Posts

গল্প

নীলগীরি জঙ্গলের রহস্য

November 8, 2025

Zihad Rana

16
View

নীলগিরির জঙ্গলের রহস্য

লেখকঃ আদিব


বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, পাহাড় আর গা ঘেসে একটা জায়গা আছে — নীলগিরি।
দিনে এই জায়গাটা যেন স্বপ্ন মতন 
সূর্য উঠলে পাহাড়ের মাথায় মেঘ নেমে আসে, পাখিরা গান গায়,আর বাতাসে ঘাসের গন্ধে মন ভরে যায়।কিন্তু রাত নামলেই নীলগিরির রূপ বদলে যায়।
হঠাৎ করেই সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
কোথাও কোনো শব্দ নেই, শুধু দূরে পাহাড়ের ভিতর থেকে আসে এক রহস্যময় সুর —
বাঁশির মতো, কিন্তু মানুষের না… যেন কারো কান্নার মতো সুর 
এই কথা গুলো  বলছিল
রিদয়, রুবেল, অর্ণব আর নিশাত — চারজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধু। তখন তারা প্ল্যান করে তারা নীলগিরি জঙ্গলে ঘুরতে যাবে। এবং পরের দিন চার বন্ধু মিলে রওনা দেয় নীলগিরি জঙ্গলের  উদ্দেশ্য ।
তাদের প্ল্যান ছিল এক রাত নীলগিরিতে থেকে পরদিন বগালেকে যাবে।
তারা সে খানে পোঁছে একটা হোটেলে উঠে  —

তখন তারা কিছু লোকের কথা শুনতে পায় লোকেরা বলে, ওই জঙ্গলে নাকি রাতে কেউ ঢোকে না।
কারণ, একবার ঢুকলে আর কেউ ফিরে আসে না!
রুবেল হাসতে হাসতে বললো,
দোস্ত, ভূতের ভয় দেখাচ্ছে আমাদের!”

হোটেলের  মালিক, এক বয়স্ক লোক নাম তার গালিব , মুখটা গম্ভীর করে বললেন—
“ভয় না বাবা… সতর্কতা।
ওদের ডাকে ভুল পথে চলে যায়।”

রিদয় জিজ্ঞেস করলো,
“ওরা মানে?
হোটেলর মালিক নিচু গলায় বললেন—
ওরা মানে যারা এই জঙ্গলে মরেছিলো…
যাদের আত্মা এখনো শান্তি পায়নি।”
সবাই একে অপরের দিকে তাকালো।
নিশাত একটু চুপ করে ছিল, মুখে অদ্ভুত ভয়।
কিন্তু রুবেল হেসে বললো,
ভয় পেয়ো না, ভূত থাকলে থাক 
চলো দেখি কী হয়…”

পরের দৃশ্য তে দেখা যায়......

সন্ধ্যার পর, পাহাড়ের নিচে কুয়াশা জমতে শুরু করলো।
চারজন টর্চ আর ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
জঙ্গলটা খুব ঘন, গাছগুলো এমনভাবে ঝুঁকে আছে যেন আকাশ ঢেকে ফেলেছে।
মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আর দূরে কোথাও হালকা পানির শব্দ।
অর্ণব বললো,
এই জায়গাটা অদ্ভুত চেনা লাগছে…”

রিদয় জবাব দিলো,
চেনা লাগবে কেন,  তুই মনে হয় সপ্নে তুর গালফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে আসিস।  তার পর রিদয় বললো এখানে আমরা প্রথম বার এসেছি!”
নিশাদ বললো দেখ মামা এইসব বিষয় নিয়ে মজা করিস না আমার ভয় লাগছে 
তারপর  অর্ণব আর রিদয়  চুপ হয়ে  গেলো।

হঠাৎ তারা চারঁ জন  শুনতে পেলো 
দূর থেকে একটা বাঁশির সুর ভেসে আসছে।
না, সেটা সাধারণ কোনো বাঁশি না।কেমন যেন এক সুর, যা শুনে ঘুর লাগা কাজ করে ,
কিন্তু পা যেন নিজের থেকেই সেই দিকে এগোতে থাকে।রুবেল হেসে বললো কেউ হয়তো বাজাচ্ছে। চল দেখা যাক!”

সবাই হাঁটতে শুরু করলো সুরটার দিকে।
জঙ্গলের ভিতর ঢুকতেই বাতাস বদলে গেলো।
মাটি ভেজা, গাছের পাতায় শিশিরের বদলে লেগে আছে কাদা। আর একধরনের গন্ধ —
যেন পুরনো কোনো কবরের মাটি খুঁড়ে তোলা হয়েছে-

হতাৎ বড় একটা বট গাছে নিছে কিছু একটা দেখতে পায়। তখন তারা ওই দিকে টর্চ মারে। 
টর্চের আলোয় দেখতে পায়  —
বটগাছের নিচে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে  ।
মেয়েটির লম্বা চুল, সাদা জামা, ।
চুলের ফাঁক দিয়ে দেখা গেলো আধো হাসি, আধো কান্নার মতো মুখ।

রুবেল ক্যামেরা তুললো হাতে। “দাঁড়া দাঁড়া, ভাইরাল হবে এটা!”
কিন্তু সে ক্যামেরা অন করতেই স্ক্রিনে দেখা গেলো —
চারজন নয়, পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছে!
পঞ্চম জনের মুখ দেখা যাচ্ছে না, শুধু সাদা ছায়া।রিদয় চিৎকার করে বললো,
দৌড়াও!”
তারা দৌড়াতে শুরু করলো, কিন্তু পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
চারপাশে একই গাছ, একই ঝোপ, আর একই বাঁশির সুর।
যেদিকে যায়, মনে হয় ঘুরে  ফিরে আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে।
আর তখন তারা  শুনতে পায় কেউ ফিসফিস করে বলছে —তোমরা এসেছো অবশেষে…”

নিশাত পিছনে তাকালো।
সাদা পোশাকের মেয়েটা একদম পেছনে দাঁড়িয়ে।
তার চোখদুটো জ্বলছে আগুনের মতো জলছে।

বাতাস থেমে গেছে।
বৃষ্টি পড়ছে না, তবুও সবাই ভিজে যাচ্ছে।
আর দূরে নদীর দিক থেকে ভেসে আসছে এক  অদভূত হাসির আওয়াজ—
যেন সেই হাসির নিচে লুকিয়ে আছে মৃত্যু।
অর্ণব চিৎকার করলো, হোটের মালিক ঠিক কথায় বলেছিল। এই জঙ্গল থেকে কেউ বেঁচে ফিরতে পারে না!”

রিদয় টর্চটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
অন্ধকারে শুধু শোনা যাচ্ছিলো কারো গলার আওয়াজ—তোমরা আমার জায়গায় চলে এসেছো…এখান থেকে কেও  আর ফিরে যেতে পারে না তুরাও পারবি না।  তার পর ভয়ংকর একটা হাসির শব্দ । তারা আরো বেসি ভয় পেয়ে যায়। তারপর রুবেলের ক্যামেরাটা ভিজে কাঁদার ভেতরে পড়ে ছিলো।
স্ক্রিনটা ফেটে গেছে, কিন্তু এখনও হালকা লাল আলো জ্বলছে।
রিদয় নিচু হয়ে তুলতেই হঠাৎই ক্যামেরার স্পিকারে একটা কণ্ঠ শোনা গেলো—
ফিরে যাওয়ার সময় শেষ … দেরি হয়ে গেছে…”সবাই স্তব্ধ।
নিশাত কাঁপা গলায় বললো,কে… কে বললো এটা?”কেউ উত্তর দিলো না.
জঙ্গলের ভেতর শুধু বাতাসের শব্দ, আর বাঁশির মতো একটানা সুর।
---
তারা বুঝে গেলো — কিছু একটা অস্বাভাবিক।
তবু রুবেল বললো,এই জায়গাটায় ভিডিও তুলতে পারলে, চ্যানেলটা উড়ে যাবে ভাই! মানুষ বিশ্বাসই করবে না!”ভয় আর আতংক নিয়ে 
তারা আবার হাঁটা শুরু করলো।
এবার বাতাস ভারী, আর বাতাসের সঙ্গে মিসে আছে একধরনের  পচা মাটির গন্ধ। 
পথের দুই পাশে বড় বড় গাছ, ডালগুলো এমনভাবে ঝুলে আছে যেন কারো হাত।
হঠাৎ নিশাত থেমে গেলো।
“তোমরা গন্ধটা টের পাচ্ছো? এটা তো… ধোঁয়ার গন্ধ? রিদয় বললো,
ধোঁয়া নয়, এটা পোড়া চুলের গন্ধ…”

