দিনটি ছিল বর্ষাকাল টিপ টিপ বর্ষা পড়তেছে । বাহির থেকে বাসায় ফিরে এলাম। টেবিলের উপরে দেখি এক বাটি কালোজাম পড়ে আছে। মাকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল খেতে ইচ্ছা করলে খা। একটি জাম মুখে দিয়েই এত মধুর লাগল রসে টই টুম্বুর করা জাম গুলি খুব খেতে খুব মজা লাগতেছিল একটু লবণ নিয়ে হালকা একটু লবণ দিয়ে জামগুলো খেতে শুরু করলাম চেয়ারের উপর বসে। বাহিরে হালকা বৃষ্টি পড়তেছে। বের হবার কোন উপায় নেই। তাই এক বাড়ি জামপুরী খেয়ে ফেললাম। খেতে মনে হল আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা। একদিন এই জাম গাছের বিচি দিয়ে যদি গাছ লাগানো না হয়। তাহলে একদিন আমাদের দেশ থেকে জাম বিলুপ্তি হয়ে যাবে। বর্তমানে জাম গাছের চারা লাগানোর প্রচলন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাই রচনা লিখতে গিয়ে জাম গাছের খুব মনে পড়ে গেল। বর্তমানে সবাই জাম গাছ আম গাছ লিচু গাছ সবাই ছাদের উপরে টপে লাগানো শুরু করেছে কিন্তু মাটিতে যে এইসব ফলের গাছ লাগানো একান্ত খুবই দরকার তা আমরা সবাই ধীরে ধীরে বিলুপ্তি করে ফেলতেছি। কারণ মাটিতে না লাগালে কোন ফলের গাছ থেকে কাঠ তৈরি হয় না তা দিয়ে কোন ফার্নিচার বা অন্যান্য কাগজ কোন কাজই হয় না। তাই আমাদের গ্রামের বাড়ি একটি জাম গাছের কথা খুবই মনে পড়তেছে। জাম গাছটি ছিল এতই বড় যে নিচু থেকে নরমালি ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে।
আসুন আমরা সেই জাম গাছটি রচনা করি। জাম গাছ বলতে গেলে শিকর থেকে শুরু করে পাতা পর্যন্ত এমন কোন অঙ্গ পতঙ্গ নাই যে তা কোন কাজে লাগে না।
আসুন আমরা জামের বিচি দিয়ে শুরু করি। আপনি যে জামটি খাচ্ছেন সেই জামটির বিচি শুকিয়ে ভালো করে রোদ দিয়ে। এবিসিটি পানিতে সাত দিন বা তিন দিন ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন কিছুদিনের ভিতরেই জামের বিচি থেকে অংকুর বের হয়ে গেছে। বিচিটি ভালো করে স্যার যুক্ত মাটি গুঁড়ো করে তার ভিতরে রোপন করুন। ৫-৭ দিনের ভিতরে দেখবেন অঙ্কুরিত গাছটি ধীরে ধীরে আগা বের হয়ে গেছে। ১০-১২ দিনের ভিতরে দেখতে পাবেন যে গাছটি ১ ফুট অন্তত লম্বা হয়ে গেছে। এরপরে দেখবেন ধীরে ধীরে দুই দিকে পাতা ছড়িয়ে পড়তেছে হালকা সবুজ হয়। প্রতিদিন একটু একটু করে গাছটি উপরে পানি ছিটিয়ে দিন দুবেলা করে। গাছটিকে রীতিমত পরিচর্যা করলে দেখবেন এক মাসের ভিতরে গাছটি আপনার দুই থেকে আড়াই ফুট হয়ে গেছে। ও ধীরে ধীরে গাছটির চতুর্দিকে কলোছালে পরিণত হয়ে গেছে। এটিকে আমরা জামের চারা বা বাজার থেকে যাকে কিনে আনি সেই জামের চরা। পাতাগুলো একটু মোটামুটি শক্ত হলে চারাটি রোপন করার জন্য একটি ভালো জায়গা যেখানে রোদ পরে। এবং আশপাশে খোলামেলা আছে এরকম একটি জায়গা বেছে নি। বা পুকুরের পাড়ে হলে খুবই ভালো হয় লেকের পাড়ে হলে খুবই ভালো হয় বা যদি আপনার নতুন মাটির উপরে বেরিবাদের উপরে লাগানো হয় তাহলে খুব তরতর করে গাছটি লম্বা এবং বড় হয়ে যাবে। ই তো বললাম জাম গাছ কিভাবে চারা রোপন করতে হয় তা নিয়ে।
