শিরোনাম: নিঃশব্দের নদী
গল্প:
একটি ছোট গ্রামে ছিল এক শান্ত নদী, সবাই তাকে বলত “নিঃশব্দের নদী”। নদীটা যেন কথা বলত না, শুধু বয়ে যেত ধীর-স্রোতে। গ্রামের সবাই বলত – এই নদী জানে মানুষের সব কথা, সব দুঃখ, সব অপেক্ষা।
গ্রামের এক ছেলে ছিল—চুপচাপ, নাম কেউ জানত না। সবাই তাকে ডাকত “ছোট্ট ভাই”। সে প্রতিদিন নদীর ধারে বসে থাকত। কখনো পাথর ছুঁড়ে খেলত, কখনো পানিতে নিজের মুখ দেখত। কিন্তু তার চোখে ছিল এক ধরনের গভীর অপেক্ষা, যেন সে কারো জন্য বসে আছে।
একদিন গ্রামের মানুষ লক্ষ্য করল, ছোট্ট ভাই আর আগের মতো হাসে না। তার মা ছিল অসুস্থ, ঘরে খাবার নেই, ঔষধ কেনার টাকা নেই। সে নদীর কাছে এসে বলল—
“আমি কি সত্যিই কিছু করতে পারব? নাকি সবকিছু এভাবেই চলতে থাকবে?”
নদীর পানি সেদিন একটু জোরে বইল। যেন নদী তাকে উত্তর দিল—
“চেষ্টা কর, হাল ছেড়ো না।”
ছোট্ট ভাই সিদ্ধান্ত নিল — সে গ্রামের মাটির মূর্তি বানাবে। প্রতিদিন নদীর কাদা নিয়ে, একটু একটু করে সে তৈরি করতে শুরু করল। প্রথমে কেউ পাত্তা দিল না।
কিন্তু কয়েকদিন পর গ্রামের মানুষ দেখল — তার বানানো মূর্তিগুলো যেন জীবন্ত। মুখে হাসি, চোখে গল্প, ভঙ্গিমায় অনুভূতির গভীরতা।
ক্রমান্বয়ে শহর থেকে লোক আসতে শুরু করল। ছোট্ট ভাইয়ের মূর্তি কিনতে লাগল।
ঔষধ হলো, ঘরেই রান্না হলো, তার মা ধীরে ধীরে ভালোও হয়ে উঠল।
একদিন কেউ জিজ্ঞেস করল—
“তুমি কিভাবে এত বড় শিল্পী হলে?”
ছোট্ট ভাই নদীর দিকে তাকিয়ে শুধু বলল—
“আমি কেবল শুনেছি… যখন কেউ কিছু বলে না… তখনও কিছু একটা আমাদের সাথে কথা বলে।”
নদী তখনও বয়ে চলছিল, আবার নিঃশব্দে।
শিখনীয় শিক্ষা:
নীরবতা কখনো শূন্যতা নয়। ধৈর্য, চেষ্টা, আর আশা থাকলে—
সবচেয়ে নিঃশব্দ অপেক্ষাও একদিন সফলতার স্রোত হয়ে ফিরে আসে।