আমরা ঘুমিয়ে আছি কাছারি ঘরে। ঘুম ভাঙতেই গানের শব্দ। বাড়ির উঠানে মনে হচ্ছে গান বাজতেছে। টপ করে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। উঠে দেখি আমার বিছানায় সবাই ঘুমিয়ে আছে বাচ্চারা। তাড়াতাড়ি আমি সবাইকে উঠিয়ে নিলাম। এই তোরা তাড়াতাড়ি উঠ খালাতো ভাই ঘুমাতো ভাই যে যেখানে আছিস তাড়াতাড়ি চল ওদিকে গান-বাজনা শুরু হয়ে গেছে বিয়ে। কারণ আজকে বড় মামার গায়ে হলুদ। আমরা সবাই হৈচৈমৈচৈ করে বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম। দরজা-জানলা খুলে ফেললাম সব। কেউ চোখ বলতেছি কেউ মুখ মুছতেছি। দরজা খুলে টুয়ালের কাছে চলে গেলাম। সবাইকে বললাম একজন চাপাও একজন মুখ ধো। তাড়াতাড়ি কর বেশি দেরি হলে ওদিকে গান ওদিকে গিয়ে গান ধরতে পারবো না। ধুব্ধভ সবাই টিউবল চাপছে কেউ হাত ধুইতেছি কেউ মুখ ধুইতেছে কারাকারি করে তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে ফেললাম। আমরা সবাই হৈচৈ হইচই করে কাছাকাছি করে তাড়াতাড়ি উঠানের দিকে চলে গেলাম। উঠানো গিয়ে দেখি গ্রামের মহিলারা মেয়েরা বসে গান গাচ্ছে। আমরাও সবাই ওখানে মেয়েদের সাথে বসে পড়লাম ছোটরা। কিছু ভুল পরে দেখি। খালপাড়ে ব্যান্ডওয়ালা বিয়ার বাদ্য বাজাতে বাজাতে বাড়ির ভেতরের দিকে চলে আসতেছে। আমরা সবাই ব্যান্ডওয়ালাদের কাছে ছুটে গেলাম। বড় বড় ঢোল তবলা হারমোনিয়াম এবং বাঁশি সুরে সুরে বিয়ের বাজনা বাজাচ্ছে। ব্রেন্ডি শব্দকে আশেপাশের বাড়ির মানুষগুলো সব লাফিয়ে ছুটে এসেছে। রাত্রে অন্ধকারে আমি অনেক কিছুই খেয়াল করতে পারিনি বাড়ির সাজানো গুলো। এখন সকালে দেখি যে বাড়ির চতুর্দিকেই সাজানো গোছানো। কলা গাছ বিয়ের গেট তৈরি করা হয়েছে। গেটটি দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিল। লাল নীল হলুদ সবুজ বেগুনি সাত রঙের ঘুড়ির উড়ানোর চিন কাগজ দিয়ে চতুর্দিকে দড়ি দিয়ে টানানো হয়েছে পতাকা এর মত করে। মাঝে মাঝে বেলুন ফুলিয়ে তা দড়িতে টানানো আছে। ফাঁকে ফাঁকে কিছু কিছু জায়গায় বাস্তবিক কিছু সিজনাল ফুল দিয়ে সাজানো আছে। উপরের দিকে গেটের কিছু জোড়ি বিয়ে বাড়ির ভিতরে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। গ্রামের সাথে পরিবেশ মানিয়ে খুব সুন্দরী সাজানো হয়েছে। ব্যান্ড পার্টিরা বাড়ির দিকে এগিয়ে চলছে। আমরা সবাই তাদের পিছনে পিছনে হাটতে হাঁটতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। ব্যান্ড পার্টিরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে বিয়ের সানাই বাজানো শুরু করলো। বিভিন্ন শ্রেণীর মেয়েরা ছেলেরা বাড়ির উঠানে নাচের শুরু করল। সবাই হাত ধরে গোল হয়ে গেল। মেরা মুখে গান গাইতেছে আর নাচতেছে। আর ব্যান্ড পার্টিরা তাদের ব্যান্ড সংগীত বাজিয়ে যাচ্ছে এক এক সময় এক কাপ চুরি। বোটিং নিয়ে আসলো। পাটা নিয়ে আসলো। স্কুলা চাল কলার পাতা কাঁথি হলুদ গিলা মেথি নানান ধরনের গায়ে হলুদের সংজামা দিয়ে। নিয়ে বয়স্ক মহিলারা বাটার জন্য বসে পড়ল। এদিকে আমাদের বয়জোষ্ঠ রা সম্মানিত তারা হলেন আমার বাবা আমার খালু গ্রামের অন্যান্য মুরুব্বীরা। তাদের জন্য বারান্দায় চেয়ার দেওয়া হয়েছে। তারা এখনো চেয়ারে আসেননি বাড়ির ভিতরেই আছে। সবাই ফাটাফাটি করতেছে আবার কেউ হলুদ কিউ গায়ে লাগাচ্ছে নিজেরা নিজেরা ফুর্তি করতেছে। এখানে অবশ্য খাবারের কিছু না দেখে আমি ঘরের ভিতরে চলে গেলাম সবাইকে রেখে। কারন আমার সকালে ঘুম থেকে উঠলেই খাবারের দরকার হয়। তাই আমি ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়লাম দেখি ওখানে কি চলতেছে। গিয়ে দেখি সবাই ভিতরে টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করতেছে। ছোট খালা দেখে আমাকে বললো আয় বস তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। আমি কাউকে না ডেকেই নিজে বসে পরলাম খাবারের টেবিলে নাস্তা খাওয়ার জন্য সকালে। সকালের টেবিলের নাস্তা দেখে আমার মাথা ঘুরে গেল। এত রাস্তা আমি এখন কিভাবে খাব। কোনটা রেখে যে কোনটা খাব তাই ভেবে পাচ্ছিনা তাই শুরু করলাম কলা দিয়ে। আমার অবশ্য সব সময় একটা জিনিসই খেয়াল থাকে যে। টেবিলের যা কিছু আছে সব টেস্ট করতে হবে। তাই আমি প্রথমে একটি কলা খেলাম। এরপরে প্রতিটা প্লেট থেকে একটি একটি করে পিঠা আমার পলিটে নিলাম। একটি একটি করে নিতে গিয়েও আমার 14 থেকে 15 টি পিঠা এটা আমার প্লেটে ভরে গেল। পিঠাগুলো আমি হু ভাব করে খেয়ে ফেললাম। এরপরে মিষ্টিগুলো নিলাম। রুটি খাওয়ার তো আর সময় পেলাম না। কারণ ওটা তো আমার প্রতিদিনেরই খাবার বাসায় খাই। গ্রামের ভিতরে যে এত ধরনের পিঠা তৈরি হয়। বিয়ে বাড়ি না আসলে অনেক সময় বোঝাই যায় না। তোর পিঠাগুলোর বর্ণনা না দিলে আপনারা অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন না যে কি পিঠা তৈরি করা হয়েছিল। এবং কত সময় নিয়ে এসব পিঠা তৈরি করতে হয় এতগুলো মানুষের জন্য তা ভেবে চিন্তে দেখুন। একটি পিঠা হল পাপড়ের মতো যা গাছের পাতা থেকে সাজি তৈরি করা হয়েছে তা হল পাপড় পিঠা। এটি করতে খুবই সময় লাগে। চালের গুঁড়ো দিয়ে কি পিঠাটি তৈরি করে রোদ্রে শুকিয়ে তারপরে ডুবন্ত তেলের ভাজতে হয়। পরে চিনি শিয়া দিয়ে খাবার তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয়র পিঠা হল চিনি শিরায় ভিজানো পিঠা। পিঠাটি ময়দা দিয়ে খামিল করে তৈরি করতে হয়। এগুলো বিভিন্ন রকম স্বাদ আছে সাজে তৈরি করে গরম তেলে ভিজে নিয়ে শিরাতে ভিজাতে হয়। রাত্রি ভিজালে সকালে দেখবেন এই পিঠাটি পুরা ফুলে মিষ্টি মত নরম হয়ে গেছে। এই পিঠাটি খেতে খুবই মজা। পিঠা তিন পিঠা টি হলো রুটির মত বানিয়ে তা ভিন্ন সাজে কেটে তার ভিতরে নারিকেলের বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে তৈরি নারিকেল গরম করে ভেজে এই পিঠাটি তৈরি করা হয়। পিঠা চার এই ভিডিওটি হলো ময়দা গুলে তার ভিতরে বিভিন্ন রকম খাবারের মিষ্টি দিয়ে এক চোখ দিয়ে জিলাপির মত তেলে ভিজে করাকরি এই পিঠাটি তৈরি করা হয়। এভাবেও অনেক রকম পিঠা তৈরি করা ছিল যা 14 থেকে 15 রকমের। এরপর আছি বাড়িতে বসে তারা যেসব মিষ্টি তৈরি করেছিল। তার ভিতরে ছিল রসগোল্লা রসমালাই সন্দেশ জিলিপি বরফি দুই নানান ধরনের দুধ জাতীয় যেসব খাবারগুলো তৈরি হয় সেসব মিষ্টি খাবারগুলো। এগুলো খেতে আমার সব এক পিসের বেশি খেতে পারলাম না। এরপর তো শীতের রসের নাস্তা চুই পিঠা খোলা পিঠা ভাপা পিঠা পাটিসাপ না পিঠ ইত্যাদি। এখন বলুন এতসব খাবার যদি সকালের নাস্তা হয়। তাহলে আমরা যে শহরের সাধারণত সকালে রুটি কলা জেলি ডিম ভাজি দিয়েনাস্তা করি। তাকিয়ার এখানে খেতে ইচ্ছে করে। কনডেন্স মিল্কের চাপ তো দূরের কথা। এখানে সকালের চা হল গরুর দুধের চা। এমন চাঁ তৈরি করা হয়েছে মেহমানদের জন্য যা চায়ের কাপের উপরের রং দেখলেই আপনি অবাক দুধের সর পড়ে আছে ঘনঘন ওপারে একটু ঘিড় মত হলুদ হলুদ ভাসতেছে রংটা সাদা হলুদের মত চার কাপের দিকে তাকিয়ে দেখি শুধু দুধেরই ঘেরান আসতেছে। যাই হোক খাবারের নিয়ে এখন আর আলোচনা করতে যাব না কারণ ওদিকে আমাদের বড় মামার গায়ে হলুদের অনেক কাজ দেখার বাকি রয়ে গেছে। উঠোনে গিয়ে দেখি একটা গর্ত করতেছে ছোট ধরনের। আমি জিজ্ঞেস করলাম এটা দিয়ে কি হবে। আমার ছোট খালা বলল তুই চুপ করে বস শুধু দেখে যা। ওদের সাথে তুই গান গাইতে পারিস না আমার ছোট খালা বলে। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম গর্তের ভিতর এক কলস পানি ঢেলে দিল। এরপরে দেখি একটা শোনার আংটি আনলো একটা রুপোর আংটি আনল। ছোট খালা দু দুটি চুরি হাত থেকে খুলে ওই পানির ভিতর ছেড়ে দিল। আর আরেকটি দুটিও ফেলে দিল। শেষ সময় অবশ্য ভিডিও করার কোন বালাই ছিল না বিধায় আজকে আপনাদের ভিডিওটি দেখাতে পারলাম না। এদিকে ক্যামেরাম্যান ও নাই যে ছবি তুলতে হয় পারবে। ধীরে ধীরে পূর্ব আকাশে সূর্য উঠে আস্তে আস্তে উঠোনে সব জায়গায় সূর্য ভরে গেল রোদে। মা ডেকে বললো বড়মিয়া কি ডাকো। কারন আমার মা ওই বাড়ির সবচাইতে বড়। এদিকে যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই। কারণ চেয়ারম্যান সাহেব সকালবেলা সবাই দেখছে সামনে চেহার পেতে কাচারি ঘরের বারান্দায় বসে কি যেন মিটিং করতেছিল। এদিকে যে মিটিং সেরে সে কোথায় চলে গেছে তারই কোন খবর নেই। বাড়ির ভিতরের সবাই হইচই করে গেল। বড় মামাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে পাশের বাড়ির মামা এসে বলল তাকে বাজারে দেখেছি। নানি বলল তাড়াতাড়ি ওকে ধরে নিয়ে আস। ওকে তো রাত্রি বলেছি তুই আজ কোন ঘর থেকে বের হবি না। নানি রেগে গিয়ে পাশের বাড়ির মামাকে বলতেছে তুই তাড়াতাড়ি যা। তখনকার যুগে তো আর মোবাইল ছিল না যে হাতে হাতে মোবাইল থাকবে আর একজন আরেকজনকে ফোন দিয়ে আসতে বলবে। পাশের বাড়ির মামা বলল খালা আমি তাকে আনতে পারবো না। আমি তাকে বললে আমাকে এক ধমক দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। হালা এখন রেগে গিয়ে বল। আমার খালু কে বলল তুমি তাড়াতাড়ি যাও তাকে নিয়ে আসো।খালু আর পাশের বাড়ির মামা তাড়াতাড়ি ছুটে গেল বড় মামাকে নিয়ে আসার জন্য। এদিকে মা বলল তোমরা তোমাদের কাজ কর। আবার ব্যান্ড পার্টি ব্যান্ড বাজাচ্ছে। বাড়ির মহিলারা সবাই গান গাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে দেখি ব্যান্ডের সুর উচ্চস্বরে বাঁশ দিছে। আমার মনে হল বড় মামা চলে আসতেছে। আমি এগোতেই দেখি যে বড় মামা আসতেছে আমি দৌড়ে বড় মামার কোলে উঠে গেলাম।(নেটের সমস্যার কারণে খন্ড পঞ্চম এখানে শেষ করতি ছি।)
Comments
-
Shafin pro 3 weeks ago
গল্পটা সাজিয়ে গুছিয়ে নিলে একটি ধারাবাহ িক নাটক কে তৈরি করা যায়