Posts

উপন্যাস

ক্যাম্পাস-প্রেম,পর্ব৫

October 25, 2025

Humayun Kabir

270
View

  ক্যাম্পাস- প্রেম (পর্ব৫)

হুমায়ূন কবীর 

যৌ চলে যাবে। এখনই কথার খই ফোটাতে হবে। অথচ আমি নির্বাক এক মূর্তি।  কোনরকম উচ্চারণ করলাম - রাশমিন কেমন আছো? পরীক্ষা কেমন হয়েছে? 

কথাগুলো বলেই বুকের ভেতর ধড়ফড় করতে লাগলো। 

রাশমিন - ভালো। 

সংক্ষিপ্ত অথচ কত মোলায়েম সরেলা মিষ্টি উচ্চারণ। 

এরপর আমি আর কি বলি?কথারা যেন  কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া আসামি।  তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেলাম, "তৌফিককে খুঁজছ? এইতো সে এখানে ছিল, এইমাত্র -দাঁড়াও দেখছি। "

রাশমিন- আমি আপনাকে খুঁজছি।

 -আমাকে?

   আমি যেন গাছ থেকে না আকাশ থেকে পড়লাম। এই তিলোত্তমার আমার মত শত ছিন্নের কাছে  কী প্রয়োজন থাকতে পারে? তাও আবার দ্বিতীয়বার?  প্রথমবারেই যদি সে আমার রাজনৈতিক  পরিচয়টা পেয়ে থাকে , তবে দ্বিতীয়বার দেখা করতে আসা কথা না। এতটা আমি আশা করিনি।  আমার দৌড়   ছিল বড়জোর দেখা  এবং চোখাচোখি। দূর থেকে রূপের  সুধা পান করে পরিতৃপ্ত হওয়া।  ব্যাশ, এ পর্যন্তই। কিন্তু এ যে দেখছি ধ্রুব সত্যের গালে চপেটাঘাত। সে আর  কাউকে নয়, আমাকেই চাই।  চাইতেও পারে।আমি নিজেকে  ভাগ্যের হাতে সঁপে  দিলাম। কথাই বলে না মুক্তার হার। 

কথাটা তো আর এমনি এমনি আসেনি ঠিক এইরকমই কোন পরিস্থিতি থেকেই এসেছে। যাক মালা  যখন নিজেই এখন কন্ঠে আসতে চায় তবে কণ্ঠের আর দোষ কি?  কি আকাশ কি আকাশ কুসুম কল্পনা। 

এখন আমার দুহাত ভরা বাদাম। বললাম - বাদাম খাও। 

- আমি বাদাম খাই না। 

প্রথম প্রস্তাব এবং প্রত্যাখ্যান। মনের জোয়ারে কিছুটা ভাটার টান পড়লো।  সে আমাকে খুঁজছে অথচ এড়িয়েওও যাচ্ছে। কি দরকার এতসব ভেবে। এমনও তো হতে পারে, রাশমিন  বাদাম খায় না। তাছাড়া সেতো বোরকা পরা।বাদাম  খেতে হলে মুখের  বোরকা সরাতে হবে। সম্ভবত সে এই ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না। যত যাই হোক না কেন সে তো আমাকেই খুঁজছে। তো?

বললাম, কিছু বলবে? 

- একটু বসব।

- চলো। 

আমি চাচ্ছি ক্যাম্পাসের পুরাতন সাইন্স বিল্ডিং এর পেছনে বসতে। ওখানে পরিবেশটা বেশ মনোরম। বিল্ডিং এর পেছনে একটা সুন্দর সবুজ বাগান।  তারপর পুকুরের টলটলি পানি।  ওপারে আমাদের হোস্টেল। দারুন একটা পরিবেশ। রোমিও জুলিয়েটরা  সব জোড়ায় জোড়ায় এখানে বসে। এই হতভাগার কপালে কখনো রোমিও হওয়া হয়ে ওঠেনি। সায়েন্স বিল্ডিং  এর পেছনে বসেছি কোন রাজনৈতিক আড্ডায়,  গ্রুপিং এর তুমুল  আলোচনায়, কোথাও কোন কমিটি গঠন করতে হবে,  অথবা প্রতিপক্ষের কর্মকাণ্ডের উপর সমালোচনার তুমুল ঝড় বয়ে দিতে। কিন্তু  নরম সুরে কোমল কথাগুলি একটি একটি পাপড়ি মিলে হবার সুযোগ কখনো পায়নি। কেন জানিনা এমন হয়।আজ বুঝি  ব্যতিক্রম কিছু হতে চলেছে। 

রাশমিন বলল, চলেন ওইখানে বসি।

সে আমার দলীয় টেন্টকে নির্দেশ করলো। এতে আমার মনটা শুধু মরেই গেল না কাফন মোড়া হয়ে কবরে নেমে গেল। যাক  তবু মন্দের ভালো। এই ভালো এবং মন্দের মাঝে মন্দটাই  সর্বাধিক।

 বিপদের আশঙ্কা আছে।দলীয় টেন্টে  যাওয়া মানে,  আমার দলীয়  পরিচয় উন্মোচিত হওয়া। দলীয় পরিচয় উন্মোচিত হওয়া মানে, সবকিছু অংকুরেই বিনষ্ট হওয়া। আমার  মনের ভেতর কেবল হতাশা  তার ফ্যাকাসে রূপ প্রকট  থেকে প্রকটতর করে তুলছে।  যেটুকু মেশার সুযোগ পেলাম তা আজই হয়তো শেষ হয়ে যাবে। 

Comments

    Please login to post comment. Login