সবাই তাকালো সামনে—
দূরে এক জায়গায় আগুন জ্বলছে।
তারা কাছে গিয়ে দেখলো, একটা পুরনো মাটির চুল্লির সামনে বসে আছে এক বুড়ি মহিলা,
চুল এলোমেলো, চোখ ফাঁকা, আর ঠোঁট নড়ছে ধীরে ধীরে।

রুবেল সাহস করে বললো,
“মা, আপনি এখানে একা?”বুড়িটা মাথা তুলে তাকালো।তার চোখে কোনো চোখের মণি নেই।
সাদা ফাঁকা গর্তের মতো, রিদয় কাঁপা কণ্ঠে বললো,“কে আপনি। বুড়ি মাটিতে একটা আঙুল ঘুরিয়ে দাগ আঁকলো।
দেখা গেলো — ঠিক সেই জায়গায় একটা মানুষের ছায়া পড়লো,কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।বুড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“নীলগিরিতে কেউ মরেনা…এখানে শুধু হারিয়ে যায়,আর তারপর তারা হয়ে যায় জঙ্গলের রক্ষক…”হঠাৎ আগুন নিভে গেলো।
চারদিক অন্ধকার। বুড়ি কোথায় গেলো কেউ জানে না।
--
রুবেল টর্চ জ্বালালো —
এবার তাদের সামনে গাছের কাণ্ডে রক্তে লেখা একটা লাইন—

“Those who enter the forest after dusk… never find their way back.”

নিশাত কান্না শুরু করলো,চলো, আমরা ফিরে যায় !”কিন্তু ফিরে যাওয়ার পথটা আর  নেই।
যেদিক দিয়ে এসেছিলো, সেখানে এখন শুধু ঘন কুয়াশা আর গাছের ছায়া।
চারপাশে অচেনা শব্দ,  , ডাল গুলো নড়ছে , যেন ঝর হচ্ছে 
আর বাঁশির সুরটা এবার একেবারে কানে কাছে চলে এলো । কেউ হতাৎ বললো —
“তোমরা এসেছো… আমি তোমাদেরই অপেক্ষায় ছিলাম। রিদয় পেছনে তাকিয়ে দেখলো—একটা মেয়ে, ভেজা কাপড়ে, মাটি থেকে একটু ওপরে ভাসছে,
চোখ দুটো জ্বলছে, মুখে এক ভয়ানক হাসি।
সে হাত বাড়িয়ে বললো—
ফিরে যাও বলেছিলাম… এখন তোমরা আমার…”শিকার 
হঠাৎ টর্চ নিভে গেলো।চারদিক অন্ধকার আর অন্ধকার ।শুধু জঙ্গলের ভেতর থেকে কেউ ফিসফিস করছে—নীলগিরি এখন তোমাদের চেনে…” পালিয়ে কোনো লাব নাই তোমরা এখান থেকে কোথাও যেতে পারবে না। তার পর মেয়েটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

পরের দৃশ্য

রিদয়, রুবেল, অর্ণব, নিশাত —
চারজন এখন পুরোপুরি পথ হারিয়ে ফেলেছে।
চারপাশে কুয়াশা, গাছের ফাঁক দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছে না,
আর আকাশের তারাগুলোর জায়গায় শুধু কালো ধোঁয়া। রুবেল ফোনটা বের করে বললো,
“নেট নেই, কিন্তু ভিডিও রেকর্ড করতে পারি!”
অর্ণব চিৎকার করে উঠলো,পাগল! এখনো ভিডিও?”রুবেল কিছু উত্তর দিলো না,
শুধু ক্যামেরাটা চালু করলো…

কিন্তু স্ক্রিনে কিছু অদ্ভুত দেখা গেলো —
তাদের সামনে কিছুই নেই, অথচ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন মানুষ হেঁটে যাচ্ছে — ঠিক তাদের মতো!একই জামা, একই চেহারা, একই ভয়!নিশাত বললো, ওরা… কারা !”
রিদয় টের পেলো,জঙ্গলের ভেতর শুধু তারা নয় —
তাদের সাথে আরো অনেকে  ঘুরে বেড়াচ্ছে,
যারা এই নীলগিরিতে একবার ঢুকেছে তারা  আর বের হতে পারেনি।
---
হঠাৎ ফোনে একটা অচেনা কল এল।
ডিসপ্লেতে লেখা — “Unknown – Nilgiri Signal”
রুবেল ভয়ে  কাঁপতে কাঁপতে কল টা  ধরলো।

