শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা বেশ কিছু বই বাংলা একাডেমিকে দিয়ে গিয়েছিলেন সংরক্ষণের জন্য। একাডেমি সেসব বই কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছে। নানা হাত ঘুরে সেসব বই চলে গেছে দূর্লভ বস্তুর বেচাকেনা গ্রুপের কাছে। সেখানে কোনো কোনো বইয়ের দাম উঠেছে লাখ টাকা। গ্রন্থাগারের বৈশ্বিক বিধান অনুযায়ী মোহাম্মদ গলাম আজমের বাংলা একাডেমি এসব বই বিক্রি করার আগে শহীদ জননীর পরিবারের সাথে আলোচনা করারও দরকার মনে করেনি। নীলক্ষেত থেকে ক্রেতারা ট্রাংক বুঝাই অমূল্য সেসব বই জলের দামে সংগ্রহ করেছে। এখন লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছে।
তবু ভালো জনসমক্ষে মব করে ইতিহাসের বড় সাক্ষ্য দুর্লভ এই বইগুলো অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে ফেলা হয়নি। একাডেমি ইতিহাসের প্রতি এইটুকু করুণা করেছে -এটাই সান্ত্বনা! মুক্তিযুদ্ধকে এভাবে আপনারা ছুঁড়ে ফেলতে না চাইলে -আপনারা যে সেই আপনারা তা প্রমাণ হবে কেমনে?
আফগানিস্তানের বামিয়ান উপত্যকায় বুদ্ধগণ নামে দুটি স্মারক বৌদ্ধ রিলিফ ছিল। ভাস্কর্যগুলি সোয়াত নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক গান্ধারের গ্রীক-বৌদ্ধ শিল্পের ধ্রুপদী মিশ্র শৈলীর পরবর্তী বিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে। ২০০১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মোল্লা ওমরের নেতৃত্বাধীন তালেবান সরকার রিলিফগুলো ধ্বংস করে দেয় -যাতে কেউ তাদের সম্মান জানাতে না পারে। ২০০৩ সালে বিধ্বস্ত ওই বামিয়ান রিলিফগুলোই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
চলতি বছর অক্টোবরে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতে এলে এখানকার রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ব্যাকড্রপ হিসেবে ওই রিলিফের পোর্ট্রেটকেই রাখে কাবুল সরকারের প্রতিনিধিরা! নিজের লাভে রিলিফ ভালো ষোলোআনা, অন্যথায় দেখতে নারি। কী স্ববিরোধিতা!
বাংলাদেশের আজকের বাংলা একাডেমি প্রশাসন আর বামিয়ান উপত্যকার তালেবান -আলাদা কিছু নয়। কাজেই লেখক মঈনুল আহসান সাবের খুব যথার্থই বলেছেন, অথর্ব ডিজিকে তার পুরনো জায়গায় ফেরত পাঠানো হোক। এত ফালতু ডিজি বাংলা একাডেমি সম্ভবত আগে কখনও পায় নি।
বাংলা একাডেমি শহীদ জননীর বইগুলোর এই হাল করবে জানলে আমার মতো লাখো মানুষ যেকোনো মূল্যে বইগুলো নিজের সংগ্রহে নিত। জাহানারা ইমামকে ধারণ করবার ক্ষমতা মোহাম্মদ গোলাম আজমের বাংলা একাডেমির নেই।
লেখক: সাংবাদিক
৮ নভেম্বর ২০২৫