Posts

উপন্যাস

পাবার মতো চাইলে পাওয়া যায়/ ৩য় পর্ব

October 24, 2025

Kishore Karunik

Original Author কিশোর কারুণিক

184
View

মোবাইল কানের কাছে ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই ও পাশ থেকে লাইন কেটে দিলো।  হ্যাঁ আমি শিওর, যে এটা শ্রাবস্তীর নাম্বর। অনেক যাত্রীরা নিচে নেমে এদিক-ওদিকে ঘোরাফেরা করছে। এই কামরায় অর্থাৎ ‘জ’ তে শুধু শ্রাবস্তী বসে আছে। আমি উঠলাম কামড়ায়। ওর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে  রিং দিলাম, শ্রাবস্তী মোবাইল রিসিভ করার জন্য মোবাইলটি কানের কাছে ধরলো।
‘হ্যালো।’
হ্যাঁ, সেই কণ্ঠস্বর, আবার লাইন কেটে দিলাম। স্পষ্ট দেখতে পেলাম শ্রাবস্তী একটু বিরক্ত হলো। রাগলে শ্রাবস্তীকে তো ভালোইলাগে। মোবাইলটা পকেটের ভেতর ঢুকিয়ে আমার ব্যাগ নেবার ছলনায় শ্রাবস্তীর কাছে গেলাম।
‘একাই বসে আছেন ?’
‘হ্যাঁ বসেন।’
‘কতদূর যাবেন আপনি?’
ক্ষীণ শব্দে কী যেন বললো বুঝতে পারলাম না। আমি শ্রাবস্তীর সামনের সিটে বসলাম। এবার জড়তার কোনো ভান না করে শ্রাবস্তীর সুন্দর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। লজ্জায় ও আমার দিকে বেশিক্ষণ তাকালো না। আসলে খুবই সুন্দর মুখের গঠন, মায়াবী দু’টি চোখ ওর। আমি যদি কবি হতাম, কবিতা লিখে শ্রাবস্তীকে উপহার দিতাম। কী যেন চিন্তা করছে শ্রাবস্তী। আমার ব্যাগটা বাংকার থেকে নামাতে উঠে দাঁড়ালাম। শ্রাবস্তীও সিট থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমাদের শরীরের দূরত্ব পাঁচ-ছয় ইঞ্চি হবে। শরীরের  ভেতর কেন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো।
শ্রাবস্তী বললো, ‘প্লিজ, আমার ব্যাগটা একটু নামিয়ে দেবেন ?’
আমার ব্যাগ নামিয়ে সিটের উপর রেখে শ্রাবস্তীর ব্যাগটা নামিয়ে দিলাম। একা বললে ভুল হবে, দু’জনে মিলে নামালাম। আসলে শ্রাবস্তীর রুচি আছে। আচ্ছা, আমি যে ওর সম্মন্ধে এই অল্প সময়ে এতো কৌতূহলী হয়ে পড়েছি, আমার সম্পর্কে ওর কী ধারণা হতে পারে ? নিশ্চয় খারাপ না। আর খারাপ হলে শ্রাবস্তী এমনভাবে আমার সাথে মিশতো না। ব্যাগ পায়ের কাছে রেখে শ্রাবস্তী সিটে বসে বললো, ‘আপনি কি চলে--’ 
কথায় যেন কেমন একটা মায়াবী টান। হয়তো আমি চলে গেলে শ্রাবস্তীর একটু অসুবিধা হবে। অনেক ছেলে-মেয়ের সাথে আমার উঠা বসা আছে। কিন্তু শ্রাবস্তীকে সবার থেকে যেন একটু আলাদা মনে হচ্ছে।
   একটু মুচকি হেসে ওর পানে তাকিয়ে বললাম, ‘না, বাড়িতে যেতে হলে এই ট্রেনেই যেতে হবে।’
   ‘তাই না কি? তবে তো ভালোই হলো।’
একটু খুশি খুশি যেন শ্রাবস্তী। আমিও খুশি খোলামেলা ব্যবহারে। একটু কৌতূহলীভাবে বললাম, ‘ভালো মানে ?’
একটু থতমতভাবে শ্রাবস্তী বললো, ‘না-মানে একা থাকতে হবে না তাই।’
