কেমন বাংলাদেশ চান? সুন্দর বাংলাদেশ চাই, যেখানে আমি আমার বাচ্চাকে জন্ম দিত পারব। ভাবখানা এমন যে বাংলাদেশ আগে খুব অসুন্দর ছিল তাই তার পূর্বপুরুষ 'তাহাকে' জন্ম দিতে পারেন নাই। তিনি হঠাৎ বা অপ্রত্যাশিতভাবে গজিয়ে উঠেছিলেন বা আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার নাম রেখেছিল ভুঁইফোড়!
আমরা যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, ঠিক তেমন বাংলাদেশে জামায়াতের সিরাজগঞ্জের সেক্রেটারি বলতেছেন, আ.লীগ যারা পালিয়ে গেছেন তাদের স্ত্রীর প্রতি জামায়াতের হক আছে। বুঝলাম না ভাই? জামায়াত কি মনুষ্য পদবাচ্যে অভিহিত হওয়ার মতো কেউ যে সে গণিমাতের মাল পেলেই দাসি বানিয়ে ফেলতে পারবে? বলতে হবে জামায়াত সদস্যদের হক আছে। তাহলে ব্যাপারটা দুইয়ে দুইয়ে চার হয়। আ.লীগ আপনাদের মেম্বারদেরকে সর্বত্র যেভাবে আগলে রেখেছিল। আড়িপাতা যন্ত্রের কোলে নিয়ে বসিয়েছিল। ক্যাম্পাসে হিলমেট দিয়ে সুরক্ষিত করেছিল -খুব সিম্পল আপনারাও তাই তাই করবেন। কৃতজ্ঞতাবোধ বলে একটা ব্যাপার নতুন বাংলাদেশে ভালোভাবেই গজিয়ে উঠবার কথা।
এদিকে আজকে জামায়াতের আমির মহাত্মা ডা. শফিকুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, মায়েরা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, আবার সেই সন্তানকে দুগ্ধ পান করিয়ে লালন পালনও করছেন। ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মঘন্টা কমিয়ে দেওয়া হবে। দিনে ৫ ঘন্টার বেশি নাকি কোনো নারীরই কাজ করা লাগবে না!
মাগো মা, কর্মজীবী বউ তো একদম লাফ দিয়া উঠছে, এরচেয়ে সুখ কোথা আছে বলো আপনার কথা ভুলিয়া যাও। আমি বললাম, তোমার ছোট ভাইয়ের সম্বন্ধির যে গার্মেন্টস বিজনেস আছে সেখানে নারী শ্রমিকরা ৮ ঘন্টারও অধিক ওভারটাইম না করলে ঠিক টাইমমতো প্রোডাক্ট শিপমেন্ট কেমনে হবে আর ওই শ্রমিকদের বিশাল পরিবারের সবার মুখে দুমুঠো নুনভাতই বা কেমনে জুটবে শুনি?
বউ আর কথা কয় না। কেবল অস্ফুটে বলে যায়, জানি না ধীরে ধীরে নারীদের বাইরে কাজকর্ম বাদ দিয়া ঘরে বসায়ে রেখে সন্তান উৎপাদন আর পতিসেবা করাবে নাকি, আল্লাহ্ই জানে।
ওদিকে আরেক খবর এসেছে, চরমোনাইয়ের পীর ফয়জুল করিম বলতেছেন, 'বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সুন্দরী নারীরা রাস্তায় বের হতে পারবে না!' কী ভয়ঙ্কর কথা? এটা কী করে হয়। নারীরা তাহলে সবাই একজোট হয়ে অসুন্দর কীভাবে হবে? নানা কাজে তাদেরকে তো বাইরে বের হতেই হবে। 'ডার্ক অ্যান্ড আগলি' নামে ইউনিলিভার বাংলাদেশ নতুন কোনো ক্রিম বের করবে নাকি? আর তা যদি নাহয়, রাস্তাঘাটে সুন্দরী নারীদের সমস্যা কী হবে? পীর সাহেব দেশজুড়ে ছেলে জ্বীন-টীন ছেড়ে দেবেন নাকি?
সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই একশ্রেণীর ধর্মগুরুদের বয়ান শুনি। ঢালাওভাবে নারীদেরকে Beশ্যা বলে যান। বলতে বলতে গলার রগ ফুলিয়ে ফেলেন। অ্যানিহাউ মুখের আগায় নারীর নাম না রাখলে তাদের বিষোদগারের আওয়াজ ভালো জমেই না! গালিগালাজের সময় নিজের কন্যা, জায়া, জননীর মুখটা একদম মনে পড়ে না?
নতুন বাংলাদেশ এত্ত কিউট লাগে যে, এখানকার প্রতিটা পুরুষ মানুষ নারীদের প্রতি কী দারুণ কনসার্ন। কত ভালো ভালো ভাবনা তাদের। নারী কী করবে, কী বলবে, কী পোশাক পরবে সব ঠিকঠাক করে দিচ্ছে পিতৃতন্ত্রের প্রতিভু ওই গোঁড়া পুরুষেরা। এই দেশে নারীরা কী ভাগ্য করেই না জন্ম নিয়েছে!
ফুটনোটস: বিবিসি বাংলা আজকে নিউজ করেছে, 'চতুর্দিকে মৃত্যুফাঁদ, এই শহরে কাকে কখন কিভাবে মরতে হবে কেউ জানে না!' ওদিকে ক্রমাগতভাবে মানুষের দারিদ্র্যসীমা বেড়েই চলেছে -ইতোমধ্যে যা ১৮ থেকে ২৮ ভাগে উঠে গেছে। এমন বাস্তবতাতেও আপনারা আটকে রয়েছেন যেনতেনভাবে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে আন্ডারমাইন করবার নানা বাহানায়!
লেখক: সাংবাদিক
২৭ অক্টোবর ২০২৫