Posts

গল্প

শীতের সকালে।

October 22, 2025

Shafin pro

162
View

বন্ধু আমার রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাত আটায় শেষ লঞ্চ টাইম শেষ। জোরে জোরে চেঁচামেচি করতেছে রিকশায় আমার বন্ধু। আমি মাকে বললাম। তাড়াতাড়ি আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দাও। মা বললো ভাত খেয়ে যাবি না। আমি বললাম ভাত খাওয়ার সময় নেই। মা বললো কয়দিন থাকবি। আমি বললাম কয়দিন লাগে তা তো বলতে পারতেছি না। মা বলল তাহলে তুই ফোন দিয়ে জান। আমি বললাম ওই উপজেলায় মোবাইলে নেটওয়ার্ক ও সাইডে কোন ফোনের কাজ করে না। মা বলল তাহলে কিভাবে সংবাদ পাবো। আমি বললাম উপজেলা থেকে টেলিফোন অফিস থেকে তোমাকে আমি ফোন দিয়ে জানাবো। বলল ঠিক আছে তাহলে খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করিস। আমি বললাম বাজার লাগলে তুমি মেজ ভাই কে দিয়ে বাজার করিয়ে নিও। মা বলল সে চিন্তা তো করা লাগবে না। মাছ মাংস তো সব ফ্রিজেই আছে। মা আমাকে হালকা কিছু নাস্তা দিয়েছে। আমি ঝটপট খেয়ে নিলাম। ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে আমি আমার বন্ধুকে ডাকতে ডাকতে নেমে আসলাম। বন্ধু আমার রিক্সায় বসে বলতেছে কিরে এত দেরি করলি কেন। অফিস থেকে তো অনেক আগেই চলে আসছিছ। আপনি চট করে উঠে রিকশাওয়ালাকে বললাম তাড়াতাড়ি চল বেশি সময় নাই লঞ্চ ছেড়ে দিতে পারে। এরপর আর কোন লঞ্চ নাই। লঞ্চ না পেলে বাই রোডে যাওয়া অনেক কষ্টের বিষয়। বাই রোডে যেতে হলে গতবার মনে নাই। বাইক নিয়ে দুই নদী পার হয়ে। মাটির রাস্তা দিয়ে মেঘনার পর দিয়ে বালু মরুভূমির ভিতর দিয়ে যেতে কতই না কষ্ট হয়েছিল। বন্ধু আমার বলল। তবে সেদিনটিতে খুব ভালোই লেগেছিল। কথা বলতে বলতে আমরা লঞ্চঘাট চলে আসলাম। ঘাটে এসে কিছু খাওয়াদাওয়ার জন্য হালকা কিছু নিয়ে নিলাম। এর ভিতরেই লঞ্চ সাইরিন দিতে শুরু করল। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে লঞ্চে উঠে গেলাম। আমরাও লঞ্চে উঠতেই লঞ্চের সিঁড়ি উঠিয়ে ফেলল। ছোট ছোট লঞ্চ বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহর উপজেলা শহরগুলোতে যাতায়াত করে। আমরা লঞ্চের ভিতরে গিয়ে বসলাম। ব্যক্তি রেখে। কিছুক্ষণ পরে আমরা বাহিরে এসে দাঁড়ালাম। শীতের রাত্র তাই ভারি জ্যাকেট নিয়ে নিলাম যেহেতু গ্রাম অঞ্চলে ঠান্ডা আরো বেশি লাগতে পারে। তাছাড়া জুনের সময় হয়ে গেছে ক্লোজিং টাইম। তাই বিল্ডিং এর কাজ কি তাড়াতাড়ি হ্যান্ডওভার দেওয়া উচিত। লঞ্চ ধীর গতিতে চলতেছিল। এর  ভিতরে আকশে  জোসনা সরে গেল। দেখি হালকা হালকা কুয়াশা পড়তেছে। আমি আর আমার বন্ধু মিলে বললাম চল চা খেয়ে আসি নিজ থেকে। এর ভিতরেই চার দোকানদার সামনে উঠে গেল। ওদের বলল স্যার চা খাবেন। ওদের বলতে লসটি ছোট হলেও এক