বিকেলের সূর্যটা ডুবছে ধীরে ধীরে। জানালার পাশে বসে নীলা পুরোনো কাঠের টেবিলের ওপর হাত রেখে আছে। টেবিলের কোণে একটা চিঠি পড়ে আছে — হলুদ হয়ে যাওয়া, অনেক পুরোনো।
চিঠিটার উপরে লেখা — “নীলার জন্য”।
চিঠিটা লিখেছিল রিয়াদ, আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে।
সেই রিয়াদ, যাকে সে শেষবার দেখেছিল হাসপাতালের করিডরে, হাতে স্যালাইন নিয়ে হাসিমুখে বলেছিল —
“আমি ফিরব, নীলা। এই শরতের পরেই।”
কিন্তু শরত তো কেটে গেছে বহু আগেই।
রিয়াদ আর ফেরেনি।
নীলা তখন মাত্র কলেজে পড়ে। প্রেমটা তাদের ছোট, সরল — কিন্তু সত্যি।
রিয়াদের স্বপ্ন ছিল লেখক হবে, নীলার স্বপ্ন ছিল ওর গল্পগুলো পড়বে প্রথম পাঠক হিসেবে।
কিন্তু রিয়াদ যখন দূরের শহরে চাকরি নিতে গেল, হঠাৎই দুর্ঘটনা। একদিন খবর এলো — “ও আর নেই।”
সব ভেঙে গেল। নীলা কোনোদিন কারো সঙ্গে সম্পর্ক করেনি এরপর।
শুধু ওই চিঠিটা — ওর কাছে রয়ে গেছে একমাত্র স্মৃতি।
চিঠিটার ভাঁজ খুলে আজ সাত বছর পর আবার পড়তে বসেছে নীলা।
চিঠিতে লেখা—
> “নীলা, যদি কোনোদিন আমি ফিরে না আসি, এই চিঠিটা তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি। আমি চাই, তুমি আমার গল্পগুলো শেষ করো। আমি যতটুকু শুরু করেছি, তুমিই শেষ করবে।”
নীলার চোখে জল চলে এল।
ড্রয়ার খুলে দেখল, রিয়াদের পুরোনো খাতা — যেখানে গল্পের অর্ধেকটা লেখা।
ওখানে একটা লাইনেই লেখা আছে —
‘শেষ দৃশ্যটা তোমার হাতে।’
নীলা কলমটা হাতে নিল।
একটা নতুন পৃষ্ঠা খুলল।
লিখতে শুরু করল —
> “রিয়াদ ফিরে এলো... তবে এবার কাগজের পাতায়।”
বাইরে তখন সূর্য ডুবে গেছে।
আকাশে এক টুকরো তারার আলো — যেন রিয়াদের চোখের হাসি আবার জ্বলে উঠেছে।