বিভ্রান্তির দিন
রিশান সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিল। ঘড়ির কাঁটায় ৮টা ৪৭ বাজে। ক্লাস নেই, টিউশন নেই—তাই আলসেমি করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকল। Facebook খুলেই চোখ আটকে গেল এক ছবিতে—
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার, তার ছবির ওপরে বড় হরফে লেখা:
"ঘুষখোর শিক্ষকের মুখোশ খুলে গেল!"
ছবির নিচে হাজার খানেক রিয়্যাকশন, শেয়ার, কমেন্ট।
একটা কমেন্টে লেখা—
“এসব স্যারদের জুতা পেটা করা উচিত।”
আরেকজন লিখেছে—
“এইরকম শিক্ষকই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করছে।”
রিশান না ভেবে শেয়ার দিল।
নিজেই ক্যাপশন যোগ করল—
“শিক্ষার নামে ব্যবসা বন্ধ হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
একটু পর ছোট বোন রিমি ঘরে ঢুকে বলল,
— “ভাইয়া, এই যে স্যারটা, উনি তো আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ে থাকেন না? তুমি তো একবার বলেছিলে উনি ভালো পড়ান।”
রিশান বলল,
— “ভালো পড়ানো আর ভালো মানুষ হওয়া এক জিনিস না। পোস্টটা দেখিস না? সবাই বলতেছে... ওই স্যার ঘুষ নেয়।”
রিমি মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল।
দুপুরে রিশান ক্যান্টিনে গেলে বন্ধু রাহাত বলল,
— “তুই শিওর ওই স্যার ঘুষ খেয়েছে? কেউ কি চোখে দেখেছে?”
রিশান বিরক্ত হয়ে বলল,
— “দেখ, সবাই বলতেছে। এইসব তো হুট করে ভাইরাল হয় না।”
রাহাত চুপ করে তাকিয়ে রইল।
বিকেলবেলা ভার্সিটির এক নোটিস বোর্ডে বড় করে একটি চিঠি টাঙানো হয়েছে—
স্যার নিজে লিখেছেন,
“আমি একজন শিক্ষক, আর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব ছিল ছাত্রদের গড়ে তোলা—not বিচার শোনা।
আমাকে দোষী ভাবা যায়, কিন্তু সত্য জানার আগেই যদি সমাজ রায় দিয়ে দেয়, তাহলে কে নির্দোষ?”
— মোঃ মঈনুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
রিশানের মুখ শুকিয়ে গেল। সে কিছু বলতে পারল না।
রাতে বিছানায় শুয়ে রিশান একা একা ভাবল—
“আমি কি সত্য জেনেই পোস্ট দিছিলাম?
নাকি শুধু সবাই দিচ্ছে বলে আমিও দিলাম?”
সে উঠে মোবাইলটা হাতে নিল, নিজের পোস্টটা দেখল।
তিনশো লাইক, বিশটা শেয়ার, কয়েকটা কটু মন্তব্য।
তার ভেতরে প্রশ্ন জেগে উঠল—
“আমি কি নিজের মতো করে চিন্তা করতে জানি?
নাকি আমি অন্যদের ধারণার দাস?”
সে জানে না উত্তর।
কিন্তু এটাই হয়তো তার প্রশ্ন তোলার শুরু।
চিন্তার প্রশ্ন:
- আপনি কখনো কাউকে ভুল বুঝে মন্তব্য করেছেন কি, যাচাই না করেই?
- যখন সবাই কিছু একটা বিশ্বাস করে, আপনি কি ভিন্নভাবে চিন্তা করেন?
- সত্য জানার আগেই বিচার করা—এটা কি ন্যায়, নাকি কুৎসিত স্বভাব?