কক্ষে পুরুষরা বসে অন্য কক্ষে মহিলারা বসে। চার দোকানদার ওয়ালা সেই মহিলার কক্ষে কে কে চা খাবে সে নিয়ে লিস্ট করতেছে। আমার বন্ধু দোকানদারকে ডাক দিল। অবশ্য আমি এখন পর্যন্ত আমার বন্ধুর নামই বলিনি। কারণ নামের তো প্রয়োজন হয় না আমাদের। সেও আমাকে বন্ধু বলে ডাক দেয় আমিও তাকে বন্ধু বলে ডাকি। তাই কখনো নামের প্রয়োজন হয়না অন্য মুস্তাফিজ। লম্বা আমার চাইতে ৬ ইঞ্চি বড় । চার দোকানদার এসে বলল মামা বলেন আপনাদের জন্য কি করতে পারি। আমার বন্ধু বলল। আমাদের জন্য চা নিয়ে এসো দুটো সিগারেট নিয়ে এসো। আর দোকানদার মামা কিছুক্ষণের ভিতরে আমাদের চা  দিয়ে গেল। আর ওদের জন্য চা নিয়ে গেল। টাইম যেভাবে দেখতেছি তাতে মনে হচ্ছে লঞ্চটি  উপজেলার মাঝপথে চলে এসেছি আর ঘন্টা দুই চালালেই উপজেলা চলে আসতে পারবে। ডাকবাংলা তো আমরা বুকিং দিয়ে আগেই রেখেছি। কারণ আমাদের জে ডিপার্টমেন্টের কাজ উপজেলার ডাকবাংলা তাদের আন্ডারে। আমরা আর লঞ্চের ভিতরে গিয়ে বসলাম না। লঞ্চের ভিতর কেউ রাজনীতির আলাপ করে। কেউবা কেউ সাথে গল্প করতে থাকে চার ঘন্টার পর তো তাই কেউ ঘুমায় না তাই। অথচ লঞ্চের ভিতরে কারো সাথে কখনো কোন সময় দেখাও বা হয় না কিন্তু দেখলে মনে হয়। একজন আরেকজনের অনেক পুরনো পরিচিত। এর ভিতরে দেখি আস্তে আস্তে কুয়াশা ঢেকে যাচ্ছে নদী। ২০-৩০ মিনিটের ভিতরে একজন থেকে আরেকজনকে চিনে যাচ্ছে না। লঞ্চটা ধীরে ধীরে স্লো করে ফেলল। আমরা বললাম কি হয়েছে। বন্ধু আমাকে কাজ সেরেছে। লঞ্চের সামনের দিকে যেতে পারতেছে না। আমরা হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চের সামনের দিকে লঞ্চ মাস্টারের কাছে গেলাম । লস মাস্টার বলল ভাই কুয়াশায় সবাই আটকে গেছে। ডাইন বাম কোনদিগ ঠিক পাচ্ছি না। শুধু শোনা যাচ্ছে ওপাশ থেকে হরেন বাজছে পাশ থেকে হরেন বাজ ছে। মনে হল কাছাকাছি আরো দুই তিনটি লঞ্চ আটকে আছে। তাই তারা যার যার সিগন্যাল চালিয়ে যাচ্ছে। লঞ্চের কক্ষের ভিতর থেকে মহিলা পুরুষ সব বের হয়ে এলো। কি হয়েছে ভাই কি হয়েছে। টিকিট মাস্টার এসে বলল আপনারা ধৈর্য ধরেন লঞ্চ কুয়াশার নদীতে আটকে গেছে। এখন সবাই বলে উঠলো উপায় কি। টিকিট মাস্টার বলল লঞ্চ চালিয়ে রাখতে হবে না হয় ধীরে ধীরে নদীর এক কিনারায় নোঙ্গর করতে হবে। আসার কারণে লাঞ্চ ঘুরতেছে। কোন দিকনির্দেশনা করতে পারতেছিল না। বড় বড় শিব গুলোতে সাধারণত কম কম্পাসের মাধ্যমে দিক নির্ণয় করতে পারে। এইসব ছোট লঞ্চগুলোতে তা থাকেনা। আধা ঘন্টা পর লঞ্চটিআরেক পারেগিয়ে ঠিকগিয়েছিল। ঘন্টার পর ঘন্টা যাইতেছে। কিন্তু কুয়াশা আর শর্তে ছেনা নদী থেকে। আস্তে আস্তে সকাল হয়ে গেল। এর ভিতরে আমরা লঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসে মাটিতে। কারণ বিপদ থাকতে পারে। যদি কোন একটি বড় লঞ্চ এসে আমাদের লঞ্চে ধাক্কা দেয়। তাহলে আমাদের লঞ্চটি ডুবে যেতে পারে। এই ভেবে আমরা লঞ্চ মাস্টারের কথা মত নিচে নেমে যাই। আমরা সবাই গাছ তলায় বসে ছিলাম এমনভাবে কেউ কাউকে দেখতেছেন। সেদিন এতো কুয়াশা ছিল। এখন ধীরে ধীরে আস্তে আস্তে পূর্ব আকাশে সূর্য উঠতে শুরু করল। যখন আলো চতুর্দিক পড়তে শুরু করল। সূর্য দেখার সাথে সাথে আমি যেন আরেকটি সূর্যের আলো দেখতে পাই তেজি। দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার সামনে সারারাত কে বসা ছিল। অথচ কুয়াশার কারণে আমি নিজেকে দেখতে পাইনি। এখন মনে হল সকালের আলো তার চেহারা সূর্যের আলো চাইতেও আলোকিত দেখছি। আমার ভিতরে একটি কম্পন উঠেগেল। আমি যেমন দেখে আর চোখ ফিরিয়ে নিতে পারতেছিনা। সেও আমার দিকে তাকিয়ে ফেল ফেল করে চেয়ে রইল। আমার মনে হল তাকে যেন আমি কোথায় দেখেছি। নাকি স্বপ্নে দেখছি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। আমরা দুজন সামনা সামনি কতক্ষণ বসে ছিলাম অথচ মেয়েটি উচ্চস্বরে কোন কথা বলছিল না। আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম এত সুন্দর মেয়ে হওয়নাকি নাকি। দেখে আমার  কৌতুহল জেগে উঠলো আমি ওকে একটু দার হলাম। এতক্ষন আমি বসাইছিলাম। আমার ভিতরে কেমন যেন লাগতেছিল । আমি হেঁটে তার সামনে গেলাম। মনে মনে স্থির করি কি দিয়ে কথা শুরু করি। হঠাৎ করে চার দোকানদার মামাকে ডাক দিলাম ও মামা মেয়েটি হঠাৎ করে বলল কি চা খাবেন। কারণ আমি আর সে খুব কাছাকাছি এক হাতের মত। মেয়েটি বলে উঠলো তাহলে আমার জন্য এক কাপ ডাক দিয়ে বলুন। কারণটা হলো চ ওয়ালা মামা লঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে। তাই সে জোরে ডাক দিতে পারবে না বিধায় আমার সাহায্য নিল। এই আমি কথার সুযোগ তার সাথে পেয়ে গেলাম। আমি আবার পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম তার সাথে অন্য কিছু। সে বলল তাড়াহুড়া করে লঞ্চে উঠেছি। তখন চা খেতে পারিনি লঞ্চে এসে দুই কাপ খেয়েছি। বিস্কুট  হলে ভালো হয়। আমি বললাম মামা বিস্কুটো লাগবে। আমার বন্ধু এখনো পর্যন্ত ব্যাপারটি খেয়াল করেনি। কারণ সে রাজনীতিতে বসে গেছে অন্যের সাথে। যেহেতু সে ওদিকে ঘুরা তাই সে ব্যাপারটি খেয়াল করেনি এখন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি একা এসেছেন। সে বলল আমি তো হোস্টেলে থেকে  পড়াশোনা করি। তাই আমার সাথে কেউ থাকেনা। এখন কোথায় যাচ্ছিলে। বাড়িতে যাচ্ছিলাম বন্ধের ছুটিতে। বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল যা আমাদের কাজের সাইডে কাছাকাছি প্রাক্তন চেয়ারম্যান এর মেয়ে। আমি বললাম আপনাদের ভাই-বোন কয়জন। সে বলল এক ভাই এক বোন। আপনি কি বড় ‌। আমি বড় আপনার আর এক বোন। সে বলল আমি একা। আমার একটি ভাই আছে ‌। ও