আমি কিছু বললাম না। সিটে বসে পড়লাম। মেয়েরা অপরিচিত কোনো ছেলের সাথে এই অল্প সময়ে খোলা মনের পরিচয় দিতে পারে-এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। একজনকে দিয়ে দশজনের সম্পর্কে ধারণা করা ঠিক নয়। তবে এইটুকু বুঝতে পারছি আমাকে হয়তো বিশ্বাস করেছে শ্রাবস্তী। আমি সাথে থাকলে ওর একাকীত্ব কিছুটা ঘুচবে! আমি যদি শ্রাবস্তীর সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করি, তাহরে কেমন হয়! আশে-পাশে তেমন কোনো লোকজনও নেই। ইঞ্জিনের ক্রটির জন্য ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হবে। কাছে ধারে যাদের গন্তব্য তারা অনেকেই চলে যাচ্ছে। শরীরে কেমন একটা ভাব জাগছে। কোনো পুরুষকে আকর্ষণ করার মতো সমস্ত গুণাবলী শ্রাবস্তীর আছে। ছিঃ ছিঃ মনে কী সব জাগছে। চুপচাপ থাকা ঠিক হবে না। আমি যেমন ভাবছি, শ্রাবস্তী হয়তো এরকমই কিছু ভাবছে। এক যুবক এক যুবতী সামনা-সামনি বসে আছে, যাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই; মন কিছুটা বেসামাল হতেই পারে।
    স্টেশন থেকে ক্রয় করা আজকের পত্রিকাটি বের করে পড়তে লাগলাম। শ্রাবস্তী হয়তো আমার সাথে আর কথা বলবে না। বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেলো আমাদের মাঝে কোনো কথা হচ্ছে না। পত্রিকার এক পৃষ্টা কি শ্রাবস্তীকে পড়তে দেবো! পত্রিকার পৃষ্টার এক কোণা নামিয়েই দেখি, শ্রাবস্তী কী একটা বইয়ের পৃষ্টা উল্টাচ্ছে। এতোক্ষণে ওর ব্যাগ থেকে বই বের করেছে ও। পত্রিকা পড়তে আর ইচ্ছা হচ্ছে না । শ্রাবস্তী কী ভাবছে, আমি ভাব   দেখাচ্ছি? একটু নড়ে চড়ে বসলো শ্রাবস্তী। ওর হাতের বইটা কবি জীবনানন্দ দাশের। হয়তো খোলা বই বন্ধ করার ভান করে বইয়ের লেখকের নাম দেখালো আমাকে। বই ফেরিওয়ালার কাছে জীবনানন্দ দাশের বই চেয়েছিলাম। শ্রাবস্তীকে তো চালাক মনে হচ্ছে! ও কীভাবে জানলো বইটা আমার প্রয়োজন ? তবে কি আমার প্রয়োজনের সাথে ওর প্রয়োজনের মিল আছে! শ্রাবস্তী সাহিত্যিক নয়তো! তবে কি, বই পড়ার নেশা আছে ? না হলে ওর কাছে বই কেন! শ্রাবস্তী কি বইটা পড়তে দেবে আমাকে ? শ্রাবস্তী মায়াবী চাহনিতে আমার পানে তাকালো, চোখে-চোখ পড়ে গেলে বুকের  ভেতর কেমন আগুন জ্বলে উঠলো। না-এখানে বসা যাবে না। শ্রাবস্তীকে আমি বুঝতে পারছি না।
   কী জানি, কী আছে ওর মনে! ২৪/২৫ শীত গ্রীষ্ম পার করে এসেছি, কোনো বদনাম নেই। কারোর সাথে আমার খারাপ সম্পর্কও নেই। আমি সবার কাছে যেন আদরের।
 নিজেকে নিজের ভেতর আবদ্ধ রেখেছি। একটু হালকা স্বভাবের কোনো ছেলে শ্রাবস্তীর সাথে হয়তো আমার মতো আচরণ করতো না। এমনিতে শ্রাবস্তী সুন্দরী। আর ও যে পোশাক পরিধান করেছে, তাতে যে কোনো পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। আমিও এর ব্যতিক্রম হলাম না। তবে আমি কি সেরকম হালকা স্বভাবের ? আসলে এমন পরিস্থিতি কেন যে হলো!
    পত্রিকার কাগজ ভাঁজ করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে সিট থেকে উঠে দাঁড়াতেই কৌতূহলী দৃষ্টিতে শ্রাবস্তী একশো টাকার নোটটা আমার দিকে বাড়িয়ে বললো, ‘আপনার টাকাটা!’
    ‘আমার কাছে ভাঙতি নেই তো।’
    ‘আপনি তো চলে যাচ্ছেন, টাকাটা ভাঙিয়ে নিন।’
    ‘কই, যাচ্ছি নাতো। ব্যাগটা শুধু গুছিয়ে রাখলাম।’
    ‘তাই, আমি মনে করেছি, আপনি চলে যাচ্ছেন।’
হ্যাঁ শ্রাবস্তী ঠিকই ভেবেছে, চলে যেতে চেয়েও পারলাম না। যাদুজালে আমাকে যেন আটকিয়ে ফেলেছে! আমি আবার সিটে বসে পড়লাম।
আমি বললাম, ‘আপনি কি একাই ?’
 

Comments

    Please login to post comment. Login