কবুল বলার আগ মুহূর্তে আসিফ ভাইয়া উপস্থিত সকলের সামনে বলে উঠে,,
আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। কারণ আমি একজন কে ভালোবাসি।
আসিফ ভাইয়ার কথা শুনে উপস্থিত থাকা সবাই অবাক হয়ে যায়। সাথে আমি ও। কারণ আসিফ ভাইয়ার যে ২ টা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো তাদের সাথে অনেক আগেই বেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবার কাকে ভালোবাসে আসিফ ভাইয়া।
রুমা আন্টি মানে আসিফ ভাইয়ার আম্মুর কথায় আমার ভাবনার সুতা টান পড়ে।
তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস মানে ? কাকে ভালোবাসিস তুই ?
তাকে তুমি চিনো আম্মু।
কে সেই ?
তোমার বোনের মেয়ে রাইসা।
আসিফ ভাইয়ার মুখে আমার নাম শুনে আমি তো অবাক। মনে হচ্ছে এই মাত্র আকাশ থেকে পড়লাম। আসিফ ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে কথাটা শুনে কেমন জানি ভালো লাগলো আমার। কিন্তু কথাটা শুনে যতটা না খুশি হয়েছি তার থেকে বেশি ভয় পেয়েছি। সবাই যদি আমাকে ওই বদমেজাজি, রাগী, বদমাইশ টার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে তো আমি শেষ। এমনিতেই আসিফ ভাইয়া কে অনেক ভয় পায়। বিয়ে হয়ে গেলে তো সারা জীবন ওই ফাজিল টার সাথে থাকতে হবে। কথাটা ভাবতেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আন্টির কথায় আবার ও আমার ভাবনার সুতা টান পড়লো।
তুই রাইসা কে ভালোবাসিস মানে ?
হম আম্মু আমি ও কে ভালোবাসি। শুধু আমি না রাইসা ও আমাকে ভালোবাসে।
আসিফ ভাইয়া এই সব কি বলছে ? আমি তো ওই ফাজিল টা কে ভালোবাসি না। আসিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে কি জানি ইশারা করছে। কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আসিফ ভাইয়ার করা ইশারা বুঝতে চেষ্টা করছি আসিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে। আসিফ ভাইয়ার ইশারা বুঝে উঠার আগেই আমার আম্মু এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। আর বলে,
আসিফ যা বলছে তা কি সত্যি ?
আমি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি এখন কি বলবো যদি বলি হ্যাঁ তাহলে দুই টা থাপ্পড় অনাহাসেই আমার গালে পড়বে। আর যদি বলি না তাহলে আসিফ ভাইয়া আমাকে মেরেই ফেলবে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে আম্মু ঠাস করে একটা চড় মেরে বলে,
কথা বলছিস না কেনো ?
আসলেই আম্মু,,
বাকিটুকু উচ্চারণ করার আগে আরো একটা থাপ্পড় পড়লো আমার গালে। আমি গালে হাত দিয়ে আসিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আগের মতোই অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে তবে এবার ওই ফাজিল টা কে বেশি হিংস্র লাগছে আগের তুলনায়। আমি আর তাকাতে না পেরে চোখ নামিয়ে ফেলি।
আন্টি আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
তুই কি আসিফ কে ভালোবাসিস ?
হম আন্টি।
হায় আল্লাহ এটা আমি কি বলে ফেললাম। মুখ ফসকে এটা কি বের হয়ে গেলো। আসিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আসিফ ভাইয়া এই বার মুচকি হাসছে। মুখে বিজয়ের হাঁসি।
আমার মুখে হ্যাঁ কথাটা শুনে আন্টি পাশে থাকা সোফায় বসে পড়ে। আন্টি হয়তো ভাবছে যে এখন কি করবে। আসিফ ভাইয়ার হবু বৌ রাইধা কে এখন কি বলবে। আন্টির পাশে গিয়ে মামনি বসে। তাঁর পর আন্টি কে উদ্দেশ্য করে বলে,
এখন কি করবেন আপু ? আসিফ আর রাইসা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে,,
বাকিটুকু উচ্চারণ করতে পারে না মামনি তার আগেই রাইধার বাবা বলে উঠে,,
এখানে এইসব কি হচ্ছে ? এটা কোন ধরনের নাটক ? আমার মেয়ে কে কি সস্তা মনে হয় যে বিয়ের আসরে এসে বিয়ে ভেঙে দিবে। যাই হোক না কেন আসিফ আমার মেয়ে কে বিয়ে করতেই হবে।
রাইধার বাবার কথা শেষ হতে না হতেই রাইধা বলে উঠে,,
না বাবা আমি এখন আর আসিফ কে বিয়ে করবো না ? জোর করে বিয়ে করা গেলে ও ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আসিফ রাইসা কে ভালোবাসে। আমি চাই আসিফের সাথে রাইসার বিয়ে হোক।
কিন্তু তোর কি হবে মা।
