ভাঙ্গার মোড় থেকে বাচ্চাদের জন্য কিছু ফল কিনে নিলাম। এর ভিতরে ছোট ছেলে বলে উঠলো ডাব খাবে। ডাবের কথা বলতেই সামনের একটি ছেলে ডাব কেটে নিয়ে আসলে। জিজ্ঞেস করলাম ডাবের দাম কত। ছোট ছেলেটি বলল দুটি ডাব সাইট টাকা। আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। যেখানে ঢাকায় একটি টপ ৬০ টাকা পাওয়া যায় না। এখানে দুটিটা ডাব এরদাম ৬০ টাকা। আমি শুনে বললাম আরো দুটি দাও। ডাব দুটি হাতে নিতে নিতেসুপারভাইজার চলে আসলো। গাড়ি ছাড়ার জন্য। আমি টাকা দিয়ে গাড়িতে পা দেওয়ার সাথে সাথে গাড়ি ছেড়ে দিল। ছেলে দুটো বলল বাবা। তারমানে ছেলে দুটো মনে করেছিল বাবাকে রেখে গাড়ি ছেড়ে দিল নাকি। পরে চেয়ে দেখে আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। এভাবে মা ববা ছাড়া সন্তান যে কত অসহায় তা আমার ছেলেদের চোখের দিকে তাকালে বোঝা গেল। অথচ আমরা মা-বাবাকে বুড়ো হলে ঠিকমতো আদর যত্ন অনেকেই করি না। যাইহোক গাড়ি ছেড়ে দিল ভাঙ্গার মোড় থেকে। গাড়ি হেলে দুলে চলতেছে। একের পর এইট ও ওভারটেক করে সবাইকে ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। ড্রাইভার খুব নিখুত ✋ গাড়ি চালাচ্ছে। ২০-২৫ মিনিটের ভিতরে টেকেরহাট চলে আসলো। আমরা এখন টেকেরহাট আছি। এখান থেকে আবার কিছু খেতে হবে ছেলেদের। নতুন কি আছে সে তা নিয়ে চতুর্দিকে দেখতে এসে ছেলেরা। কারণ তারা তো যতবার গাড়ি দাঁড়ালো এতবারই কিছু না কিছু খাওয়ার জন্য কিনেছিল। এখন দেখল পানি ফল। বলল বাবা পানি ফল খাব। ২০ টাকা দিয়ে এক কেজি পানিফল কিনে দিলাম। যেখানে ঢাকায় পানি ফলের তাম সাইড থেকে ৮০ টাকা কেজি। টেকেরহাটের গাড়িটি বেশিক্ষণ আর দেরি করলো না। সুপারভাইজারটা ইয়ং বয়সের সে বেশ ভালোই দক্ষতা অর্জন করেছে। সব স্টুপিছেই ধাপ করে নামে আবার চট করে গাড়িতে উঠে যায়। তার কথাবার্তা আচার ব্যবহার খুবই ভালো। কেউ কিছু রাগ করে কথা বললেও সে হাসে আবার কাউকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করলেও সে হাসি পায়। এবং মাঝে মাঝে কিছু বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে কথা বলতে খুব ভালোবাসে। গাড়ি ছাড়ার আগে বেশিরভাগই সালাম দিয়ে কথা শুরু করে। আমরা এখন রাজৈর কাছাকাছি চলে আসলাম। এইতো রাজৈর ব্রেক করলো। সেখানেও দেখতেছি আমার ছেলেরা কিছু না কিছু খাবারখুঁজতেছি। মোটকথা খাবার বড় কথা নয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো যেখানে স্টুপিজ দেবে সেখান থেকে কিছু না কিছু নিতে হবে। তারা উঁকিঝুকি মারতেছে । কিন্তু নেভার মত কিছু দেখতেছেনা। এর ভিতরে এক পথিক হাত বাড়াল ছেলেদের দিকে। ছোট ছেলে বলল বাবা টাকা দাও। আমি দুটো দশ টাকার নোট বের করলাম। একজনের দশ টাকা দিল। বড় ছেলে আবার বলল। বাবা আমাকে দাও। সেও তাকে আবার ১০ টাকা দিল। তারমানে দুজনেই একটি লোকে টাকা দিল। দিতে দিতে গাড়ি আস্তে আস্তে সামনের দিকে চলতেছে। আবার ড্রাইভার সাহেব গাড়ি ধীরে ধীরে স্পিড বাড়ি চলতেছে। আবার স্পিকারে গান ছেড়ে দিল টুংটাং মিউজিক বাজদে ছিল গান চলতেছে। আমরা দুজন কথা বলব যে তার সময় নেই শুধু ছেলেরা কিছু পরপরই বাবা বাবা একটা লাগবো একটা লাগবো। ওমা ধমক দিয়ে বললো একটু চুপ করতো বাবা দেখ চতুর্দিকে কি সুন্দর সিনারি। কি সুন্দর গাছপালা সবুজ লতাপাতা এবং সুন্দর সুন্দর বাড়ি ঘর। দেখলে যেন চোখ ঠান্ডা হয়ে যায়। মৃদু বাতাস শো শো শব্দ কি ভালোই না লাগতেছে। আর সে তো ওরা যা কিনে। দু-একটি খেয় ওর মার কাছে দিয়ে দেয়। আমরা এখন মস্তাপুর চলে এসেছি। সুপারভাইজার আবারো সালাম দিয়ে বলল। আমরা এখন মুস্তাপুর চলে এসেছি যার বাথরুম ছাড়ার দরকার দ্রুত বাথরুম থেকে গাড়িতে চলে আসবেন কোথাও দাঁড়াবেন না। বেশি জোর