মা চিৎকার করছিলেন,
“রুবেল! বোনের হাত ছাড়িস না তাকে ধরে রাখ !”
আর পর মুহূর্তেই সবাই পানির নিচে হারিয়ে গেল।
রুবেলও ভেসে গেল অনেক দূর।
চোখে মুখে কাদা, বুকের মধ্যে ভয়, মন ভরে গেল অন্ধকারে।
সকালে যখন উদ্ধারকর্মীরা তাকে খুঁজে পেল, তখন সে অচেতন।
তারা টেনে তুলল নদীর চর থেকে।
তার ঠোঁটে একটাই শব্দ—
“মা...”
বন্যার কয়েক দিন পর এক সাংবাদিক আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে রুবেলকে খুঁজে পেলেন।
ছেলেটি চুপচাপ বসে ছিল।
ক্যামেরা অন হলো।
সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন:
“রুবেল, সেদিন রাতে কি হয়েছিল তোমার এবং তোমার পরিবারের সাথে?”
রুবেল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“সেদিন রাতে পানি বাড়তেছিল। বাবা বলছিল ঘরের উপর উঠতে। কিন্তু ঘরই তো ভেসে গেল ভাই... দাদি চিৎকার করতেছিল, আমি রিনার হাত ধরছিলাম, কিন্তু স্রোতের টানে হাত ছুটে গেল। মা ডুবতেছিল, আমি ধরতে পারিনি। আমি শুধু চিৎকার করতেছিলাম, ‘মা!’ ... তারপর আর কিছু মনে নাই।”
এটা বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল।
রুবেল এখন একটি অনাথ আশ্রমে থাকে।
প্রতিদিন বিকেলে সে নদীর ধারে বসে সূর্য ডোবা দেখে। আর তার পরিবারের কথা ভাবতে থাকে। এক রাতে সে কিভাবে সবকিছু হারাল। তার মা-বাবা, বোন আার দাদির কথা খুব মনে পরে। তার চোখের কোণে একটা ছোট অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়ে।
দূর থেকে নদীর কলকল শব্দ শোনা যায়,
আর সেই শব্দের সঙ্গে মিলেমিশে যায় এক শিশুর হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের দীর্ঘশ্বাস।