আসিফ আমার ভাগ্য নেয়। যে আমার ভাগ্য আছে সেই ঠিক সময়ে আমার জীবনে চলে আসবে।
রাইধা তার বাবা কে কথাটা বলে রুমা আন্টির দিকে এগিয়ে এসে বলে,,
আন্টি আপনি চাইলে রাইসা আর আসিফের বিয়ে টা দিয়ে দিতে পারেন।
কিন্তু,,
কোন কিন্তু নয় আন্টি।
রাইধার কথা শুনে রাজিব মামা আর মামনি আম্মু আর আন্টি কে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে ফেলে। ফলে আমার আর আসিফ ভাইয়ার বিয়ে টা হয়ে যায়। মাথা নিচু করে আসিফ ভাইয়ার পাশে বসে আছি। আর ভাবছি মূহুর্তের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেলো। এখন সারা জীবন আমাকে এই ফাজিল বদমেজাজি রাগী বদমাইশ ছেলে টার সাথে থাকতে হবে।
আমাকে মনে মনে গালি দিচ্ছিস কেনো।
আসিফ ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম। আমি যে সত্যি সত্যি তাকে গালি দিচ্ছি তা কেমনে জানলো।
রাইধা কে আমার পাশে বসে থাকতে দেখে একটা মাঝ বয়সি মহিলা এগিয়ে এসে রাইধার থুতনি ধরে বলে।
মাশাআল্লাহ তুমি তো দেখতে ভারি মিষ্টি। এই কথা বলে মহিলা টা রাইদার বাবা কে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
আপনি কিছু মনে না করলে আপনার মেয়ে রাইধা কে আমার ছেলের বৌ করতে পারি।
মহিলার মুখে এমন কথা শুনে রাইধার বাবা ছেলের বায়ুডাটা চেক করে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। তাঁর পর রাইধা আর শুভর বিয়ে হয়ে যায়। স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে নতুন বিয়ে হওয়া দুইটা কাপল। হঠাৎ রাইদা আসিফের দিকে ঝুঁকি বলে,,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আসিফ। আপনার জন্য আমি আমার ভালোবাসা কে আপন করে পেলাম। আপনার এই রিন আমি কখনোই ভুলবো না।
রাইদার কথায় আসিফ শুধু মুসকি হাসে। অপরদিকে রাইসা বোকার মতো একবার আসিফের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার রাইদার দিকে তাকাচ্ছে। রাইসার এমন কান্ড দেখে আসিফ মুচকি হাসে। আসিফ কে মুচকি হাসতে দেখে রাইধা রাইসার হাত ধরে বলে,
রাইসা তোমাকে ও thnx.
রাইসা এখনো বোকার মতো রাইধার দিকে তাকিয়ে আছে কারণ কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। একটা ঘোরের মধ্যে আছে রাইসা।
দেখতে দেখতে আসিফ রাইসা, শুভ রাইধা। চার জনকেই বিদায় দেওয়া হয়। শুভ রাইধা কে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে যায়। আর আসিফ রাইসা কে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে যায়।
&&
বাসর ঘরে বসে আছে রাইসা। হাত পা কাঁপছে রাইসার। কারণ দ্বিতীয় বারের মতো রাইসা আসিফের রুমে এসেছে এমন কি আসিফের বেডে বসে আছে। আসিফ কাউকে নিজের রুমে যেতে দেয় না। আসিফ অতিরিক্ত রাগী হওয়ায় আসিফের রুমে কেউ ভয়ে ও যেতো না। আগে একবার রাইসা আসিফের রুমে এসে আসিফের বেডে শুয়েছিলো।সেইবার আসিফ রাইসা কে অনেক জোরে দুই টা থাপ্পড় দিয়ে ছিলো। সেই যে থাপ্পড় খেয়ে রাইসা আসিফের রুম থেকে বের হয়েছে আর কখনো আসিফের রুমে যায়নি। আগের কথা ভাবতেই ভয়ে রাইসার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। দরজার শব্দ পেয়ে রাইসা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আসিফ এসেছে। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় আসিফ যা দেখে রাইসার ভয় আরো বেড়ে যায়। আসিফ রাইসার দিকে এগিয়ে এসে রাইসার দিকে ঝুঁকে বলে
রুমে এসি চলছে তার পর ও এতো ঘামছিস কেনো?
তোমাকে দেখে?
আমি কি সূর্য না কি?
সূর্যের চেয়ে তো কোন অংশে কম না। সব সময় সূর্যের মতো গরম হয়ে থাকো।
কি বললি?
কিছু না। তুমি। তুমি আমার কাছ থেকে দূরে যাও প্লীজ।
রাইসার কথা মতো আসিফ সরে আসে। আর রাইসা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়
রাইসা শুন?এভাবে বসি থাকবি না কি এই সব লেহেঙ্গা পেহেঙ্গা চেন্জ করবি
ও হে যাচ্ছি
এই কথা বলে রাইসা ওয়াসরুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর চেন্জ করে বের হয়ে আসে।
পর্ব : ১
#তুই_শুধু_আমার
#লেখক_জহিরুল_ইসলাম_আসিফ
#চলবে
( ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ )