Posts

উপন্যাস

পাবার মতো চাইলে পাওয়া যায়/ ২য় অধ্যায়

October 23, 2025

Kishore Karunik

Original Author কিশোর কারুণিক

203
View

মনের অবস্থা ভালো না। বাড়ি থেকে চিঠি এসেছে যতো তাড়াতাড়ি পারি বাড়িতে যেন চলে আসি; যতই কাজ থাকুক। এখন বিয়ে করবো না মনোস্থির করেছিলাম। চিঠি পড়ে যা বুঝলাম, বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। চিঠি পাওয়া মাত্র চলে আসবে-মা চিঠিতে লিখেছে। দু’-তিন দিনের পোশাক ব্যাগে নিয়ে রওনা দিয়েছি। শেভ করার সময় পাইনি। মুখটা হয়তো খুবই বিষণ্ন আর মলিন দেখাচ্ছে!
‘এখানে ট্রেন তিনঘণ্টা অপেক্ষা করবে, তারপর ছাড়বে।’ আমার বামপাশে বসা লোকটি কোথায় থেকে যেন শুনে এসে আরেকজনকে বললো।
‘শ্রাবস্তী, ট্রেনতো আরো ২/৩ ঘণ্টা এখানে দাঁড়াবে, আমার বাড়ি তো আর বেশি দূরে নয় আমি বরং অন্যকিছুতে চড়ে চলে যাই। তুমি বাড়ি গিয়ে ফোন দিও।’
হয়তো সেই লোকটি। কী জানি শ্রাবস্তীর ঘনিষ্ঠ কেউ কি-না!
শ্রাবস্তী ঘাড় নেড়ে বললো, ‘আপনি বাড়িতে পৌঁছে মোবাইল করবেন। অনুষ্ঠানে কিন্তু আপনাকে আসতে হবে!’
‘ঠিক আছে, মন খারাপ করো না; যা হবার তা-তো হবেই। তোমার মোবাইল নাম্বর যেন কত?’
শ্রাবস্তী নিজের মোবাইল নাম্বর বললো। মোবাইলে নাম্বর তুলে নিয়ে লোকটি বিদায় নিলো।
মোবাইল নাম্বরটা একবার শুনেই আমার যেন মুখস্ত হয়ে গেলো। দু’-একজন করে লোক ট্রেন থেকে নিচে নামছে। আমিও নামলাম। দু’-একটা হকারও দেখছি। ওরা কি জানতো এখানে ট্রেন দাঁড়াবে ? ট্রেনের ভেতর থাকা হকাররা নিচে নেমে জানালার পাশ দিয়ে ঘোরাফিরা করছে!
‘এই কলা।’
খুবই ক্ষীন শব্দ বের হলো শ্রাবস্তীর কণ্ঠ থেকে। বোধ হয় কলাওয়ালা শুনতে পায়নি। আমি নিচে নেমে শ্রাবস্তীর সামনেই দাঁড়িয়েছিলাম। কেন যেন মনে হচ্ছে কলাওয়ালাকে ডেকে দিই। শ্রাবস্তী আমার দিকে তাকালো। দু’জনের চোখে চোখ পড়লো। কী যেন বললো, মায়াবী চোখের ইশারায়। মুখ ফিরিয়ে নিলো, কী কারণে বুঝতে পারলাম না। এর আগে আমার দিকে তাকিয়েছে কি-না তাইবা কে জানে!
মেয়েদের প্রতি আমার তেমন কৌতূহল ছিলো না। তবু এখন শ্রাবস্তীর প্রতি কৌতূহল জাগছে। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পারছি।
‘এই যে কলাওয়ালা, এই-যে।’
শ্রাবস্তী আবার কলাওয়ালাকে ডাকলো। কলাওয়ালা হয়তো পেছনের ডাক শুনতে পায়নি। আমি বাধ্য হয়েই কলাওয়ালাকে একটু উচ্চস্বরে ডাকলাম।
‘এই যে-কলাওয়ালা ভাই, এই-যে।’
কলাওয়ালা আমার দিকে তাকালো। ইশারা করে দেখিয়ে দিলাম শ্রাবস্তীকে।
মনের ভেতর কেমন একটা ভাব জাগলো। কলাওয়ালা পেছন ফিরে শ্রাবস্তীর কাছে গেলো। দাম কষাকষি হচ্ছে কলওয়ালার সাথে শ্রাবস্তীর। কলাওয়ালা আমার দিকে তাকাচ্ছে। ও-কি আমাকে শ্রাবস্তীর আত্মীয় বলে ভাবছে ? শ্রাবস্তীর মনের অজান্তেই যেন আমার দিকে তাকাচ্ছে। চোখে চোখ পড়লে শ্রাবস্তী মুখ কলার ঝুড়ির পানে নিচু করে নিলো। আমি কলাওয়ালার কাছে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কলা কত করে হালি ?’
