Posts

গল্প

নিশি রাতের ভূতের কাহিনী

November 6, 2025

Suvasish dey Plabon

Original Author plabon dey

25
View

অনেককাল আগের কথা। এক নির্জন গ্রাম, নাম তার শিবপুর। গ্রামটি ঘন জঙ্গলের ধারে অবস্থিত, আর গ্রামের পাশ দিয়েই চলে গেছে একটি পুরনো, ভাঙাচোরা রাস্তা। দিনের বেলাতেও যে পথে লোক চলাচল করতে দুবার ভাবে, নিশিরাতে তো নয়ই।

​এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিল শঙ্কর। শহরে চাকরি করত, আর প্রতি সপ্তাহান্তে সে গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরত। একদিন কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে যাওয়ায়, তার গ্রামে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় একটা বেজে গেল। চারদিক নিঝুম, আকাশ ভরা ঘন মেঘ, চাঁদ ঢেকে গেছে। শুধু ঝিঁ-ঝিঁ পোকার একঘেয়ে আওয়াজ আর মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছিল।

​শঙ্কর সাইকেলে করে সেই নির্জন রাস্তা ধরে আসছিল। পথটা তার মুখস্থ, কিন্তু এমন ঘোর অন্ধকারেও কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। হঠাৎ, সে লক্ষ্য করল—তার সাইকেলের হেডলাইটের আলোয় পথের পাশে একটি অশ্বত্থ গাছ-এর নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।

​শঙ্কর প্রথমে ভেবেছিল হয়তো গ্রামেরই কেউ হবে। কাছাকাছি যেতেই সে দেখল, লম্বা, ফ্যাকাসে চেহারার এক লোক, পরনে ময়লা ধুতি-পাঞ্জাবি। মুখটা আবছা, তবে চোখ দুটো অন্ধকারেও যেন জ্বলজ্বল করছে। লোকটা হাত তুলে শঙ্করকে থামার ইশারা করল।

​ভয়ে শঙ্করের বুক ধড়ফড় করতে শুরু করল। এত রাতে এই নির্জন রাস্তায় কে হতে পারে? ইতস্তত করে শঙ্কর সাইকেলটা দাঁড় করালো।

​লোকটি ফিসফিস করে বলল, "ভাই, অনেক দূর থেকে আসছি। শরীরটা ভালো নেই। একটু এগিয়ে আমার গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে? গ্রামটা বেশি দূর নয়, এই বাঁশঝাড়টা পেরোলেই।"

​শঙ্কর ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু এত রাতে কাউকে 'না' বলার সাহসও পাচ্ছিল না, বিশেষত লোকটির গলার স্বরটা এমন অদ্ভুত ছিল যে মনে হচ্ছিল যেন অনেক গভীর থেকে আসছে। সে কোনোমতে বলল, "কোথায় যেতে হবে?"

​লোকটি আঙুল তুলে দেখালো—এক ঘন বাঁশঝাড়, যা পার হতে গেলে প্রায় আধঘণ্টা লাগবে। শঙ্কর দেখল, সেই বাঁশঝাড়ের দিকে একটা আবছা, সরু পথ চলে গেছে।

​"ওখানে তো কোনো গ্রাম নেই," শঙ্কর বলল।

​লোকটি এবার মুচকি হাসল। সেই হাসি দেখে শঙ্করের মেরুদণ্ড বেয়ে যেন ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। তার মনে হলো, লোকটির পা মাটি স্পর্শ করছে না, আর তার মুখ থেকে পচা পাতার মতো একটা গন্ধ আসছে।

​"আছে," লোকটি ধীরে ধীরে বলল, "তুমি গেলেই দেখতে পাবে।"

​শঙ্কর আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। সে দ্রুত সাইকেলে প্যাডেল করে দিল। লোকটা তাকে থামানোর জন্য হাত বাড়ালো, কিন্তু শঙ্কর বিদ্যুৎ গতিতে সেখান থেকে পালাতে চাইল।

​পেছন থেকে লোকটির চিৎকার শুনতে পেল সে—"দাঁড়াও... শঙ্কর... দাঁড়াও! নিশি ডাক দিলে পালাতে নেই!"

​শঙ্কর বুঝল, এটা ছিল নিশি ডাক! নিশি হলো সেই প্রেতাত্মা, যে রাতে মানুষের পরিচিত জনের গলায় ডেকে পথ ভুলিয়ে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় এবং তাদের গ্রাস করে। কিন্তু লোকটা তার নাম জানল কী করে?

​বাঁশঝাড় পেরিয়ে আসার সময় শঙ্কর একবারও পেছনে তাকায়নি। কিন্তু সে শুনতে পেল, তার খুব কাছ থেকে কেউ একজন ফিসফিস করে বলছে, "আজ না হোক... কাল তো ফিরতেই হবে... শঙ্কর..."

​শঙ্কর বাড়ি পৌঁছে দরজায় তালা দিয়ে সে রাতে কাঁপতে কাঁপতে রাত কাটিয়েছিল। পরদিন সকালে সে জানতে পারে, গ্রামের সবচেয়ে পুরনো মন্দিরটি যার নাম ছিল 'শঙ্কর মহাদেব', সেটি নাকি গতরাতে ভেঙে পড়েছে!

​শঙ্কর আর কোনোদিন নিশিরাতে সেই পথে গ্রামে ফেরেনি। তবে আজও গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে, সেই অশ্বত্থ গাছের নিচে নিশি দাঁড়িয়ে থাকে, আর চেনা গলায় মানুষকে ডাকে...

Comments

    Please login to post comment. Login