বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির নিজস্ব ভূখণ্ড হচ্ছে বাংলাদেশ। এই ভূখণ্ড স্বাধীন ও সার্বভৌম। ঢাকা হচ্ছে এর কেন্দ্র। তাই সিম্বোলিক কথা হচ্ছে, ঢাকাই বাংলাভাষীদের সাংস্কৃতিক কেবলা। আর এই সিম্বলের প্রাণ ভ্রমরা হচ্ছে পূর্ব্ব-মৈমনসিংহ। এখানে এখনো বিশুদ্ধ জনগণের সংস্কৃতি রয়ে গেছে। এই বিশুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতির টেক্সট হিসেবে আমরা মৈমনসিংহ-গীতিকাকে নিতে পারি।
মৈমনসিংহ-গীতিকার ভূমিকায় দীনেশচন্দ্র সেন পূর্ব্ব-মৈমনসিংহ সম্পর্কে লিখেছেন, "প্রাগজ্যোতিষপুরের প্রভাব এবং মুসলমান-বিজয় এতদুভয়ের অন্তর্ব্বর্ত্তী দুই-তিন শতাব্দী কাল অপর-এক রাষ্ট্রীয় মহাশক্তি এই পূর্ব্ব-মৈমনসিংহ দেশটিকে গ্রাস করিতে চেষ্টা পাইয়াছিল। কিন্তু সেনবংশীয় রাজগণ পশ্চিম-মৈমনসিংহ অধিকার করিলেও বহু বিল সমন্বিত, নদীমাতৃক, বর্ষায় দুর্গম ও অরণ্যবহুল পূর্ব্ব প্রদেশ কিছুতেই আয়ত্ত করিতে পারেন নাই। সুতরাং এই পূর্ব্ব-মৈমনসিংহ চিরকালই সেনবংশ-প্রতিষ্ঠিত নব ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম ও কৌলীন্য হইতে স্বীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া আসিয়াছিল।"
এই পূর্ব্ব-মৈমনসিংহ হচ্ছে, উত্তরে গারো পাহাড় ও সুসং দুর্গাপুর ও দক্ষিণে নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের অন্তর্ব্বর্তী পল্লীসমূহ। এই অঞ্চলটি ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবমুক্ত। পরবর্তীতে মুসলিম শাসনামলেও এই ভূখণ্ড পূর্ণ রূপে অজেয় থেকে যায়। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি এই ভূখণ্ডের সংস্কৃতি স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছে। এখানে জনগণের সংস্কৃতি বিদ্যমান আছে।