এখন যদি বলি জাম খেলে কি কি উপকার হয় আমাদের শরীরের জন্য তা লিখতে গেলে তো লিখে শেষ করা যাবে না। যদি আমাদের শরীরে প্রচন্ড জ্বর উঠে তাহলে জাম খেলে সে জ্বর সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে। জাম আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। জাম খেলে মুখের রুচি বাড়ে। পাকা জাম খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়। রোগীকে যদি নিয়মিত জাম খেতে দেওয়া হয় তাহলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়। বর্তমানে এক কেজি ভালো জামের দাম না হলেও ২০০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম।
এদিকে আমরা জাম তো খাবই কিন্তু জাম খেয়েই জামের বিচিটি যেন কখনো কোনদিন ফেলে না দেই। বর্তমানে দেখবেন বিভিন্ন কবিরাজ গান এই গ্রামের বিচি দিয়ে অনেক ওষুধ তৈরি করে থাকেন। সাধারণত বাজারে বানিয়ার দোকানে এবং ফুটপাতে অনেক ছোট ছোট দোকানে এই গ্রামের বিচির গুড়া পাউডার পাওয়া যায়। সাধারণত ফুটপাতে যারা শরবত তৈরি করে থাকেন। তাদের সরবতের ভিতরে ইসুবগুল বশির সাথে জামের বিচির পাউডার মিস করে শরবত তৈরি করে থাকেন। সাধারণত জামের বিচির গুলো ভালো করে শুকিয়ে যদি তা ভিজিয়ে পানি খাওয়া হয় তাহলে অনেক রোগের উপকার হয়। ও তার ভিতরে প্রধান হল যদি কারো রাত্রে জ্বর হয় সে ক্ষেত্রে জামের বিচির পানি সকালে খেতে পারে। রীতিমতো যামের বিচি রাত্রে ভিজিয়ে সকালে সেই পানি খেলে নানান ধরনের শরীরে সমস্যা দূর হয়ে যায়।
এবার আসি জানের পাতা দিয়ে আমরা কি কাজে ব্যবহার করতে পারি। জামের পাতা সাধারণত শুকিয়ে গেলে তা আমরা ভালো করে বস্তা ভরে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করতে পারি। আবার যদি জামের পাতা ভালো করে পড়ে থাই করে সেই ছাই কোন মাজনের সাথে মিশিয়ে দাঁতের ব্যবহার করি দাঁতের মাজন হিসাবে তাহলে দাঁত খুব মজবুত এবং ঝকঝকে হয়। সেই সাইডে দাঁত মাজলে সাধারণত দাঁত পড়া বন্ধ হয় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। জাম গাছের কচি পাতা যদি আপনি সাধারন তো তুলে আনেন। তাহা যদি আপনি খালি চিবিয়ে খান। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে প্রেসার থাকে ব্লাড প্রেসার থাকে তাহলে সেই রোগের জন্য এই কচি পাতা বা কচি পাতা পানিতে ভিজিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি যদি আপনি খান তাহলে আপনার ডায়বেটিস এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে।
এবার আসি আমরা জাম গাছের ছোট ছোট ডালগলো কি কি কাজে ব্যবহার করতে পারি। সাধারণত ডালপালা গুলো দিয়ে আমরা বিভিন্ন গাছের জন্য ঝাকা তৈরি করতে পারি। যেমন লাউ গাছের ঝাকা কুমার গাছের ঝাঁকা পুই গাছের ঝাকা করোললা ঝাঁকা মৌসিম গাছের ঝাঁকা বিভিন্ন ঝাকার কাজে আমরা তরিতরকারি কাজের ঝাকা হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। পুকুরের ভিতরে ডালগুলো ফেলে রেখে সেখানে মাছ আটকাবার জন্য এই ডালপালা খুবই প্রয়োজন হয়। সাধারণত আমরা গ্রামের খালে দেখেছি যে খালের ত্রি মোহনায়। এই ছোট ছোট ডালপালা গুলো ফেলে রেখে নদী থেকে আসা খালে যে মাছগুলো থাকে। সেই মাছগুলো ত্রি মোহনায় আটকা বার একটি পথ হল এই ডালপালা ফেলে রাখা পানিতে। এছাড়া নদীর চরের পাড়ে ভাটির সময় এই ডালপালা গুলো ফেলে রাখলে জোয়ারের সময় যে পানি ওঠে সেই পানিতে যে মাছ আসে এই ডালপালার ভিতরে মাছগুলো জমাট হয়ে চুপটি মেরে বসে থাকে। এবং এই ছোট ছোট ডালপালা গুলো শুকিয়ে আমরা জ্বালানি কাজে ব্যবহার করতে পারি। যাইহক ডালপালার গুনাগুন বর্ণনা করতে গেলে শেষ হবার নয়।
এবার আসি আমরা জাম গাছের কাঠ দিয়ে আমরা কি কি তৈরি করতে পারি। সাধারণত জাম গাছ ৫০ থেকে ৭০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে এর গোলাকার্ বা ব্যার ২০ থেকে ১৫ ফুট হতে পারে এবং পুরাতন যত জাম গাছ আছে তার কার্ড গুলো খুবই সারি হয়ে থাকে। জাম গাছের কাঠ চিরে আমরা সাধারণত তক্তা করি তা দিয়ে ফার্নিচার তৈরি করি। খাট আলমারি টিভিতে আর বিভিন্ন আসবাবপত্র। জাম গাছের চৌকাট দিয়ে সাধারণত ঘরের দরজার চৌকাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জানালার চৌকাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টিনের ঘরের যে আরা থাকে সেই আরা ব্যবহার করা হয়। এবং লম্বা জাম গাছ থাকলে সেই জাম গাছের চৌকাঠ দিয়ে। টিনের ঘরের দোতালা আরা হিসেবে ব্যবহার করা হয় কারন জাম গাছের কাঠ খুবই শক্ত হয়ে থাকে। জাম গাছের তক্তা দিয়ে দরজার পাল্লা তৈরি করা হয়। এবং তাহা অনেকদিন দরজায় টিকে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে জাম গাছে কাঠ দিয়ে আমরা নানান ধরনের সাটারিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘরবাড়িতে আসবাবপত্র এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করে থাকি। মোটকথা জাম গাছের কাঠের তুলনা হয়না।
এখন আসি জাম গাছের শিকড় দিয়ে আমরা বাকি কি কাজ করতে পারি । জাম গাছের শিকড় যদি সাধারন তো খুব মজবুত এবং শক্ত হয়ে থাকে তাহা সাধারণত টেবিলের উপরের পাল্লা তৈরি করা হয়। যা অনেকদিন পর্যন্ত গোল টেবিল হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। জাম গাছের শিকড় দিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট টেবিলের পায়া তৈরি করা হয়। এবং বেশি শুকিয়ে গেলে তাহা ব্রিক ফিল্ডে জ্বালানির কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। জাম গাছের কচি শিকড় থেকে বিভিন্ন ওষুধের কাজে ব্যবহৃত করে থাকেন সাধারণত কবিরাজ ঘর।
মোট কথা বলতে গেলে জাম গাছের পাতা থেকে শুরু করে ফলমূল কান্ড শাখা শিকড় কাঠ কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না কাজের বাহিরে বা মানুষের প্রয়োজনের বাহিরে।
তাই বর্ষার দিনে একবাটি জাম খেতে খেতে আমার মনে এসে গেল যে জাম গাছের কোন জিনিসটা মানুষের ব্যবহারে বা কাজে প্রয়োজন হয় না।
এই ছিল জাম গাছ নিয়ে রচনা র ইতি।