“মিথ্যার বোঝা”
নগরীর ব্যস্ত রাস্তায় দিন-রাত ছুটে বেড়ায় অয়ন। একজন প্রতিভাবান গ্রাফিক ডিজাইনার, কিন্তু তার ভিতরে লুকিয়ে আছে এক দুঃস্বপ্ন—দু’ বছর আগে কোম্পানির একটি বড় ভুলের দায় সে নিজের ওপর নিয়ে নেয়।
বাস্তবে সেই ভুলটা করেছিল তার কাছের এক সহকর্মী, আর অয়ন তাকে বাঁচাতে চুপ করে থাকে।
মিথ্যার বোঝা অয়নকে প্রতিদিন একটু একটু করে ভেতর থেকে গিলে খেতে থাকে।
রাতে ঘুম হয় না, কাজে মন বসে না, নিজেকেই অপরাধী মনে হয়।
বন্ধুর প্রতি যত ভালোবাসাই থাকুক, নিজের ভেতরের ছায়াগুলো তাকে অবশেষে খাঁচায় বন্দী করে ফেলে।
এক সন্ধ্যায় অয়ন ক্লান্ত হয়ে ফুটপাতের ধারে বিষন্ন হয়ে বসে ছিল। তার পাশেই দাঁড়ানো এক বৃদ্ধ তাকে দেখে বললেন, “মনে রেখো বাবা, সত্যকে আটকে রাখলে সে ছায়া হয়। আর মানুষ যতই ছায়া লুকাক, শেষে তা তাকে গ্রাস করেই ছাড়ে।”
অয়ন চমকে উঠল। “আপনি জানলেন কীভাবে?”
বৃদ্ধ শুধু হাসলেন, “মুখ নয়, মানুষের বোঝা দেখে অনেক কিছু বোঝা যায় সে কি ধরণের বোঝা বহন করে বেড়াচ্ছে।”
সেদিনই অয়ন সিদ্ধান্ত নিল—আর নয়।
পরদিন অফিসে গিয়ে সে সবার সামনে পুরো ঘটনা স্বীকার করল, খুলে বললো। সবাই হতবাক হয়ে গেল, কিন্তু অয়ন যেন বুক ভরে শ্বাস নিতে পারল প্রথমবারের মতো।
যে সহকর্মী ভুল করেছিল, সেও ভেঙে পড়ে সত্যি বলে দিল সব এবং সবার কাছে ক্ষমা চাইলো।
বড় ব্যবস্থাপক বললেন,
“ভুল করলে শাস্তি আছে, কিন্তু সত্য বলার সাহসই মানুষকে বড় করে।”
ফলাফল খুব কঠিন ছিল না, উল্টো অফিস অয়নকে আরও সম্মান করতে শুরু করল।
সে বুঝল— সত্য মানুষকে শাস্তি দেয় না; মুক্ত করে।
আর যে ছায়াটি তার ওপর ঝুলে ছিল, তা এক মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল।