Posts

গল্প

ধোঁয়ার প্রথম টান

November 1, 2025

to err of human

18
View

ধোঁয়ার সেই প্রথম টানের পর রাজিবের ভেতরে একটা কৌতূহল কাজ করতে লাগল।
প্রথমে কেবল বন্ধুরা সামনে ধরলে খেত, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সে নিজে থেকেই খুঁজতে শুরু করল।
প্রথমে সপ্তাহে একবার, পরে প্রতিদিন বিকেলে কলেজ শেষে, আর শেষে প্রায় সারাদিনই তার মাথায় থাকত—

> “আজ একটু রিল্যাক্স করা দরকার।”

ধীরে ধীরে রাজিবের আচরণ বদলে গেল।
ক্লাসে মনোযোগ হারিয়ে ফেলল, পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হতে লাগল।
শিক্ষকরা অবাক হতেন—

> “রাজিবের কী হলো? এত ভালো ছাত্র হঠাৎ এমন কেন?”

বাড়িতে মা বুঝতে পারতেন কিছু একটা ঠিক নেই।
ছেলের চোখে ঘুম নেই, মুখে ক্লান্তি, কথা কমে গেছে।
তিনি জিজ্ঞেস করলে রাজিব রেগে যেত—

> “মা, আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? আমার নিজের জীবন আছে!”

বাবা ধমক দিতেন, কিন্তু রাজিব আর শুনত না।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, রাত জেগে থাকা, নতুন “মজা”র খোঁজে ঘুরে বেড়ানো — এটাই তার প্রতিদিনের নিয়ম হয়ে গেল।

সোহেল একদিন বলল,

> “এই সিগারেটে মজা নেই, একটু হাই লেভেল ট্রাই করবি?”
রাজিব থমকে গেল, কিন্তু বন্ধুরা হাসল—
“ভয় পাচ্ছিস? একবারেই দেখবি সব টেনশন উড়ে যাবে।”

রাজিবের তখন ভেতরটা শুন্য।
পড়াশোনায় আগ্রহ নেই, বাড়িতে সবাই তাকে বকছে, বন্ধুরা ছাড়া কেউ তাকে বোঝে না—এমনটাই তার মনে হচ্ছিল।
তাই সে চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে হাতে নিল ছোট্ট প্যাকেটটা।

সেদিনের পর থেকে রাজিব আর আগের মতো রইল না।
নেশা তার শরীরে ঢুকে গেল, ধীরে ধীরে মনে, চিন্তায়, স্বপ্নে ছড়িয়ে পড়ল।
তার হাসিখুশি মুখ হারিয়ে গেল, চোখে এল লালচে দৃষ্টি, চুল এলোমেলো, পোশাক অপরিষ্কার।

বন্ধুরা সবাই হাসত, বলত—

> “তুই এখন একদম রিয়েল ম্যান!”

কিন্তু বাস্তবে রাজিব নিজেকেই চিনতে পারত না।
রাত জেগে থাকত, দিনে ঘুমাত, ঘরে ফিরত না সময়মতো।
বাবা একদিন রেগে বললেন—

> “তুই নিজের জীবন শেষ করে ফেলছিস!”

রাজিব চুপ করে রইল।
তার ভেতর যেন কুয়াশা জমে গেছে—মা-বাবার কথা তার কাছে আর কোনো গুরুত্ব পায় না।
শুধু নেশার সময়ের সেই কৃত্রিম সুখটাই যেন একমাত্র বাস্তব মনে হয়।

একদিন কলেজে পরীক্ষা ছিল, কিন্তু রাজিব গেলই না।
সারা দিন বন্ধুর ঘরে বসে ছিল, জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছিল তার মুখে।
সে চোখ বন্ধ করে বলল—

> “জীবনটা কেন এত ভারি লাগে?”

কেউ উত্তর দিল না।
ধোঁয়ার ভেতর রাজিবের মুখটা যেন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে।

Comments

    Please login to post comment. Login