
‘হামজা (রা.)’ ছিলেন ‘রাসুল (সা.)’-এর চাচা। রাসুল (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির দ্বিতীয় বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বয়সের দিক থেকে ‘রাসুল (সা.)’-এর থেকে দুই বছর বা চার বছরের বড়। ‘হামজা (রা.)’ ছিলেন মক্কার প্রভাবশালী ব্যাক্তি
‘হামজা (রা.)’-এর ইসলাম গ্রহণের সংবাদ যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কাফিরদের মনোবল অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এরই তিন দিন পর ‘ওমর (রা.)’ ইসলাম গ্রহণ করেন। এটা ছিল নবুয়তের ষষ্ঠ বছরের ঘটনা। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৩৩)
যেভাবে শহীদ হলেন,
মক্কার তৎকালীন এক বিশিষ্ট ব্যাক্তি ‘জুবাইর ইবনে মুতইমে’র চাচা ‘তুআইম ইবনে আদি’ বদর যুদ্ধে ‘হামযা (রা.)’-এর কর্তিক নিহত হয়। ‘জুবাইর ইবনে মুতিমে’র ছিল এক হাফশি ক্রীতদাস ‘ওয়াহশি ইবনে হারব’ সে তার মাতৃভূমি আবিসিনিয়া থেকে আনা একটি বর্শা সবসময় বহন করত। সে খুব নিখুত ভাবে বর্শা নিক্ষেপ করতে পরত।
এক দিন ‘জুবাইর’ ‘ওয়াহশি’-কে বললেন তুমি যদি ‘হামযা’কে হত্যা করতে পার তাহলে তোমাকে মুক্তি দেওয়া হবে। মুক্তির লোভে ‘ওয়াহশি’ উহুদ যুদ্ধে কুরায়েশদের বাহিনীতে যোগ দেয়। ‘ওয়াহশি’ উদ্দেশ্য সর্বাত্মক যুদ্ধে অংশগ্রহণ নয়। সে এসেছিল হামযাকে হত্যা করতে। সে একপর্যায় ‘হামযা’কে খুজে পাই। সে ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে আসে এবং সে ছুড়ে মারে তার অব্যর্থ বর্শা। ১মিনিটের ব্যবধানে তা বিদ্ধ হয় ‘হামযা (রা.)’-এর বুকে। বর্শা বিদ্ধ হওয়ার পরও তিনি ‘ওয়াহশি’ দিকে এগিয়ে আসতে চান, কিন্তু আর আগেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পরেন। আর এভাবে শাহাদাত বরণ করেন “রাসূল (সা.)’-এর প্রিয় চাচা ‘আমির হামযা (রা.)’’। ‘হামযা (রা.)’-কে হত্যা করে ‘ওয়াহশি’ আবারও তাবুতে ফিরে যান।
কাফেরা ‘হামযা (রা.)’-কে শহীদ করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং তাঁর লাশের সঙ্গেও নির্মমতার পরিচয় দিয়েছে। আবু ‘সুফিয়ানে’র স্ত্রী পিচাশ নারী ‘হিন্দাহ’ নাক-কান কেটে তাঁর চেহারাকে বিকৃত করেফেলে। তার বুক-পেট চিরে কলিজা বের করে। ক্ষোভে-ক্রোধে দাঁত দিয়ে তা চিবিয়ে ফেলে। প্রিয় চাচা নির্মমভাবে মৃত্যু লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন ‘রাসুল (সা.)’। যুদ্ধ শেষে ‘হামযা (রা.)’-কে ‘মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ (রা.)’-এর সাথে সমাহিত করা হয়।
শেষঃ আবু তালেবের মৃত্যুর পর তিনিই ছিলেন নবি পরিবারের উপর সবচেয়ে বড় ছায়া। ‘হামযা (রা.)’-র হত্যাকারি হাফশি ক্রীতদাস ‘ওয়াহশি’ এবং তার লাশ বিকৃতকারি নারী ‘হিন্দাহ’ দুজনেই মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তী জীবনে তারা দুজনেই ইসলামের বিস্তারে বড় ভুমিকা পালন করেন।
হামযা (রা.)-এর জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হতে এবং তাঁর জীবন সম্পর্কে আরো জানতে পড়তে পারেন। এ লেখাটিও ব্যক্তিগত পড়া ও এসব সূত্র থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রচিত: