Posts

চিন্তা

শামস আমার চিনি চোর!

October 30, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

63
View

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকদিন সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে একসাথে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছি আমি আর শামস। 
ওর বড় ভাই পুলিশের এসি রবিউল ইসলাম (হলি আর্টিজান‌ হামলায় শহীদ) আমার ব্যাচমেট বন্ধু। ওই সূত্রেই শামসও আমার ছোটভাই।

কালান্তরে এই অমায়িক ছেলেটি আমার আত্মার আত্মীয় হয়ে ওঠেছে। ওর দুঃখিনী মাও আমাদের মা। এতটা বিনয়ী, পরিশ্রমী, সত্যনিষ্ঠ ছেলেটির জীবনে হঠাৎ আসা এই ঝড়টি তাই খুব হৃদয় পোড়াচ্ছে। চোখের জলও শুকিয়ে আসছে।

শামসের ছবিটি দেখুন।
ওকে কী মনে হয়? ওর প্রতি যদি ন্যূনতম মায়া আপনার না জাগে তবে বুঝবেন ভয়ানক রুচির দুর্ভিক্ষের কালে আপনার হৃদয়টা পাষাণে গিলে খেয়ে নিয়েছে অনেক আগেই।

শামসের বড় ভাই হলি আর্টিজান হামলায় শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা। ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতির ছায়া কারো কাছ থেকে নিজের জন্য আশা করেনি শামস। এতটুকু কারুণ্য নয়, বরং পারিবারিক মূল্যবোধকে আকড়ে ধরে সাধ্বী মায়ের দেখানো পথকে নিজের চলবার সঙ্গী করেছে। সমূহ বিপদ জেনেও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তার লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের যোগ্যতায় সাংবাদিকতার স্বাধীন পথ বেছে নিয়েছে।

২০১১ সালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে মা করিমন নেসার দেওয়া ২৯ শতাংশ জমির ওপর ১২ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে একটি বিশেষায়িত স্কুলের যাত্রা শুরু করে এসি রবিউল। স্কুলটির পুরো নাম বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি সংক্ষেপে ‘BLOOMS'।

শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি এবং অটিজমসহ একাধিক প্রতিবন্ধী শিশুকে সপ্তাহে চারদিন পাঠদান করানো হয় সেখানে। বিশেষভাবে যোগ্য এই শিশুদেরকে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকবার প্রেরণা দেয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে স্কুলটিতে ‘ডে-মিল’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ সেবাধর্মী বিশেষায়িত ওই স্কুলটি স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও শুভানুধ্যায়ীদের সাহচর্যে খুব সুচারুরূপে দেখভাল করে আমাদের শামস।

চিলে কান নিয়েছে শোনে নিজের কানে হাত না দিয়ে চিলের পেছনে দৌড়ানো স্বভাবধারীরা শামসের মূল্য বুঝবেন না। শামসের ইথিক্স ও এটিকেট আপনারা জানবার চেষ্টাও করবেন না। পড়ে থাকবেন ১০ টাকার গল্পকারদের গোয়েবলসীয় কুকথায়।

আমাদের এই শামস আপনাদের করুণার ভিখারি নয়। ন্যায্য বিচারটুকু পাওয়াই তার সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের দাবিও ওই একটাই।

আমি আমার ভাইয়ে সমর্থনে কথা বলছি বলে সোশ্যাল মিডিয়ার অনেকেই আমাকে যাচ্ছেতাইভাবে গালিগালাজ করছেন। প্রথম প্রথম বেশ কয়েকজনকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। শামসের করা স্বাধীনতা দিবসের নিউজটি এখনও প্রথম আলোর অনলাইনে আছে। আপনারা দেখুন, পড়ুন। ওই নিউজটিতে শামসের কোনো ভুল নেই। এমনকি শামসের কোনো মতামতও নেই। সাংবাদিক নিউজে কখনোই কলামিস্টদের মতো তাঁর নিজস্ব মতামত দেয় না, দিতে পারে না। শামসও দেয়নি। ফুলবিক্রেতা শিশু ও কয়েকজন দিনমজুরের বয়ানে দ্রব্যমূল্যের যন্ত্রণাটা তুলে ধরতে চেয়েছে। সরকারি নীতিনির্ধারকরাও যে যন্ত্রণাটির আদ্যোপান্ত জানেন এবং স্বীকার করে চলেছেন।

