Posts

চিন্তা

গণমাধ্যমে হাসিনার সাক্ষাৎকার: তাতে কার কী?

October 29, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

175
View

মৃত্যুর গুজবের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ একযোগে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিলেন। বিশেষকরে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাতকারের বরাতে দেশ-বিদেশের অনেক মিডিয়া বিষয়টিকে তাদের সংবাদ শিরোনাম করেছে। 

গেল বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা বর্তমানে ভারতে থাকছেন। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো তার সাক্ষাৎকার বের হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রয়টার্স এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট। 

কয়দিন ধরেই পুরো সোশ্যাল মিডিয়া ইন্নালিল্লাহ্ ও আলহামদুলিল্লাহ্য় সয়লাব। তবে আ.লীগের পেজে নিজের জবানিতে নিজের মৃত্যু বিষয়ক গুজবকে নাকচ করেন শেখ হাসিনা। সেখানে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়- "আমার নামে একটা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি অসুস্থ হতে যাবো কেন? আমি সুস্থ্য আছি। আমাকে তো আমার দেশকে উদ্ধার করতে হবে"! 

আমাকে তো আমার দেশকে উদ্ধার করতে হবে! শেষের এই বাক্যটি কারো কারো কাছে খটকা লাগতে পারে। তাকে হটিয়ে ছাত্র জনতা দেশ উদ্ধার করতে নেমেছে। এত সহসাই তিনি রিভার্স সুইং আশা করেন কী করে? 

রয়টার্সকে শেখ হাসিনা জানান, তার দলকে বাদ দিয়ে হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকারই হোক তাদের সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং তিনি ভারতেই অবস্থান করবেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনে ফিরে আসবে, সেটা সরকারে হোক আর বিরোধী দলে হোক এবং তার পরিবারের এর নেতৃত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে, পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনি বৈধতা থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক, এমন পরিস্থিতি থাকলে, ভোটে অংশ নিবে না। 

জুলাই আন্দোলনে গুলি করার নির্দেশ দেননি এমনটা জানিয়ে এবারো তিনি মাস কিলিং এর জন্য কোনো অনুশোচনা বা ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, তবে আহত-নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। 

ইন্টেরিম গভমেন্টের তরফেও ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া এসেছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ যাঁরা করছেন, তাঁদের তাঁর আগের কর্মকাণ্ড মনে রাখার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে শেখ হাসিনার চেয়ে বড় খুনি বা হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন কেউ করেনি।’ 

বছরজুড়েই শেখ হাসিনা তার নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন -যার পুরোটাই অডিও ভার্সন। গত বছর জনরোষে এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টারে দেশ ত্যাগ করবার পর তার ভিজুয়াল দর্শন কেউ পায়নি। ঠিক এ কারণেই তার কথাবার্তা নিয়ে শেখ হাসিনার অপোনেন্টরা একধরনের সংশয় প্রকাশ করেন। তবে হাসিনা যে অ্যালাইভ এটা মেনে নিয়েই তারা ইন্নালিল্লাহ পড়েন। 

রয়টার্স আজকে যেভাবে শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন করেছে তাতে জুলাই গণ-আন্দোলনের স্টেক হোল্ডারদের মাথাব্যথার নিশ্চয়ই কারণ আছে। সবকিছু নরমালাইজ করবার এক ধরনের প্রবণতা ওই সাক্ষাৎকারের মধ্যেই আছে। রয়টার্স শিরোনামেই বলেছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা। আবার কভার ফটো হিসাবে ব্যবহার করেছে ব্যাংককের গভমেন্ট হাউজের গার্ড অব অনারের একটি ছবি। 

মোটামুটি এটা সবাই বুঝে বাংলাদেশের রাজনীতিটা আসলে স্বাদেশিক মগজের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়া, চীন এবং বাংলাদেশের হালের নতুন বন্ধু পাকিস্তান আমাদের নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখে চলেছে। আমরা ওই বহুজাতিক স্বপ্নের নগন্য ঘুঁটি মাত্র। 

নির্বাচনের ঘণঘটার এইসময় একযোগে তিনটি বড় বৈশ্বিক মিডিয়ায় হাসিনার সাক্ষাৎকারের নিশ্চয়ই সিম্বলিক মূল্য আছে। বিশ্ব মুরুব্বিদের কেউ সিগনিফিক্যান্ট কিছু ঘটাতে চায় এই ধারনাও অমূলক নয়। তবে শেখ হাসিনার অডিও যেহেতু আটেপক্ষে শোনা যায় -এসব মিডিয়া অডিও-ভিজুয়াল সাক্ষাৎকার না নিয়ে কেন ইমেইলের ওপর নির্ভর করল সেই প্রশ্নটার উপযুক্ত উত্তর যে কারো অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজে যাবে। 

গণতন্ত্র হরণ, তিনটি ভোজবাজি নির্বাচন, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ, বিপুলসংখ্যক গুম খুনের দায় মাথায় নিয়ে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ইন্ডিয়ায় আসলেই ঠিক আছেন তো?

লেখক: সাংবাদিক 

২৮ অক্টোবর ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login