“আলোর পথ”
তার নাম ছিল আবির। একসময় সে ছিল আলোকিত, হাসিমুখের, স্বপ্নে ভরা একজন তরুণ। কিন্তু জীবনের একের পর এক আঘাত—প্রিয়জন হারানো, ব্যর্থতা, আর নিজের প্রতি অবিশ্বাস—তাকে টেনে নিয়েছিল এক গভীর রাতের মতো অন্ধকারে।
তার মনে ছিল শুধু শূন্যতা, আর প্রতিদিন মনে হতো আকাশ যেন আরও নিচু হয়ে এসেছে।
একদিন সন্ধ্যার পর সে হাঁটছিল গ্রামের বাইরে পাহাড়ের দিকে। আকাশ ছিল কুয়াশায় ঢাকা, আর চারদিকে নিস্তব্ধতা। হঠাৎ সে শুনতে পেল ক্ষীণ একটা শব্দ—কাঁদছে যেন কেউ।
আবির থেমে গেল। গাছের পেছনে গিয়ে দেখল—একটা ছোট্ট শিশু, পথ হারিয়ে কাঁদছে।
শিশুটিকে দেখে আবিরের ভেতরের অন্ধকারটা কেমন যেন একটা ফাটল ধরল। সে বলল, “ভয় পেয়ো না, আমিতো আছি।”
শিশুটি তার হাত ধরেই জিজ্ঞেস করল,— “তুমি কি আলো দেখাতে পারো? আমাকে আমার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পারো। ”
এই প্রশ্নটি যেনআবিরের বুকে তীরের মতো বিঁধল। আবিরতো নিজের আলোই হারিয়ে ফেলেছিল অনেক আগে। সে কীভাবে আর কাউকে পথ দেখাবে?
তবুও সে শিশুটির হাত শক্ত করে ধরল।
হঠাৎ তার মনে হলো—যদিও সে নিজে আলো খুঁজে পায়নি, তবু অন্যকে খুঁজে পেতে সাহায্য করলে হয়তো নিজের পথও দেখা যাবে।
আবির শিশুটিকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। রাতের আঁধার ছিল ঘন, কিন্তু তারা দু’জন মিলে হাঁটতে থাকায় অন্ধকার যেন একটু একটু করে সরে যাচ্ছিল।
পাহাড়ের মোড় ঘুরতেই হঠাৎ দূরের কোনে দেখা গেল—গ্রামের মজদির মিনারে জ্বলতে থাকা ছোট্ট একটা লাইট।
শিশুটি খুশিতে চিৎকার করে উঠল, — “দেখো আলো!”
আবির থমকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল সেই লাইটের আলোর দিকে।
তার মনে হলো, এ আলোটা শুধু শিশুটির জন্য নয়—তার নিজের জন্যও।
অন্ধকার তাকে গ্রাস করতে পারেনি; কারণ যতক্ষণ সে অন্য কারও হাত ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ তার ভিতরে আলো টিকে থাকে এবং পরিশেষে সে প্রকৃত আলোর পথ খুঁজে পেয়েছে। অর্থাৎ ঐ মসজিদের রাস্তায় তাকে চলতে হবে যা প্রকৃত আলোর রাস্তা।
শিশুটিকে নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আবির প্রথমবার টের পেল—তার ভেতরের গভীর রাতের শেষ প্রহর পেরিয়ে গেছে। উঁকি দিচ্ছে নতুন ভোর, নতুন আলো।
এবার সে নিজেকে বলল, — “আমি ফিরে আসছি।” হে, রব আমি তোমার নিকট ফিরে আসছি।
শিক্ষা:
অন্ধকার কখনোই চিরস্থায়ী নয়।
কখনও কখনও আলোর পথ খুঁজে পাওয়া যায় যখন আমরা নিজে নয়—অন্যের জন্য একটুখানি আলো জ্বালাতে চেষ্টা করি।