(বড় মামার বিয়ের খন্ড তিন শুরু)নৌকা এসে নানা বাড়ির ঘাটে লাগালো। খবর শুনে বাড়ির সবাই দৌড়ে চলে আসলো। ছোট খালা খালাতো বোনেরা খালাতো ভাইরা অন্যান্য বাড়ির লোকজনও সবাই সুখী হলো বড় ফুপি এসেছে। হবে হবে বিয়ের বাজনা হবে। কথা বলতে বলতেই বাড়ির ভিতর থেকে বিয়ের বাজনা শুরু হয়ে গেল। ব্যান্ড পার্টি বাড়ির ভিতরে বসে বিয়ের বাজনা শুরু করে দিল। শব্দ শুনেই আমি আমার ছোট বন্ধু তো নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়লাম। একে একে সেজো মামা বাবা মা সবাই নৌকা থেকে উঠে আসলো। নানী ধীরে ধীরে নৌকার দিকে চলে আসতেছিল। আমরা সবাই নানিকে পা ধরে সালাম দিলাম। নানী বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আর আমাকে কোলে করে নিল। কারণ নানী আমাকে ভালোবাসতো বেশি। আমি নাকি ছোটবেলায় নানির কাছেই বেশি থাকতাম। খালপাড় থেকে নানির বাড়ির ঘর মোটামুটি একটু দূরত্ব ছিল। তাই আমাদের হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে হল। বাড়ির ভিতরে ঢোকার পর আবার ব্যান্ড পার্টি বিয়ের বাজনা বাজাতে শুরু করল। তখনকার গ্রামের ঐতিহ্য ছিল যে বাড়িতে কোন নতুন মেহমান আসলে। তাকে প্রথমেই সর্বোৎ মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। সেই রকমই আমাদের শরবত মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন শুরু করল। এরপর নানান ধরনের পিঠা পায়েশ চলে আসলো। আমি আমার ছোট বোন আর খালাতো বোন সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া শুরু করে দিলাম। গ্রামের এই সময় পায়েস খুবই ভালো লাগত। কারণ শীতের সকালে খেজুরের রস পারতে খুবই মজা লাগত। নানি বলল গান পার্টিরা তোমরা এখন সবাই বাড়ি যাও। তবে গ্রামে সবাই এখনো ব্যান্ড পার্টিকে বলে গানপাটি। এদিকে রাত্রে খাবারের আয়োজন শুরু হয়ে গেল। বাড়ির বড় জামাই এসেছে খাওয়াটা তো এমনি একটু বড় হবে হবে। খাসি জবাই হল বড় বড় মুরগি জবাই করল। বড় জামাই বলতে আমার বাবা এই বাড়ির বড় জামাই ।এদিকে বড় মামা যার বিয়ে তার ঘের থেকে বড় বড় ইলিশ মাছ পাঠিয়ে দিল সাজি ভরে। বর্তমানে তার সেই একটা ইলিশ মাছের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা আনুমান। যা অনেক সময় বাজার ঘুরেও পাওয়া যায় না। সেদিনের সেই ইলিশ মাছ যেন চুষে চুষে খেতে ইচ্ছে করে । তখনকার একটা খাসির দাম ছিল মাত্র ৩০০ থেকে ২৫০ টাকা। সে সব জিনিস ভাবলো এখন মানুষ মনে হয় কত বছর পার হয়ে গেছে। অথচ আমরা যার বিয়ের জন্য বাড়িতে আসছি। সে ইউনিয়ন পরিষদে সার্লিসী নিয়ে ব্যস্ত। তবে আমার বড় মামা বিভিন্ন কাজে কর্মে সারাদিনই ব্যস্ত থাকে গ্রামে আসলে। কখন জমিতে যায় হালকি চাষ করল কি ফসল লাগালো সেগুলো দেখতে। আবার কলা বাগানে যায় কলা গাছ কোনটি নষ্ট হলো কোনটি কালার ফল ধরল সেগুলো দেখতে। সবার বাড়ির ভিতরে এসে পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। পুকুরে মাছ কি ধরনের আছে ।সে এগুলো সেই পুকুরের পাড়ে দাঁড়ালেই বুঝতে পারে। এদিকের খাসির দোস্ত রান্না চলছে বাবুর্চি দিয়ে। আমি শীতের জন্য। বাবুর্চির রান্না দেখতেছি খুব ভালোই লাগতেছে। এর ভিতর দেখি বড় টর্চ লাইট খালপাড় থেকে নাটোর উপর দিয়ে জ্বলে উঠলো । আমি তখন তাদের কথাই বুঝে ফেললাম । চিৎকার করে বললাম বড় মামা চলে এসেছে। টর্চ লাইটের আলো ধীরে ধীরে সামনে চলে আসলো। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীরা বড় মামার পিছনে পিছনে টস লাইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বড়মামা বাড়ির ভিতরে ঢুকে আমাকে কোলে করে নিয়ে গেল। আর এক মোছা বের করে আমার হাতে দিলো। হাতে নিতেই আমি বুঝে ফেললাম। এর ভিতরে কি আছে। আমি বলে ফেললাম জিলাপি। মামা হাসি দিয়ে বলল হ্যাঁ। জিলাপির বক্স নিয়ে। আমি মামা কোল থেকে নেমে গেলাম। বড় মামার এত লম্বা। আমার মামাকে ধরতে হলে চেয়ার পেতেও ধরতে পারিনা। জিলাপির মো চাটা নিয়ে আমার বয়সী যারা ছিলাম সবাই আমরা একত্র হয়ে গেলাম। খুলে তাড়াতাড়ি যে যা পারো তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো জিলাপি। বাবুর্চি চলে এলো মামার কাছে। চেয়ারম্যান সাহেব খাওয়া দাওয়া কি শুরু করবে এখন। মামা-বাবাকে জিজ্ঞেস করল দুলাভাই এখন কি খেয়ে নিবেন। বাবা বলল অনেক জার্নি করে এসেছি তো। তাই খাওয়া দাওয়া সেরে রেস্ট নেই । তাই বড় মামা বাবুর্চি কে বলল টেবিলিটি খাওয়া দাওয়া রেডি কর। ঘরের বাহিরে একটি বারান্দা সেখানে কি খাওয়া দওয়া দেবো। না কাছারি ঘরে খাওয়া-দাওয়া দেবে। বাবা বলল না এখানেই দেয়। অমনি বাবুর্চি শেয়ার বারান্দায় পেতে ফেললো। আমরা সবাই ছোটরা খাটের উপরে খেতে বসেছিলাম। আর বড়রা যারা ছিলেন তারা সবাই চেয়ার টেবিলে বসে গেল। বড়মামা টেবিলের এক প্রান্তে। বাবা টেবিলের আর এক প্রান্তে। আর অন্যান্য মামারা খালারা বয়স্ক জ্যৈষ্ঠ আছে। তারা সবাই দু'পাশে বসে গেলো নানিকে নিয়ে। নানি বললেন খাসির মাথাটা বড় জামাইয়ের প্লেটে দাও। ইলিশ মাছ গুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগতেছে। পুরো আস্তা ইলিশ মাছ বড় ঢিসির উপর সাজিয়ে রেখেছে। বড় বড় তিনটি ইলিশ মাছ আমাদের খাটে দিল। আমরা সবাই খাঁটে বসি খাচ্ছিলাম। যে যার খুশি ইলিশ মাছের আতুরি খুলে নিয়ে যাচ্ছে । বড় মামা আমাদের আবার ডেকে বলল যে আগে খাবে তার জন্য একটি পুরস্কার আছে। এ গুলো শুনে আমরা সবাই তাড়াহুড়হো করে খেতে শুরু করলাম । এবার ঝাল খাওয়া শেষ। এবার নিয়ে এলো মিষ্টি দ্রব্য। আমরা যেসব মিষ্টি নিয়ে এসেছি। এগুলো তো আছেই। এদিকে বাড়িতে বসে বিভিন্ন রকম মিষ্টির পায়েশ মিষ্টি পিঠা বড় বড় রসগোল্লা বানিয়েছে লোকেরা। এগুলা টেবিল ভর্তি করে ফেলল সাজিয়ে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার এত মিষ্টি ফিন্নি পিঠা কিভাবে খাব তাই নিয়ে চিন্তিত। কারণ আসার পর থেকেই তো খেতেছি। খাওয়া তো কম খেলাম না। এখন চিনতে করলাম যদি মেজ ভাই বড় ভাই ছোট মামা সবাই শহর থেকে একসাথে চলে আসতো তাহলে খুব আরো মজা হত। তারা আসতে পারল না তাদের সামনে পরীক্ষা সেই জন্য বিয়ের একদিন আগে এসে বাড়ি পৌঁছাবে। বাবা খুব করা মানুষ তাই তাদের ধমক দিয়ে বাসায় রেখে এসেছে। খাওয়া-দাওয়া সবাইর শেষ পেট টুপ টুপ ভরা। আমারতো হাঁটতেই খুব কষ্ট হচ্ছে। খাওয়ার পরে। গ্রামের বাড়ি তখনকার বিদ্যুৎ ছিল না। তবে বিয়ের উপলক্ষে বড় মামা দুটি হ্যাজাক লাইট ভাড়া নিয়ে এসেছিল। এগুলো বাজারে মাইকের দোকানে হ্যাজাক লাইট ভাড়া দেয়। হয়তো বর্তমান সময় ছেলেরা হেজাক লাইট কি তারাই জানে না। এই হেজাক লাইট হলো। একটা মাঠের ভিতরে রাখলে। যদি সেখানে ওয়াজ মাহফিল হয়। বা জনসভা হয়। সেখানে বাঁশের কিল্লায় কিল্লায় একটি করে হে যাক লাইট টানানো থাক তো। লাইটগুলো হল। কেরোসিন দিয়ে জ্বালাতে হয়। যখন আলো কমে যায়। তখন আবার পাম্প দিয়ে আলো বাড়িয়ে নিতে হয়। বাবা সবাইকে বলল ছোটরা সবাই ঘুমতে যাও। কথার সাথে সাথে আমরা সব কাচারি ঘরে চলে গেলাম। আর বড়রা সবাই বাড়ির ভিতরে ঘুমাবে। একের পর এক সব বাতিগুলো ঘরে নিবে নিভে গেল। বাড়ির ভিতরে তিনটি ঘরে ই অন্ধকার হয়ে গেল। আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। আপাতত আমরা সবাই ঘুমাই। (বড় মামার বিয়ে ।তাই গল্পটি খন্ড তিন শেষ করছি।)
Comments
-
Shafin pro 1 month ago
গল্প দিয়ে চাইলে একটি নাটক তৈরি করতে পারেন