Posts

গল্প

ইজরায়েলের পরাজয়।

November 16, 2025

Md Josam

Original Author MD samim sikdar

Translated by MD Shamim sikdar

28
View

ইজরায়েলের পরাজয়

গাজা উপত্যকার আকাশে সেদিনও ধুলো উড়ছিল। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে যারা বেঁচে ছিল, তাদের চোখে ছিল শুধু একটাই প্রশ্ন—কবে শেষ হবে এই আগুনের সময়? কয়েক হাজার পরিবার রাতের পর রাত ঘুমায়নি। শিশুরা আর রাতে কাঁদত না, কারণ কান্নার শক্তিটুকুও ছিল না আর। পৃথিবী দেখে গেছে বহু যুদ্ধ, বহু অবিচার, কিন্তু গাজার রাস্তায় যে ছাইয়ের গন্ধ ভাসছিল, সেটা যেন মানবতারও শেষ নিঃশ্বাস।

ইসরায়েল ভেবেছিল তাদের শক্তি অটল। আকাশে লোহার গম্বুজ, হাতে অগণিত অস্ত্র, পাশে পশ্চিমা শক্তির সমর্থন—সব মিলিয়ে তারা বিশ্বাস করতো তাদের ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু তারা ভুলেছিল, মানুষের ঘরে আগুন দিলে আগুন একসময় জ্বলে ওঠে অন্য জায়গায়ও। শক্তির সীমা আছে, কিন্তু অন্যায়ের ধ্বংসের গতি অশেষ।

যুদ্ধ চলছিল বহুদিন। প্রতিদিন নতুন করে আক্রমণ, প্রতিদিন নতুন তালিকা—কারা মারা গেল, কারা হারিয়ে গেল। কিন্তু এই সমস্ত অন্ধকারের মধ্যেই পরিবর্তন শুরু হয়েছিল ধীরে ধীরে। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ গোপনে সাহায্য পাঠাতে শুরু করল—ওষুধ, খাদ্য, যোগাযোগ যন্ত্র। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকানো মানুষেরা প্রথমবার অনুভব করল যে তারা একা নয়।

এরপর একদিন এমন এক মুহূর্ত এল যা ছিল ইতিহাস বদলানোর শুরু। বহু দেশের সাধারণ মানুষ একসাথে রাস্তায় নেমে গেল। লক্ষ লক্ষ মানুষ—মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাস্তিক—সবাই একসাথে জোরে উচ্চারণ করল, “যথেষ্ট হয়েছে।” পৃথিবীর বড় বড় রাজধানী একদিনে থমকে গেল মানবতার চাপে। এত মানুষের আওয়াজ কোনো সরকার উপেক্ষা করতে পারল না। বিশ্ব-মিডিয়া বাধ্য হলো সত্য দেখাতে।

একজন গাজার বৃদ্ধা, যিনি তিনবার ঘর হারিয়েছেন, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে শুধু বলেছিলেন, “আমাদের আর কিছু নেই হারানোর।”
এই একটি লাইন বিশ্বের বিবেক কাঁপিয়ে দিল।

ইসরায়েলের ভেতরেও ফাটল শুরু হলো। অনেক ইসরায়েলি নাগরিক প্রকাশ্যে বলতে শুরু করল—এটা যুদ্ধ নয়, এটা ধ্বংসযজ্ঞ। কিছু সৈন্য আদেশ অমান্য করল; তারা বলল, আর নিরপরাধ মানুষের দিকে বন্দুক তাকানো সম্ভব নয়। ইসরায়েলের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ল। দেশের ভেতরেই হাজার হাজার মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করল।

বিশ্বের বড় শক্তিগুলোও নিজেদের অবস্থান বদলে নিতে বাধ্য হলো। যারা আগে নিরব ছিল, তারাও চাপের মুখে ইসরায়েলের অবরোধ বন্ধ করার দাবি তুলল। সাহায্যের জাহাজগুলো এবার বড় বহর নিয়ে সমুদ্রপথে যাত্রা করল, এবং এত দেশের পতাকা একসাথে দেখে ইসরায়েলের নৌবাহিনী দ্বিধায় পড়ে গেল। তাদের সামনে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল—এত বড় মানবিক চাপ তারা ঠেকাতে পারবে না।

এদিকে গাজার ভেতরেও প্রতিরোধশক্তি আগের চেয়ে আরো সংগঠিত হলো। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও মানুষের মনোবল টলল না। তারা বলল, “ঘর যাবে, প্রাণ যাবে, কিন্তু আত্মসম্মান যাবে না।” এই মনোভাবই যুদ্ধের আসল মোড় ঘুরিয়ে দিল।

একদিন রাতের আকাশে হঠাৎ নীরবতা নেমে এল। যে আকাশে প্রতিদিন বোমার আলো দেখত মানুষ, সেদিন সেখানে ছিল শুধু শূন্যতা। কারণ ইসরায়েলের ভেতরে বিশাল রাজনৈতিক পতন ঘটেছে। স্বল্পসংখ্যক মিত্র আর বিশাল বৈশ্বিক বিরোধের কারণে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী পুরোপুরি চাপের মুখে পড়ল। তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ল, অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেল, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের হাঁটুতে বসিয়ে দিল।

অবশেষে এমন দিন এল যখন পুরো পৃথিবী এই ঘোষণা শুনল—ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে এবং গাজা থেকে সব সামরিক অভিযান স্থগিত করেছে।

মানুষ সেই খবর শুনে প্রথমে হতবাক হয়ে গেল। তারপর হাজার হাজার নারী-পুরুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্না শুরু করল। কারণ এটা শুধু এক দেশের পরাজয় নয়—এটা ছিল মানবতার বিজয়। এত প্রাণের মূল্যহীন মৃত্যু, এত চোখের জল—সবকিছুর প্রতিশোধ হিসেবে নয়, বরং ন্যায়ের জয় হিসেবে ইতিহাস সেই দিনটিকে লিখে রাখল।

গাজার শিশুরা সেদিন প্রথমবার ভয় ছাড়া বাইরে বের হলো। তাদের মুখে হাসি ছিল না, কারণ যুদ্ধজয় মানে আনন্দ নয়—যারা চলে গেছে, তারা তো আর ফিরবে না। কিন্তু তারা জানত, অন্তত ভবিষ্যৎ হয়তো আর আগের মতো হবে না।

ইসরায়েল তার শক্তি হারাল, কিন্তু পৃথিবী সেদিন এক নতুন সত্য শিখল—
অন্যায় যতই বড় হোক, মানুষের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি তার চেয়েও বড়।

আর ইতিহাসে সেই দিনটি এক নামেই লেখা থাকবে—
ইজরায়েলের পরাজয়।

(এই গল্পটি একটি কাল্পনিক ভাবে লেখা এখানে কাউকে অপমান করা হয়নি) (এখানে শুধু ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরা হয়েছ)

Comments

    Please login to post comment. Login