Posts

গল্প

পান্তা বুড়ি

November 15, 2025

Purnima Oraow

66
View

পান্তা বুড়ি :-

গাঁয়েতে এক বুড়ি ছিল । তার মতো এমন গরিব কেউ কখনো দেখেনি । ভিক্ষা করে সে যে-কটি চাল পেত,ভাত রেঁধে চারটি রাতে বেলা খেত, বাকিগুলো পরদিন সকালের জন্য জল দিয়ে রাখত | সব দিন পানতাভাত খেত বলে, তার নাম ছিল পান্তা বুড়ি ।

একবার সেই গাঁয়ে এক চোর এসে উপস্থিত, বুড়ির পান্তার সন্ধান  পেয়ে সে রোজ রোজ তা খেতে লাগল, চোরের জালায় বেচারি তো অস্থির। একদিন বুড়ি  রাজার কাছে নালিশ করতে চলো ,যেতে যেতে পথে দেখল,একটা বেল পড়ে আছে। বেল জিজ্ঞাসা করল, বুড়ি, বুড়ি ,কোথায় যাচছ ?

বুড়ি :- চোরে পান্তা খেয়েছে ,তাই রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি।

বেল :- ফিরে যাবার সময় আমায় নিয়ে যেয়ো।

বুড়ি :- আচ্ছা। 

কিছু দূরে গিয়ে বুড়ি দেখল,একটা শিঙি মাছ,মাছ বললো ,বুড়ি,বুড়ি,কোথায় যাছো ?

বুড়ি :- চোরে পানতা খেয়েছে ,রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি ।

মাছ :- ফিরে যাবার সময় আমায় নিয়ে যেও। 

বুড়ি :- আচ্ছা থাকো।

আর কিছু দূর গিয়ে বুড়ি একটি সূচ দেখতে পেল ,সূচ বললো ,বুড়ি ,বুড়ি,কোথায় যাচছো ?

বুড়ি :- চোরে পান্তা খেয়েছে ,রাজার কাছে নালিশ করতে যাচ্ছি ।

সূচ :- ফিরে যাবার সময় আমায় নিয়ে যেও।

বুড়ি :- আচ্ছা, বেশ!

আর ও কিছু দূর গিয়ে বুড়ি দেখলো ,একখানা ছুরি পড়ে আছে, ছুরি জিজ্ঞেস করলো,বুড়ি,বুড়ি,কোথায় যাচছো ?এতক্ষন বুড়ি বেশ সহজভাবেই জবাব দিচ্ছিলো, বুড়ির মাথা গরম হয়ে উঠল। ছুরির কথার  উওরে সে  বিরক্ত হয়ে বললো,যথাযথ যাই না ,তোর তাতে কী?

ছুরি:- রাগ করো কেনো? একটা কথা শোনো -ফিরে যাবার সময় আমায় নিয়ে যেও। 

বুড়ি:-আচ্ছা আচ্ছা, সে তখন হবে।

শেষে রাজবাড়ির কাছাকাছি গিয়ে বুড়ি দেখল,পথের ধারে একটা কুমির  পড়ে আছে।কুমির বললো,বুড়ি,বুড়ি,কোথায় যাছো?

বুড়ির মেজাজ তখন আরও গরম। বললো,তোর কী ?যেথায় খুশি যাচ্ছি !যমের বাড়ি যাচ্ছি,তুই যাবি?

কুমির:-বাপরে বাপ -একেবারে যে আগুন!বলছি কি,ফিরে যাবার সময় আমায় নিয়ে যেও। 

বুড়ি:-বেশ,দেখা যাবে।

এরপর বুড়ি যখন রাজবাড়িতে পৌঁছল,তখন বেলা প্রায় শেষ হয়েছে ,সেদিন রাজা গিয়েছিলেন শিকারে।কাজেই, বুড়ির আর নালিশ করা হলো না।ফিরবার পথে সে কুমির, ছুরি,সূচ, শিঙিমাছ ও বেল নিয়ে এল। শিঙিমাছ বললো,আমায় পান্তার হাড়িতে রাখো।

বেল:-আমায় আগুনের ভেতর রাখো।

সূচ:-আমায় দেওয়ালে পুঁতে রাখো।

ছুরি:-আমায় উঠানের ঘাসে গুঁজে রাখো।

কুমির:-আমায় ঘাটে বেঁধে রাখো।

যার যেমন ইচ্ছা ,তাকে সেইভাবে  রেখে বুড়ি রাতে ঘুমিয়েছে, এমন সময় চোর এসে উপস্থিত। সে যেই পান্তার হাঁড়িতে হাত দিয়েছে ,অমনি শিঙিমাছের কাঁটার এক খোঁচা! আগুন-তাপ দেবার জন্য যেই উনানের ধারে গেছে,অমনি ফেল ফেটে চোখ অন্ধ। হাতড়াতে হাতড়াতে দরজার ধারে এসেছে ,অমনি কাদায় পা পিছলে দড়াম !আহা বেচারার আর শাস্তির শেষ নেই। দেয়াল ধরে উঠতে যাবে,অমনি সূচ বিঁধে রকতারকতি।উঠান দিয়ে পালাবে ,অমনি ছুরিতে পা কেটে খানখান ! ঘাটে নেমে হাত পা ধবে, অমনি একেবারে কুমিরের মুখে।কুমির চিৎকার করে উঠল-ও বুড়ি, তোর চোর ধরেছি।ও বুড়ি,তোর চোর ধরেছি ।

কুমিরের চিৎকার-বাপরে সে কী ভয়ানক ।বাঘের ডাক লাগে কোথায়!বুড়ি তো ধড়ফড় করে উঠে বসলো।তারপর লোকজন ডেকে ,চোরকে বেঁধে রাজার কাছে  হাজির করলো।রাজা তাকে এমন শাস্তি দিলেন যে,সে আর কী বলবো !!!!

Comments

    Please login to post comment. Login