
কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলামের সূচনাসূত্রে কে সবচেয়ে বেশি শত্রুতা করেছে, সবাই এক বাক্যে জবাব দিবে ‘আবু জাহেল’। কিন্তু এই ‘আবু জাহেলের’ এক পুত্র ছিল ‘ইকরামা (রা.)’, যে কিনা ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে ছিলেন। কথাটি অবাক লাগলেও এটি আসলেই সত্যি। এ বিষয়টি নিম্নরূপ:
‘ইকরামা (রা.)’ মুশরিক থাকা কালে যত অন্যায় করেছেন, ইসলাম গ্রহণের পর তার থেকেও বেশি ভালো কাজ করেছেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর এমন কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, যাতে তিনি অংশগ্রহণ করেননি এবং এমন কোনো দ্বীনি কাজ নেই, যাতে তিনি অংশীদার হননি। তিনি ইসলামের কাজে দলের অগ্রভাগে অবস্থান নিতেন।
ইয়ারমুকের দিন ‘ইকরামা (রা.)’ তীব্রভাবে শত্রুর উপর আক্রমণ করেন। যখন যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগল, তিনি তাঁর তরবারি খাপ মুক্ত করেন এবং বীরবিক্রমের মতো শত্রুদের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)’ তাঁকে বললেনঃ “হে ‘ইকরামা’! তুমি এটি করবে না, কেননা তুমি শহিদ হলে যুদ্ধ মুসলমানদের জন্য আরোও কঠিন হয়ে যাবে।”
‘ইকরামা (রা.)’ বলেনঃ “হে ‘খালিদ’! আমাকে আমার কাজ করতে দাও। কেননা তোমরা আমার অনেক আগে ইসলাম গ্রহণ করেছ। আর আমি এবং আমার পিতা ‘রাসূল (সা.)’-এর তীব্র বিরোধিতা করেছি। সুতরাং আমাকে ছেড়ে দাও আমি আমার আগের কর্মের কাফ্ফারা আদায় করে নিই। আমি ‘রাসূল (সা.)’-এর বিরুদ্ধেও কত যুদ্ধ করেছি, আর আজ তাঁর পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে আমি কি পালিয়ে যাব? না, তা কখনো হতে পারে না।”
এরপর তিনি তাঁর অধীনস্থ সেনাদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ “কে কে আমার হাতে মৃত্যুর জন্য বাইয়াত নিবে?” তাঁর এই আহ্বান শুনে এগিয়ে আসে চারশত মর্দে মুজাহিদ। তাঁরা সবাই মিলে শত্রুদের ওপর তীব্র আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যা ‘খালিদ (রা.)’ কল্পনাও করতে পারেননি।
যুদ্ধ শেষে ‘ইয়ারমুক’-এর ময়দানে ওই চারশত মর্দে মুজাহিদের মধ্যে অল্প কয়েকজন বাদে সবাই আঘাতে আঘাতে দুর্বল হয়ে মাটিতে পড়ে রইলেন। তাদের মধ্যে ‘হারিসা বিন হিসাম (রা.)’ পানি পানি বলে আওয়াজ দিলেন। যখন তার নিকটে পানি নিয়ে আসা হয়, তখন ‘ইকরামা (রা.)’ পানি বলে আওয়াজ দিলেন। এতে তিনি বললেনঃ “তোমরা তাকে আগে পানি দাও।”
যখন ‘ইকরামা (রা.)’-এর নিকটে পানি নিয়ে আসা হলো, তখন ‘আইয়াস বিন আবু রাবিয়া (রা.)’ পানি বলে আওয়াজ দিলেন। তার আওয়াজ শুনে ‘ইকরামা (রা.)’ বললেনঃ “তোমরা তাকে আগে পানি দাও।”
কিন্তু ‘আইয়াস (রা.)’-এর কাছে যেতে না যেতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তাঁরা ‘ইকরামা’ ও ‘হারিসা (রা.)’-এর নিকটে পানি নিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু এতক্ষণে তাঁরা দুজনই শাহাদাত বরণ করেছেন।
মৃত্যুর আগে ‘ইকরামা (রা.)’ ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)’-কে বলেছিলেনঃ “ইবনে হানযালা [‘ওমর (রা.)] বলিয়াছিলেন, আমরা শহিদ হব না, তাহা সঠিক নহে। কিন্তু আমাদিগকে ‘আল্লাহ তায়ালা’ শাহাদাত দান করিয়াছেন।”
এভাবেই ‘ইকরামা (রা.)’ তাঁর জীবনের কৃত অপরাধের মূল্য দিয়ে ছিলেন। ‘আল্লাহ’ যেন তাঁদেরকে হাউযে কাউসারের পানি পান করিয়ে তাঁদের অন্তর শীতল করেন, যে পানি পান করলে কখনো পিপাসা লাগবে না এবং তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
তথ্যসূত্র