সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুরাদনগর উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন বাজার। দু’শো বছর আগের নদীঘেঁষা প্রাণবন্ত বাজার এখন কেবল হাহাকার আর স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী।
একসময় ক্রেতা-বিক্রেতার গলা ফাটানো হাঁকডাকে মুখর ছিল চারদিক। নৌকার বাঁশি বাজত, বুড়ি নদীর ঢেউয়ে মিলত বাজারের জোয়ার। কুমিল্লার মুরাদনগরের সেই সিদ্ধিগঞ্জ বাজার এখন নিঃস্তব্ধ স্মৃতিচিহ্নে পরিণত। দুইশত বছরের বেশি পুরোনো বাজারের গায়ে লেগে আছে কেবল ঘাস, লতা আর নীরবতা। হাঁকডাকের জায়গায় এখন শোনা যায় পাখির ডাক, আর মানুষের কোলাহলের বদলে বয়ে চলে শূন্যতা।
বুড়ি নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এই বাজার। দুই শতকেরও বেশি সময় আগে নদীপথে আসা কার্গো ও নৌকা ভিড়ত এখানে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ভৈরব থেকে আসত পণ্য—শাক-সবজি, দুধ-মাছ আর শাড়ি কাপড়। আনন্দ আর ব্যস্ততায় ভরে থাকত সকাল থেকে দুপুর। ছোট-বড় সবাই আসতেন কেনাবেচা আর মিলনমেলায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ নামকরণ :
বাজারটির নামকরণ ও ইতিহাস মূলত স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
“সিদ্ধির” ও “গঞ্জ” শব্দের সংযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ” নামের উৎপত্তি
সিদ্ধির: কোনো ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব বা সাধককে নির্দেশ করে,। আর বাংলায় গঞ্জ বলতে বাজার বা বাণিজ্যিক এলাকা বুঝায়। অতএব, “সিদ্ধিরগঞ্জ” নামের অর্থ দাঁড়ায় “সিদ্ধির বাজার” বা “সাধকের বাজার”। স্থানীয় জনকথা মতে, এখানে অতীতে কোনো আধ্যাত্মিক নেতা বা মঠ ছিল, যার চারপাশে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছিল।
বাজারের পুরোনো নাপিতের গাছ, ঘোষদের মিষ্টির ঘ্রাণ আর জলকেলিতে মেতে ওঠা বুড়ি নদী—এখন শুধুই স্মৃতি। বর্ষাকালীন এই স্থানটি পর্যটনের জন্য দারুণ উপযুক্ত। প্রশাসন একটু নজর দিলেই এটি হয়ে উঠতে পারে কুমিল্লার এক দর্শনীয় স্থান।