‘বিশ টাকা।’
‘দাম বেশি বলা হচ্ছে, দশ টাকা করে হবে ?’
‘জ্বি-না।’
শ্রাবস্তী বললো, ‘দশ টাকা করে দিলে আমি চারহালি নিতাম।’ তবে কী, আমি দাম বলার আগে শ্রাবস্তীও কলা দশ টাকা হালি বলেছে!
‘না-আপা-দশ টাকা করে দিতে পারলে কথা খরচ করতাম না।’
শ্রাবস্তী বললো, ‘ঠিক আছে দিন।’
কলাওয়ালা শ্রাবস্তীর হাতে চার হালি কলা দিলো। বোকার মতো দাঁড়িয়ে কী করবো, আমিও সম্মান বাঁচাতে একহালি কলা কিনলাম।
শ্রাবস্তী ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকার নোট বের করে ‘দাম নিন’ ব’লে কলাওয়ালার দিকে নোটটা বাড়িয়ে দিলো।
কলাওয়ালা বললো, ‘ভাঙতি যে নেই।’
আমি মানিব্যাগ বের করতেই কলাওয়ালা বললো, ‘ভাই টাকাটা আপনার কাছে ভাঙতি হবে ?’
মানিব্যাগ হাতড়িয়ে বললাম, ‘ না-হবে না।’
শ্রাবস্তী ও কলাওয়ালা যেন বিপদে পড়লো। আশে-পাশে কোনো দোকানও নেই। আমি একশো টাকার একটা নোট বের করে কলাওয়ালাকে দিলাম। শ্রাবস্তী সংকোচবোধ করছিলো। তাই বললাম, ‘আমি তো আপনার পাশেই বসে আছি। পরে ভাঙতি করে আমাকে দিয়ে দেবেন।’
এবার শ্রবস্তী কিছু বললো না। কলাওয়ালা চলে গেলো। একটু আড়াল হয়ে কলা চারটি খাওয়া শেষ করলাম। শ্রাবস্তীরও বুঝি খুব ক্ষিধে পেয়েছিলো। একের পর এক কলার খোসা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলছিলো। পকেট থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিলাম।
ভালোই লাগছে দিকে-ওদিক তাকাতে। একটু সামনেই বড়ো একটা বটগাছ। দূরে দেখা যাচ্ছে কয়েকটা মাটির ঘর। মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে শ্রাবস্তীর মোবাইল নাম্বরে ডিজিট টিপলাম। মোবাইল কানে ধরতেই মিষ্টি সুন্দর কণ্ঠস্বর শুনলাম, ‘হ্যালো।’ 
আমি কিছুই বললাম না। লাইন কেটে দিলাম। আমি এতোদিন জানতাম আমার স্মরণশক্তি খুব কম। এখন মনে হচ্ছে আমার স্মরণ শক্তি বেশ। ঐ লোকটিকে শ্রাবস্তী একবার ওর মোবাইল নাম্বরটা বলায় লোকটি মোবাইলে তুলে নিয়েছিলো। আমি পাশ থেকে শুনেছিলাম। নাম্বরটা ঠিক মনে আছে কি না পরীক্ষা করতেই সুন্দর শব্দ শুনলাম, ‘হ্যালো’। যেন কতদিনের চেনা কণ্ঠস্বর। ক্রমান্বয়ে শ্রাবস্তীর প্রতি কি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি ? আমি কি ওর প্রেমে আকৃষ্ট’ হচ্ছি ? ছিঃ ছিঃ কী সব আবোল তাবোল ভাবছি। ও আমার প্রতি ভদ্রতা দেখিয়েছে, আমিও একটু ভদ্রতা দেখিয়েছে এই আর কি! মোবাইল করা কি ঠিক হয়েছে ? আমি তো দেখলাম নাম্বরটা ঠিক মনে আছে কি না। আচ্ছা, মোবাইল যে রিসিভ করলো, ও-কি শ্রাবস্তীই! হঠাৎ মোবাইলে রিং বেজে উঠলো মনে হলো শ্রাবস্তী রিং ব্যাক করেছে। আমি যখন মোবাইল দিয়েছিলাম তখন আমার মোবাইল নম্বরটা ওর মোবাইলে উঠেছিলো।

Comments

    Please login to post comment. Login