হলে ৫-৭ মিনিটের ভিতরেই আমরা গাড়ি ছেড়ে দিব। আমরা সবাই যাত্রীরা কিছু গাড়ি থেকে নেমেছিলাম আমার কিছু যাত্রী গাড়িতে বসা ছিল। পাঁচ সাত মিনিট পরেই কথা অনুযায়ী সবাইকে ডাক দিয়ে গাড়িতে সবাই উঠে পড়লাম আমি একটু হালকা চা খেয়ে নিলাম। ওর মা তো গরুর দুধের চা দেখলেই সেখানে চা খেতেই হবে। অতি সুন্দর গরুর দুধের চা। জেন দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। দুধ জল দিতে দিতে একদম ঘন করে ফেলেছে লাল বর্ণের। চাটার কালার তারমানে তাদের কিছু না কিছু স্টপিসএত মিষ্টি দেখাচ্ছিল। যে আমি লালচা এর পরিবর্তে দুধ চাই খেয়ে নিলাম। আমরা এখন মস্তপুর ছেড়ে চলে যাচ্ছি । ২০-৩০ মিনিটে ভিতরে আমরা চলে আসলাম ভুরঘাটা ভুরঘাটা হল কালকিনি মাদারীপুরের ভিতরে। আর বিরিজের ওপার হল গৌরনদী বরিশালের ভিতরে। এটা ঢাকা বিভাগ আর বরিশালের বিভাগের বর্ডার। আমরা এখন কিছুক্ষণ বিলম্ব করলাম ভুরঘাটা গাড়িটি থেমেছিল। আমার ছেলেরা বলে উঠলো বাবা এখানেআর কিছু খাব না। তারমানে তাদের কিছু না কিছু সব স্টুপিছে কিনতে হবে। এ নিয়ে আবার বাসায় গিয়ে তারা আলোচনা করে রচনা তৈরি করে। সেখান থেকে তারা আর কিছু কেন মতো দিচ্ছিল না। তাই তারা বলল বাবা একটা স্মৃতি রেখে যাব না। তখন তারা বলল বাবা একটা কিছু কর। এর ভিতরে গাড়িতে চানাচুর ভাজ বানানো ওয়ালা উঠলো। ১০ টাকার ১০ টাকার চানাচুর দাও। ওর মা বলল আমি ও খাব। তাকেও আবার দশ টাকার চানাচুর দিলাম। চানাচুরওয়ালা চানাচুর দিয়ে দ্রুত মেরে পড়লো। গাড়ি ছেড়ে দিল এখন আমরা বরিশাল বর্ডারে। কিছুক্ষণের ভিতরেই আমরা চলে আসতেছি। টরকি বান্দর । এখানে শুধু দুটো যাত্রী নামলো আর বক্স থেকে মালামাল বের করে দিয়ে গাড়ি আবার সামনের দিকে চলতেছে। ওর মা ছেলেদের বলল বাবা এখানে তো থামালো না। ছেলেরা উঠে বলল ও মা এখানে থামালো তো অনেক কিছু পাওয়া যেত। ওর মা বলল মারব এক থাপ্পর। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম থাপ্পরের কথা শুনে ছোট টা আবার ব্যাক করে উঠে পড়ে নাকি। এখন আমরা গৌর নদী চলে আসছি। গৌরনদীতে দাঁড়াবে না বললো। আমি গাড়ির হেলপার কে টাকা দিয়ে বললাম তুমি একটা দই হারিয়ে নিয়ে আসো। প্রেমে দ্রুত একটি বড় ধরনের দই কিনে আনল । গাড়ি ছেড়ে দিল। দূর হাঁড়িটা আমরা নিচের দিকে রেখে দিলাম। যাতে ধাক্কা লেগে ভেঙ্গে না যায়। গাড়ি চলতেছে। এখন কিছু রাস্তাঘাটে জ্যাম দেখতেছি। কারন আমরা এখন বরিশাল ডিসটিক এর ভিতরে আছি। এখন আমরা বামরাইল পার হয়ে যাচ্ছি। বামরাইলে দুটোযাত্রী নেমে গেল। যাচ্ছি নামাজ পরে আবার গাড়ি টান দিল। কিছুক্ষণের ভিতরে আবার হিজলা দি থামল। হিটলাদি থেকে দুটি যাত্রী উঠল। কারণ এখন যে সিট খালি থাকে ওই সিটে আবার যাচ্ছি তোলে। এখন আমরা শিকারপুর ব্রিজ পার হয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পরে আবার দোয়ারিকা ব্রিজ পার হব। আমরা এখন রহমতপুর ব্রিজের উপরে। সেখানে ভালো কিছু পাওয়া গেল না। যাত্রী বেশিরভাগ নেমে গেল এয়ারপোর্ট। কারণ এইরুটে আবার চলে যাবে মুলাদী হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ ও অন্যান্য পূর্বাঞ্চলের লোকজন। রহমতপুর ব্রিজ পার হয়ে আমরা চলে আসলাম বরিশাল ক্যাডেট কলেজ। শেখালো কিছু যাত্রী নেমে গেল। গাড়ি ছেড়ে যেতে হঠাৎ গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেল। আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। চাকাটা পরিবর্তন করতে সময় লাগবে তাই কিছুক্ষণ এখানে বিলম্ব করতে হবে। (তাই বরিশাল দুর্গ সাগর ভ্রমণের দ্বিতীয় খন্ডটি এখানে শেষ করছি)।
Comments
-
Shafin pro 4 weeks ago
বরিশাল দুর্গাসাগর ভ্রমণে যাচ্ছি। ভ্রমণটি কেমন লাগলো দ্বিতীয় খন্ডটি আপনাদের সুপারিশ রইল