সিরিয়ার বিখ্যাত উপন্যাসিক, কবি এবং চিত্রনাট্যকার খালেদ খলিফা মারা গেছেন। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ৫৯ বছর বয়সে দামেস্কে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
খালেদ খলিফার বন্ধু সিরিয়ার সাংবাদিক ইয়ারুব আলেসা জানিয়েছেন, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তিনি মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, ‘আমরা তাকে বারবার ফোন করলেও সে সাড়া দেয়নি। আমরা যখন তার বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন তাকে সোফায় মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।'
এরপর খলিফাকে দামেস্কের আল আব্বাসিয়ান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাককে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ৫৯ বছর বয়সি এই লেখকের মৃত্যুর খবরে আরবি সাহিত্য মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
খালেদ খলিফা তার সাহিত্যকর্মের জন্য আরবি সাহিত্য জগতে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি নামকরা চিত্রনাট্যকারও ছিলেন। তিনি লেখালেখির মাধ্যমে ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং রাজনীতির জটিল অংশগুলো অন্বেষণ করেছেন। তার সাহিত্যে সমসাময়িক সিরিয়ার সমাজকে তুলে ধরা হয়েছে।
আরবি সাহিত্যিকরা তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। সুদানের উপন্যাসিক লেইলা আবুলেলা, সিরিয়ার লেখক রিম আল্লাফ, সিরিয়ান-স্কটিশ লেখক রবিন ইয়াসিন-কাসাব, কুয়েতি লেখক তালেব আল রেফাই ফেসবুকে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
খালেদ খলিফা ১৯৬৪ সালে আলেপ্পোতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সিরিয়ান টিভি সিরিজের লেখক হিসাবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার প্রথম উপন্যাস 'দ্য গার্ড অব ডিসেপশন'। বইটি সমালোচকদের দ্বারা সমাদৃত হয়েছিল। ২০০৬ সালে লেখা 'ইন প্রেইজ অব হেট্রেড' উপন্যাসটি তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
ইন প্রেইজ অব হেট্রেড উপন্যাসটি লিখতে তার ১৩ বছর সময় লেগেছিল। এই উপন্যাসে আলেপ্পোর এক সুন্নি তরুণীর জীবনের জটিল গল্প বলা হয়েছে। বইটিকে আধুনিক আরবি ভাষার ক্লাসিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি ছয়টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। সিরিয়ার সরকার বইটি নিষিদ্ধ করেছিল।
২০১৩ সালে খলিফা তার 'নো নাইভস ইন দ্য কিচেনস অব দিস সিটি' উপন্যাসের জন্য মর্যাদাবান সাহিত্য পুরস্কার নাগিব মাহফুজ পদক জিতেছিলেন।
তার লেখা ‘ডেথ ইজ হার্ড ওয়ার্ক’ এবং ‘নো ওয়ান প্রেইড ওভার দেয়ার গ্রেভস’ নামের উপন্যাস দুটি সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
তিনি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কট্টর সমালোচক ছিলেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নেননি তিনি। ২০১২ সালে আসাদপন্থী গুণ্ডারা তার বাম হাত ভেঙ্গে দেয়। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যেহেতু ডান হাতে লিখি, তাই এটি আমার কাছে কোনো ব্যাপারই ছিল না।'
২০১৯ সালে একটি সাক্ষাত্কারে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন তিনি সরকারের হুমকি এবং যুদ্ধের ভয়ানক পরিস্থিতি সত্ত্বেও সিরিয়া ছেড়ে যাননি। উত্তর তিনি বলেছিলেন, ‘কারণ এটি আমার দেশ। আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি, আমি এখানেই বড় হয়েছি এবং আমি এখানেই মরতে চাই!'
সূত্র: দ্য নিউ আরব, দ্য ন্যাশনাল