বাসায় একটি কাঁঠাল দেখলাম বড়। মাকে জিজ্ঞেস করলাম কাঁঠালটি কোথায় পেয়েছিলে। মা বলল তোর নানা বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে। তাই কাঁঠালের কাছে গিয়ে কাঁঠালের উপর হাত দিতে গিয়ে দেখলাম কাঁঠালটি নরম হয়ে গেছে। আমি বললাম মাকে কাঠালটি পেকে গেছে। মা বলল কাঁঠালটি ভাঙতে পারলে ভাঙ। তাই কাঁঠাল কিভাবে ভাংবেন শুনেন। রচনা: রচনাটি শুরু করছি। প্রথম হাতে একটু সরিষা তেল লাগিয়ে নিবেন। তারপর ভালো করে হাত ✋ সরিষার তেলদিয়ে মালিশ করে দিবে। এমন ভাবে চতুর দিকে লাগিয়ে নিবেন সরিষার তেল যাতে হাতে কোন কাঁঠালের কস না লাগে। এরপর একটা দা চাকু দিয়ে কাঁঠালটি শুয়ে নিয়ে। মাঝখান দিয়ে হালকা পোজ দিলে। কাঁঠালটি লম্বা-লম্বি কেটে যাবে। এরপরে দুই হাত দিয়ে ভালো করে পোষের মাঝখানে টান দিয়ে উপরের খোসা গুলো খুলে ফেলতে হবে। দেখবেন অমনি কাঁঠালের কোষগুলো হাঁ করে বের হয়ে গেছে। সুন্দর একটা পাত্র ধুয়ে নিবেন। এই পাত্রের ভিতরে কাঁঠালের গুলো ধীরে ধীরে চুটিয়ে সেই পাত্রের ভিতর রাখবেন। এবং কাঁঠালের চতুর্দিকে দেখবেন ছোট ছোট কাঠালের মত এগুলকে বলে নারা কোটা । এরপরে ধীরে ধীরে সব কাঁঠালের কোষগুলো পাত্রের রাখবেন। কাঁঠাল থেকে ছুটি য়ে। লম্বা যে কাঁঠালের কোষ গুলো চতুর্দিকে ধরে রেখেছিল। সেটিকে বলে কাঁঠালের মুথা। এখন সব কাঁঠালের কলগুলো উঠানো হয়ে গেলে মুথা নাড়াকুটা কাঁঠালের শোগলা একটা বস্তায় ভরে যেকোনো একটি গাছের তলায় রেখে দিতে পারেন। কিছুদিন পর ওটা পচে গেলে মাটি মিশিয়ে মাছ ধরার চারা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। যারা বরশি দিয়ে মাছ ধরে। তা না হলে মাটির সাথে মিশিয়ে গাছের গোড়াগুলো দিলে গাছে প্রচুর পরিমাণে জৈব সারের ঘাটতি মেটায়। আসি আমরা এখন কাঁঠালের কোষ গুলো কিভাবে খাব হাতের সকল তেল ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেব। এরপরে আমরা কাঁঠালের কোষ গুলো ভালো করে খুলে আটিগুলো বের করে একটি ভালো পাত্রে রেখে দিব । আর কাঁঠালের কুলগুলো আমরা খাব। কিছু কিছু কাঁঠাল এর হয় কচ কচা আবার কিছু কিছু কাঁঠালের কোষ হয় নরম। কিছু কিছু কাঁঠালের কোষের রং লাল বর্ণ হয়। আর মেক্সিমাম কাঁঠালের কোষ হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। কাঁঠাল খেতে খুবই মিষ্টি এত মিষ্টি হয় যে দাঁত ধরে যায় মিষ্টিতে। কাঁঠাল চাইলে আমরা বিভিন্ন কিছু দিয়ে খেতে পারি যেমন রুটির সাথে। মুরির সাথে বইয়ের সাথে দইয়ের সাথে ভেজানো চিড়ার সাথে এবং সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন পিঠা তৈরি করতে পারি। আমি আবার অনেক সময় বয়স্ক লোকজনদের দেখেছে। কাঁঠাল দিয়ে দুধ ভাত খেতে দেখেছি সেটাও খুব মজার খাবার।
এবার আসি কাঁঠালের বিচি দিয়ে কি করব: কাঁঠালের বিচি যেগুলা ভালো আছে। এগুলোকে আমরা ভালো করে ধুয়ে নেব। বিচির উপরে যে লোৎলোৎ আছে। সেগুলোকে পানিতে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নেব। এভাবে কয়েকদিন রৌদ্রে শুকালে। দেখবেন বিচিগুলো স্বাস্থ্য কমে গেছে। তখন বুঝতে পারবেন এগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়েছে। কারণ ভিতরের কল গুলো শুকিয়ে গেছে। এখন বিচি গুলো চাইলে আপনি। কি করাই নিয়ে আগুনে সেকা দিয়ে ভালো করে নেড়ে। পুরা দিয়ে খেতে পারেন। আবার কড়াইতে আগুনে বেশি বেশি টেলে পিয়াস মরিচ মরিস লবণ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে ভাতের সাথে খেতে পারে। এটা খুবই মজাদায়ক ভর্তা । তাছাড়া আঠিগুলো ভালো করে ভিজিয়ে। খোসা সরিয়ে আটি গুলোর উপরের লাল বর্ণ গুলো ভালো করে ঘষে গরুর মাংসের সাথে মুরগির মাংসের সাথে বিভিন্ন মাছের সাথে দিয়ে রান্না করতে পারেন। এটার সাদ যে খেয়েছে সেই একা ভালো বোঝে। আর কাঁঠালের যে আঁটিগুলোতে অংকুর গাছ বের হয়েছে। সেগুলোকে ভালো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দুই তিন দিন পর দেখবেন কাঁঠালের বিচি তে অঙ্কুরিত হচ্ছে। সেই বিচিগুলো একটি করে নিয়ে ছাই মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত করে বিচিটি গর্তের ভিতর রোপন করুন। কদিন বাদে দেখবেন বিচিটি কাঁঠাল গাছের রুপান্তরিত হচ্ছে।
কাঁঠালের চারা: কাঁঠালের চারা গাছটি ৮-১০ ইঞ্চি লম্বা হলেই একটি লাঠি গুপি দিন। ৫ থেকে৬ ফিট লম্বা হলে গাছের চতুরদিকে বেড়া দিয়ে দিন। ধীরে ধীরে দেখবেন গাছটি ১০-১৫ ফিট হয়ে গেছে। এবং কয়েক বছর পর চতুর্দিকে ডালপালা বের হয়ে বড় হয়ে গেছে। তখন মৌসুম আসার আগেই গাছের গোড়ায় বিভিন্ন জৈব সার রূপ করুন। দেখবেন প্রথম মৌসুমী গাছে ভালো ফলন ধরেছে। এবং গাছের প্রতি ডালে ডালে দেখবেন পাতা ছড়িয়ে পরে সবুজ হয়ে গেছে গাছটি। গাছের পাতা মাঝে মাঝে আপনারা আপনাদের বাড়ীর পশুদের খাবারের জন্য ছিড়ে ছিড়ে তাদের সামনে খাওয়ার জন্য দিয়ে দিন। কাঁঠালপাতা গরু ছাগল বিভিন্ন পশু পাখিরা খেতে খুব ভালো পায় । দেখবেন কোরবানির সময় বিভিন্ন রাস্তাঘাটে কাঁঠালের পাতা বিক্রি করে কোরবানির পশুর জন্য। আমরা সেগুলো কিনে নিয়ে কোরবানির পশু গুলোকে খাওয়াই।
কাঁঠাল গাছ সাধারণত ২০-৩০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে ও তার বেশিও লম্বা হয় ।মোটার দিক দিয়ে সাধারণত ৫ থেকে ৮ ফুট বের হয়ে থাকে। ও তারও বেশি হয় সাধারণত যশোর অঞ্চলে। কাঁঠালের গাছ কেটে আমরা বিভিন্ন সাইজের কাঠ বের করে। আমরা দামি দামি ফার্নিচার তৈরি। বাজারে কাঠের সিএফটি খুব চড়া দামে বিক্রি হয়। পুরাতন কাঁঠাল গাছের কাঠের দাম আরো বেশি হয়। এবং কাঁঠাল গাছের কাঠজিরে যে লাকরি বের হয় তা আমরা জ্বালানি কাজে ব্যবহার করি। বাজারে সাধারণত কাঠালের লাকড়ি খুবই দাম বেশিতে বিক্রি হয়। এবং বড় বড় কাঁঠাল গাছের গোড়া দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় টেবিল ফার্নিচার তৈরি করা হয়। যার বয়স অনেকদিন পর্যন্ত ফার্নিচার পেয়ে থাকে। কাঁঠাল গাছের গোড গুলো যেগুলো অকেজো সেগুলো সাধারণত ব্রিক ফিল্ডে বিক্রি করা হয়। জ্বালানি কাজের জন্য। মোটকথা কাঁঠাল গাছের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ডালপালার কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না যা মানুষের কাজে লাগে না।
তাই আসুন আমরা বেশি বেশি কাঁঠাল খাই। কাঁঠাল আমাদের একটি জাতীয় ফলের নাম। আর কাঁঠালের বিচি রোপন করে বেশি বেশি চারা উৎপাদন করি যেন বেশি বেশি দেশে কাঁঠাল ফলন হয় এবং নিজেদের চাহিদা পূরণ করে আমরা বিদেশেও কাঁঠাল ও কাঠের রপ্তানি করতে পারি এবং প্রচুর পরিমাণ বৈইদেশিক মুদ্রা আনয়ন করতে পারি।