ফোনের ওপার থেকে সেই একই বাঁশির সুর,
তারপর এক নারীকণ্ঠ— তোমরা আমার ঘর খুঁজে পেয়েছো…
এখন আর ফিরে যেতে পারবে  না…”

রুবেল ফোনটা ছুঁড়ে ফেললো।
কিন্তু ওর মাথার ভেতর সেই কণ্ঠ বাজতে লাগলো,যেন শব্দ না, কেউ ভিতর থেকে কথা বলছে—“আমি একসময় বেঁচে ছিলাম…
আমার নাম ছিল ‘অর্পিতা’…
আমাকে এই জঙ্গলেই কবর দেওয়া হয়েছিলো… কিন্তু আমার আত্যা মুক্তি পাইনি ”রিদয় তাকিয়ে দেখলো,
জঙ্গলের মাঝখানে একটা পুরনো কবর।
তার পাশে ভেজা চুলের এক মেয়ে বসে আছে,
সাদা পোশাক, রক্তে মাখা পা,
আর চারদিকে উড়ছে নীল কুয়াশা। সে মৃদু কণ্ঠে বললো—
“তোমরা তো ভালোবাসতে জানো না…
তাই এই জঙ্গল তোমাদের নিজের করে নেবে…
রুবেল দৌড়াতে লাগলো, অর্ণব পেছনে চিৎকার—ওদিকে যাস না! ওটা রাস্তা না!”
কিন্তু ওরা যা ভাবছে রাস্তা,
সেটা ছিল নদীর ধারে নেমে যাওয়া পিচ্ছিল ঢাল।

রুবেল পা পিছলে নিচে পড়ে গেলো।
জল ছিটকে উঠলো,
আর তার সাথে অদৃশ্য হলো রুবেলের চিৎকার।
--সে পানির অতল গভীরে হারিয়ে যায়

নিশাত অজ্ঞান হয়ে পরে  গেলো।রিদয় তাকে ধরে রাখলো,কিন্তু চোখের সামনে হঠাৎ গাছের ডালে ঝুলতে দেখলো রুবেলের শরীর।
চোখ খোলা, মুখে হাসি, আর  তখন সে  ফিসফিস— করে বললো 
ভয় পেয়ো না… ওরা এখন আমাদের দলে…”
রিদয় নিশাতকে টেনে নিয়ে ছুটলো। অর্নব  ও তাদের   পিছু ছুটতে লাগলো -

কিন্তু যত দৌড়ায়, একই জায়গায় ফিরে আসে।প্রতিবার ঘুরে দাঁড়ালেই দেখে,
গাছের নিচে সেই মেয়েটি — অর্পিতা,
হাসছে। রিদয় চিৎকার করে উঠলো—“তুমি কী চাও আমাদের থেকে!”

মেয়েটি ধীরে ধীরে বললো—শুধু একটাই জিনিস…কেউ যেন আমার গল্প ভুলে না যায়…”
তারপর চারদিক আলোয় ভরে গেলো।
সব নিস্তব্দ।


পরের দৃশ্য তে দেখা যায়


স্থানীয় পুলিশ পাহাড়ের পাশে একটা ফোন পায়।
ভেতরে রেকর্ড করা ভিডিও —
কিছু কুয়াশা, কিছু চিৎকার, আর শেষে
একটা মেয়ের কণ্ঠ—

-welcome  to the Forest of Nilgiri…”


চার বন্ধুর কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কখনো তাদের হোটেল রুমে পাওয়া গেছে শুধু একটা নোট—

We saw her.She was real.”

আজও নীলগিরির সেই পথে কেউ গেলে,
রাতে ফোনে এক অচেনা কল আসে —
ডিসপ্লেতে শুধু লেখা থাকে—

“Nilgiri Signal Connected.”

আর ওপার থেকে শোনা যায়—তোমরা এসেছো… আমি অপেক্ষা করছিলাম…”


“The Forest of Nilgiri” — A story by Adib Hasan.

Comments