এখন আর কাউকে বুঝাতে যাই না।
অবুঝ সকলেরে এক সুইচ টিপে বঙ্গোপসাগরে ফেলে আসি। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ঢের ভালো।

ভুল যেটুকু সেটা হলো প্রথম আলোর সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবেশিত 'গ্রাফিক কার্ডে'র ছবি ও ক্যাপশানে অসংগতি, যার সাথে শামসের ন্যূনতম দায় নেই। প্রথম আলো নিজেদের ভুল স্বীকার করে ওই কার্ডটি প্রকাশের মাত্র ১৭ মিনিটের মাথায় তুলে নেয়। তারপরও শামস নিন্দামন্দ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। যারা শামসকে হলুদ সাংবাদিক, ১০ টাকার সাংবাদিক বলে নিন্দামন্দ করছেন, তারা দয়া করে ওঁর টাইমলাইনে ঘুরে আসুন অথবা প্রথম আলোর আর্কাইভে ক্লিক করুন। ওর নিউজগুলো দেখুন। তারপর জাজমেন্টাল হোন।

শামস যদি ভুল করত, আমরাই বলতাম ও ভুল করেছে প্লিজ সবাই ক্ষমা করুন। কিন্তু যে ভুলে ওর দায় নেই তার খেসারত কেন ওকে দিতে হবে?

আমরা রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্র যেহেতু ওর ওপর সংক্ষুব্ধ হয়েছে। নিশ্চয়ই ও যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে। সংবেদনশীল আইন ও আদালতও ওর প্রতি ন্যায্য জাজমেন্ট দেখাবেন।

আপনারা যতই সাংবাদিকদের ঢালাওভাবে বকুন না কেন, মনে রাখবেন সকল অসাধুতার মুখোশ উন্মোচন করবার সক্ষমতা কেবল সাংবাদিকরাই রাখেন। আমাদের শামসও তেমন একজন সাংবাদিক। পেশাজীবীদের সবাই যেমন খারাপ নন। তেমনি সব সাংবাদিকও নষ্ট নন।

আঁধার কখনও চিরস্থায়ী হয় না। আলো তাকে ঢাকবেই। শামসও ফিরে আসবে। দেশমাতৃকার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে আবারও আমজনতার পক্ষ হয়ে কথা বলবে। সেদিন সপ্রশংস আপনারাই ওর নাম নেবেন।

১৫ মে আমাদের শামসুজ্জামান শামসের জন্মদিন। গেল জন্মদিনে ইনবক্সে বললাম শুভ জন্মদিন ভাইয়া। তোমাকে আমি কেক খাওয়াব। এমনি হাসিখুশি থেকো কাল থেকে কালান্তরে।

ও লিখল...
আমার ভাই, আমার ভালোবাসা।
প্রিয় অভিভাবক সবসময় আপনাদের আদর, শাসন আর ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবেন। দোয়া করবেন যেন সৃষ্টিকর্তা আমাকে আপনাদের ভালোবাসার ছায়ায় থাকার তৌফিক দেন।

আমি আবার লিখলাম...
মানুষ এত মিষ্টি হয় কেমনে? 
তোমাকে না দেখলে 
তোমার ভাইকে না চিনলে জানা হতো না!

শামস লিখল...
ভাই আপনার কাছ থিকা চুরি কইরা চিনি নিছিলাম এরপর থিকা মিঠা হইয়া গেছি।😘😘😘😘

ওরে আমার চিনি চোর যেখানেই থাকবি
ভালো থাকবি। তোর সাহস আছে। বিরাট এক হৃদয় আছে। জেলকেই জ্বলজ্বলে আলোকময় করে রাখবি। জীবনের কোনো শিক্ষাই বৃথা যাবে না প্রিয় ভাই আমার।✍️

ইতি:
তোর বড়ভাই
ফারদিন ফেরদৌস 
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ | ৩০ তম ব্যাচ
৩০ মার্চ ২০২৩

#FreeShams 
#PressFreedom

Comments

    Please login to post comment. Login