আকাশ তাকিয়ে চমকে গেলো আরে সত্যিই তো এখানে তো কেউ নেই কোথায় গেল মেয়েটি আশ্চর্য! শামীম:আরে ঘুমের ঘোরে হয়তো ভুল দেখছিস যা গ্যারেজের কল থেকে চোখ টা ধুয়ে নে।আচ্ছা ঠিক আছে ভাই কিন্তু আকাশের মনে প্রশ্ন ঘুচলো না মেয়েটি হঠাৎ কোথায় চলে গেল হুট করে একটা মানুষ এভাবে কোথায় চলে যেতে পারে সম্প্রতি আকাশ ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা আর পেপার নিয়ে বসলো হঠাৎ একটা খবরের কাগজের একটা  কলামে আকাশের চোখ আটকে গেল কল্যাণপুরের অমুক গোরস্তানের নৈশ্য প্রহরী এ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত যার কথা বলা হয়েছে লোকটি আকাশের চেনা এইতো সেদিন এক ডিউটি জোনেই ডিউটি পরেছিলো আর এর মধ্যেই নাকি সে রক্ত স্বল্পতা রোগে আক্রান্ত সেদিন তো সুস্থই ছিল সম্প্রতি এ্যানিমিয়া রোগের হাড় এখানে বড্ড বেড়েছে এর কনো যুক্তি সংগত কারণ খুজে পাওয়া যায়না তারপরের দিন ডিউটি জোনে যেতে না যেতেই বারী স্যার :আকাশ তুমি আজকেও লেট কতদিন বলছি ৩০মিনিট আগে বের হবা আকাশ:সরি স্যার। যাও ডিউটি জোনে যাও আর আমি গেলাম...মুখ ভার করে ভাই একটা মশলা চা দেন তো আকাশ ভাই আপনারে তো দেখলাম স্যারে আজকেও ছুলতেআছে হে! হে! হে! আকাশ: ভাই দাত ভিতরে নেন প্রোপার ডিউটি কিন্তু আমিই দেই বেশি হাসলে আমিও রাতে ডিউটি বাদ দিয়ে ঘুমাবোনে এটা শুনে দোকানদার হাসি থামিয়ে দিয়ে ভাই আপনি দেখি পুরো মনের উপর নিয়ে নিছেন সরি ভাই আকাশ :হুম মাথায় থাকে যেন।আজকেও ঠিক সেইম টাইমে মেয়েটি একই জায়গায় বসে আছে রাস্তার দোকানের সেই বেঞ্চের উপরে দেখতে পেল আকাশ। এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা কে আপনি প্রতিদিন এখানে বসে থাকেন আসলে বুঝতেই তো পারছেন এটা আমাদের ডিউটি জোন এখানে এভাবে বসে থাকলে আমাদের উপর চাপ আসে এবার মেয়েটি মাথা তুললো অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটি ল্যাম্পপোস্ট এর আলোতে মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বললাম আপনার কনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারেন আমি সাহায্য করতে পারি ধন্যবাদ আমার কনো সমস্যা নাই ওহ আচ্ছা ঠিক আছে চলেই যাচ্ছিলাম মেয়েটি পিছু ডাকলো এইযে শুনছেন...জ্বি কিছু বলবেন? হ্যাঁ আপনি কি এখানে নতুন?জ্বি হ্যা ওহ এইজন্যই মাঝে মধ্যে এদিকে আসবেন গল্প করবো আমি এসময় এখানেই বসে থাকি ওহ আচ্ছা ঠিক আছে তবে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?? হুম...আপনার বাবা মা আপনার জন্য চিন্তা করেন না? না আমার কেউ নেই ওহ আচ্ছা সরি ক্ষমা করবেন বুঝতে পারি নাই আরে কনো ব্যাপার না। শামীম:এই আকাশ ওখানে বসে কি করছিস?গল্প করছি ভাই গল্প করছিস কার সাথে!? ওই তো এই মেয়ে! আরে কোথায় গেল মেয়েটি অদ্ভুত!! তো আরে তুই কোন মেয়ের কথা বলছিস কাল থেকে বলতো ওখানে তো কেউ নেই শোন আকাশ ঘুমের অভাবে তোর হ্যালুসিনেইশান হচ্ছে তুই ক দিন ছুটি নে! আচ্ছা সে নেবো ক্ষন। এভাবে দিন গড়াতে থাকে মেয়েটির সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয় একটা সময় ওকে আমার ভালো লেগে যায় কিন্তু সেটা বলতে ভয় ভয় লাগছে বলে রাখা ভাল ওর নাম ইরা।আজ ইরাকে বলে দিবো আমি ওকে পছন্দ করি। আজ আগে আগে ডিউটি জোনে এসে বসে আছি কিরে আকাশ  আজ তুই এত আগে জোনে এসছিস কেনো আসতে পারি না ভাই? না তা পারিস আজ আমার বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে কখনো এসব কিছু করিনি আজই প্রথম আজ ইরার বসে থাকা জায়গা টায় বসে আছি টেনশানে শরীর দর দর করে ঘেমে চলেছে আমি বার বার শার্টের হাতায় ঘাম মুছছি শামীম :কিরে ড্রেস পরবি না আর আজ ডিউটি জোনে এত ফিটফাট হয়ে এসেছিস কেনো রে আকাশ? আবার দেখি ঘামছিস শরীর ঠিক আছে তোর বিরক্তি নিয়ে বললাম আরে ভাই আমি ঠিকই আছি এত প্রশ্ন কইরেন না তো!বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলাম ২টো বাজতে আর ১ মিনিট বাকি কিন্তু কই ইরা তো এখনো এলো না আজ মনে হয় আসবে না বলে উঠে যেতে যাবো তখন কেউ হাত টেনে ধরলো।আরে ইরা আপনি কখন আসলেন?...এইতো এক্ষুনি! আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন? ইয়ে মানে না মানে...আরে আপনাকে তো আজ বেশ স্মার্ট লাগছে আজ ইউনিফর্ম পরেন নি দেখছি...জ্বি হ্যাঁ...আজ কিছু  স্পেশাল আছে বুঝি? ইরা হেসে বললো কথাটা ইরার হাসি আমাকে নার্ভাস করে দিলো হঠাৎ ইরা বলে উঠলো আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি কিছু বলতে চান কিন্তু একি আপনি এভাবে ঘামছেন কেনো আসলে ইরা ইয়ে মানে আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি কথাটা বলতেই ইরা হি হি করে হেসে উঠলো এই কথা বলতে গিয়ে আপনার এই অবস্থা হি হি!! ইরা কনো উত্তর না দিয়ে আমার হাত ধরে বললো চলেন একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসি আসলে সত্যি বলতে আমিও আপনাকে পছন্দ করি আর আমি এও জানতাম আজ আপনি আমাকে কথা টা বলবেন আমি অবাক হলাম ও কি করে জানলো। সেদিন রাতে ইরার হাত ধরে পুরো রাস্তা টহল দিলাম আর অনেক গল্প করলাম  খেয়াল করলাম শামীম ভাই বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে  ওই মিয়া সমস্যা কি কখনো মেয়ে মানুষ দেখেন নাই নাকি হ্যাঁ কথাটা বলতেই সে আরো অবাক হলো মেয়ে!!! আরে কোন মেয়ে কই মেয়ে!! ধুরো মিয়া!আপনার সাথে কথা বলাই সময় নষ্ট চলো তো ইরা শামীম :ইরা!! পরদিন...শামীম ভাই আর আমি গ্যারাজের একটা পিকআপের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম হঠাৎ দেখতে পেলাম ২টো বাইকে করে ৬জন লোক এলো রাত তখন ১:৩০ মি ৬ জনের কাধে স্নাইপার গান একটি দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ালো তারা এসিড দিয়ে তালা গলিয়ে ফেলে দোকানের সাটার খুলে ফেললো...আরে ভাই ওরা তো ডাকাতি করছে আকাশ তুই থানায় ফোন দিয়ে এগো আমি বাকী ৪ জন কে নিয়ে ওদের আটকানোর চেষ্টা করি আচ্ছা ভাই আপনি যান ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ওরা আমায় দেখে ফেলে আর সাথে সাথেই গুলি চালিয়ে দেয় আমার হাতে গুলি লাগে কিন্তু তবুও পুলিশকে ফোনে সব জানিয়ে দিতে সক্ষম হই অনেক ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমরা সফল হই আর ওরা পালিয়ে যায় পুলিশের গাড়ির সাইরেন পেয়ে বারী স্যার আমাকে এক সপ্তাহের ছুটিতে পাঠিয়ে দেন আমি আজ প্রায় ২ দিন হলো জোনে যাই না ইরার কথা খুব মনে পড়ছে কিন্তু আমার কাছে ওর ফোন নাম্বার ও নেই যে যোগাযোগ করবো সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটা হাতে নিলাম হঠাৎ পেপারের একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল ৬ জন লোকের একসাথে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু খুন নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু তার কনো কূল কিনারা করতে পারছেনা পুলিশ তাই তদন্তের ভার গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবি কিন্তু এখানে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় টি হচ্ছে লোকগুলিকে আমি চিনি এরা কালকের সেই ডাকাত চক্রের লোকগুলো কিন্তু এদের মৃত্যু কিভাবে হলো হতে পারে গ্যাং ওয়ার যাক গে আমার কি যা হয়েছে খুব ভাল হয়েছে এভাবে এক সপ্তাহ কেটে যাবার পর সম্প্রতি জোনে ফিরলাম সেদিন রাতে ইরার সাথে দেখা হলো এখন আপনার কি অবস্থা জ্বি এখন ভাল আছি জানেন এই ১ সপ্তাহে আপনার কথা খুব মনে হয়েছে অনেক মিস করেছি জানি আমি সেটা আপনাকে একটা কথা বলার আছে আমার সাথে আসুন ইরা আমাকে একটা ফাকা রাস্তায় নিয়ে গেল আমি আর ইরা হাতধরে হাটছি তখন ইরা বললো আকাশ আমি আসলে বেচে নেই কয়েক বছর আগে রোড এক্সিডেন্টে এই রোডে আমার মৃত্যু হয় কথাটি শুনে হঠাৎ আমার শীরদ্বারা বেয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত নেমে গেলো ভয় তো আমি খুব ভালই পেয়েছি কিন্তু ওকে বুঝতে না দিয়ে বললাম ইরা তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?? না আকাশ আমি সিরিয়াসলি বলছি এই রোডেই আমার মৃত্যু হয় আর আমি সেদিনের পর থেকে এখানেই থাকি তবে এটা ঠিকিই যে আমি একটা পিসাচ এ পযন্ত যতগুলো রহস্যময় খুন হয়েছে সবই আমি করেছি...কথাগুলো শুনে আমার শরীর ভার হয়ে গেল আমি যেন নড়তে পারছিলাম না ইচ্ছে হচ্ছিলো ছুট্টে দৌড় দিতে কিন্তু আমার পা যেন চলছে না কেউ যেন আমায় আস্টপিস্টে ধরে রেখেছে ঢোক চিপতে চিপতে বললাম তারমানে তুমি কি এখন আমাকেও...ইরা এক অট্ট হাসি হাসলো আরে ধুর! কি সব বলছো তোমাকে তো আমি ভালোবাসি...আর ওই লোকগুলোকে কে মেরেছে ইরা?মূহুর্তেই ইরার মুখ কালো হয়ে গেল তারপরেক্ষণেই ইরা দাত বের করে একটা ভয়ানক রকমের হিংস্র হাসি হাসলো বুঝতে বাকী রইলো না ডাকাত চক্রের লোকগুলোকে ইরাই মেরেছে।...

Comments

    Please login to post comment. Login