নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু-তে অবস্থিত কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন। এটি নেপালের প্রাচীন রাজাদের রাজপ্রাসাদ চত্বর হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয়ভাবে “হনুমান ঢোকা দরবার স্কয়ার” নামেও বিখ্যাত।
প্রাচীনকালে কাঠমান্ডু ছিল মল্ল রাজাদের রাজধানী। ১২শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যে মল্ল রাজারা কাঠমান্ডু, ভক্তপুর ও পাটনের দরবার স্কয়ার নির্মাণ করেন, যা তিনটি পৃথক রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার ছিল সেই সময়ের প্রশাসনিক ও আনুষ্ঠানিক কেন্দ্র।এখানেই রাজাদের অভিষেক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব এবং গুরুত্বপূর্ণ সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হতো। মল্ল রাজাদের পর শাহ রাজবংশ ক্ষমতাগ্রহণ করলেও, দরবার স্কয়ার রাজকীয় ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে বহাল থাকে।
দরবার স্কয়ারের চারপাশে অসংখ্য স্থাপনা, মন্দির ও প্রাসাদ রয়েছে, যা নেপালের ঐতিহ্যবাহী নিউয়ারি স্থাপত্যকলার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। নেওয়ারি স্থাপত্য একটি স্থাপত্যশৈলী যা প্যাগোডা-শৈলীর মন্দির, পোড়ামাটির ইট এবং জটিল কাঠের কারুকার্যের জন্য পরিচিত।
এখানে অবস্থিত হনুমান ঢোকা প্রাসাদ, তালেজু মন্দির, কুমারী ঘর, কাসথমণ্ডপ, জগন্নাথ মন্দির, শিব-পর্বত মন্দির, ত্রিভুবন জাদুঘর ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী।
১৯৭৯ সালে ইউনেস্কো কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারকে UNESCO World Heritage Site হিসেবে ঘোষণা করে। এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মিশ্র প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। একদিকে শিব, বিষ্ণু ও গণেশের মন্দির, অন্যদিকে বৌদ্ধ স্তূপ ও প্রার্থনাচক্র, সবকিছুই নেপালের ধর্মীয় সহনশীলতার উদাহরণ।
তবে ২০১৫ সালে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পে দরবার স্কয়ারের বহু প্রাচীন স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর থেকে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং স্থানীয় কারিগরদের সহযোগিতায় পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমচলছে।
কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ার নেপালের ঐতিহ্যের প্রতীক। এমন এক জায়গা যেখানে ইতিহাস কথা বলে, যেখানে প্রতিটি ইট ও খোদাই গৌরবময় অতীতের গল্প বলে যায়।