ক্লাস ফাইভে পড়ে। কথা বলতে না বলতে চাও চলে আসলো। এমন সময় লঞ্চ মাস্টার বের হয়ে ডাক দিল সবাই লঞ্চে উঠুন। মেজাজটা খুবই গরম হয়ে গেল। শালার মাস্টার ব্যাটা তুই আর এতক্ষণে সময় পেলিনা। সারারাত তো আমাদের বসিয়ে রেখেছিস এখন হঠাৎ করে এলি তাড়াতাড়ি ওঠেন। কথা বলতে গিয়ে চা খেয়ে তাড়াতাড়ি লঞ্চে উঠে গেলাম। এর ভিতরে আমার বন্ধু এর পেয়ে গেল । সে আমাকে ইশারা দিয়ে বলল চালিয়ে জা আমরা দুজন লঞ্চের সিঁড়ি ধরে উঠতে লাগছিলাম। কোন সময় লঞ্চ স্টার দিতে গিয়ে হুট করে একটি শব্দ হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। এরপর যতবারই স্টার্ট দেয়। ততবারই খুট করে বন্ধ হয়ে যায় । এর কারণটাও কেউ না বুঝলেও আমি ব্যাপার টা বুঝেছিলাম যে আর স্টার্ট হচ্ছে না। কারণ শীতের দিনে মোটরসাইকেল প্ল্যাট ঠান্ডা হয়ে গেলে। এইভাবে দুইটা তিনটা পিক দেওয়ার পর যে বন্ধ হয় তা ব্ল্যাক খুলে পরিষ্কার না করা পর্যন্ত। মোটরসাইকেল আর স্টার্ট লয় না আমরা দুজন লঞ্চের ভিতরের কক্ষে  দিকে ঢুকলাম না। কিছুক্ষণ পর লঞ্চের মাস্টার বেরিয়ে এসে বলল ভাই সকল শুনেন। লঞ্চ টি কুয়াশায় ইঞ্জিন ঠান্ডা হয়ে গেছে। শহর থেকে লোক না নিয়ে এলে আর স্টার লওয়া সম্ভব না। আমরা দুজন দুজনের দিকে চেয়ে হাসছিলাম। মনে মনে ভাবতেছি ভালোই হলো লঞ্চ মাস্টার মশাই এসে বলল ভাই আপনারা রাস্তার মাথায় হেঁটে গিয়ে টেম্পুতে উপজেলায় চলে যান। কথা বলার সাথে সাথে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। বন্ধু আমার মুস্তাফিজ কোথায় গেল তাই দেখছি না। আমি আর আমার বন্ধুর ব্যাগ নিয়ে মেয়েটির ব্যাগ সহ তাড়াতাড়ি লঞ্চ থেকে নেমে পড়লাম। এখন আমরা তিনজন হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতে করতে রাস্তার মাথায় চলে এলাম। বন্ধু আমাকে বলল তোরা এক কাজ কর তুই একটা তুই একটা রিক্সা নিয়ে তোরা দুজন চলে যা । কারন টেম্পু আছে একটা তাতে সবার জায়গায় হবে না। আমার এই বন্ধুটা সব সময় আমার মনের কথা বুঝে। বন্ধু দুটো ব্যাগ আমার ওআর ব্যাগ নিয়ে সবার সাথে টেম্পুতে উঠে গেল। শীতের সকাল খুবই ভালো লাগছিল। আমরা দুজন রিকশা না পেয়ে হাটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে এগুতে চললাম। এতক্ষণে তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম না যে আপনার নামটা কি। সে বলে উঠলো কুসুম। আমি বললাম খুব সুন্দর নাম তো। তারপরে আমার নামটাকে বললাম। আমি এখানে কেন এসেছি সেই পরিচয় দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে দুজনের দুজনের পরিচয় নেওয়া হয়ে গেল। মনে হল যে সকালটা যদি না গড়িয়ে দুপুরের দিকে যেতে তাহলে খুবই ভালো লাগতো। সকালের মন খুবই ভালো থাকে।

Comments

    Please login to post comment. Login