স্বামী-স্ত্রী আর একটি ছেলের স্বমনয়ে গঠিত ছোট্ট একটি পরিবার।সেই ছোট্ট পরিবারে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মেয়েটির জন্মের আগে তার মা একবার প্রেগন্যান্ট হয়েছিলেন তবে মা চেয়েছিলেন একটি মেয়ে আর একটি ছেলে। যাতে বাচ্চাদের কোনো অভাবের মুখ দেখতে না হয়। তাই ছেলের জন্মের ৮ বছর পর আল্লাহর রহমতে একটি কন্যা সন্তান লাভ করেন।নিতান্তই পরিবারটি ছিল মধ্যবিত্ত তবে পুরো এলাকায় তাদের মতো অদ্বিতীয় আর কেউ নেই, প্রত্যেকেই তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বাচ্চা মেয়েটি ছিলো পরিবারের রাজকন্যা। গোষ্ঠীর প্রত্যেকেই তাকে খুব ভালোবাসতো।যেমন ছিল তার রুপ তেমনি সুন্দর ছিল তার ব্যবহার। খুবই সরল সোজা আর ভদ্র একটা মেয়ে। মায়ের আঁচলের নিচে থাকতো সবসময়।মাও তাকে চোখের আড়াল হতে দিত না।তার জীবনে তার মা বাবার ভূমিকা অত্যাধিক। ভাইয়ের ভূমিকাও ছিল।বলে শেষ করা যাবে না যে সে ঠিক কতটা আদরের। তবে তার এই আদরের জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
মেয়েটির মুমুর্ষ জীবনের সূচনা ঘটে ৬ বছর বয়সে। পুরো এলাকায় মেয়েটির মতো রূপবতী আর কেউ নেই,এই রূপ নেয় ধ্বংসের ভয়াবহ আকার। মেয়েটির আপন চাচাতো ভাইয়ের নজর পরে মেয়েটির উপর, ছেলেটি এই ছোট্ট বাচ্চাটিকে ভয় দেখিয়ে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। কী জঘন্য বেপার! মেয়েটি ভয়ে চুপ হয়ে যায়। প্রত্যেকদিন মেয়ের সাথে এমন হতো।সে পালানোর চেষ্টা করতো কিন্তু পারতো না।ভয় আর সরলতা যেন তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তবে যায় হোক মা তো মাই হয়।মা হঠাৎ একদিন ছেলেকে এমন করতে দেখে ফেলে তবে স্পষ্ট করে বুঝতে পারে না। বাড়িতে আসার পর যখন মেয়েকে সব বলতে বলা হয় , বাচ্চা মেয়েটি ভয়ে কিছুই বলতে পারছিলো না।বাবা মা নির্ভয় দিলে মেয়েটি সব ঘটনা খুলে বলে।যা শুনে মায়ের বুকে দাগ কাটে, মা দিশেহারা হয়ে পড়ে,এ কি হলো তার মেয়ের সাথে! কেনো হলো! মা কান্নায় ভেঙে পড়েন, আদরের ছোট্ট মেয়েটার সাথে এতো কিছু হয়ে গেছে তিনি জানেন না......বাবা রাগে গজগজ করছে, রাগে তিনি তার ছোট্ট মেয়েটিকে বাঁশের চিকন লাঠি দিয়ে খুব মারেন, রক্তাক্ত প্রায় অবস্থা, বাচ্চা মেয়েটিকে এই প্রথম তিনি মারলেন। মেয়েটির মনের অবস্থাটা ঠিক কী!!৬ বছরের একটা সহজ সরল বাচ্চা মেয়ে ঠিক কতটা বুঝে?তার কী দোষ ছিল?! তবে মা আইনের ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছিলো যা দেখে ওই ছেলের মা মানে বাচ্চাটির চাচি তার মাকে black magic করে মেরে ফেলে।৭ বছরে পা ফেলতে না ফেলতেই এই ছোট্ট মেয়েটি তার মাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলে,,,,প্রথমত দাদা-দাদি কাউকে পায়নি,মামা নেই,ভাই এতো কেয়ার করে না, নানা-নানী কিছু নেই এখন মাকেও হারালো। বাচ্চা মেয়েটি আর তার বাবা একদম ভেঙে পড়েন।বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু করবেন এই সাহস হয়নি মেয়েটির বাবার । মেয়েটি ৬ মাস নানী বাড়ি থাকে তবে সুখে থাকে এমন না।কাজও করতো আবার পড়তোও। পড়ালেখায় খুব ভালো।প্রচন্ড মেধাবী। বাবা জানতেন না তার আদরের মেয়ে নানী বাড়িতে কষ্ট করছে,জানার পর মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসে।এখন মেয়ে বাবাকেও ভয় পায়,বাবাও যে একজন ছেলে 🙂 নানী বাড়িতেও মেয়েটির উপর শকুনের চোখ ছিল। বাড়িতে আসাতে যেন একটু মুক্তি পায়। তবে বাড়িতে যে ভালো ছিল এমনটা না। অনেক শকুন মেয়েকে ঠুকরে ঠুকরে খেয়েছে। অসহায় মেয়ে কাকে কি বলবে তার যে আর কেউ নেই। বাবাকেই আর কীভাবে বলবে সেই সাহস হয়না। মেয়েকে নিয়ে বাবার কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে । অন্যের বাড়িতে মেয়েকে রেখে কাজে যায় , রাতে আবার নিয়ে আসে। সারাদিন কেমন যায়,কেউ কিছু বলে কিনা তা নিয়ে বাবার কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। কেননা ঘড়ের কাজ বাইরের কাজ সব তিনি একা হাতেই করেন। সত মা আনেনি ছেলে মেয়ের কষ্ট হবে বলে।অথচ তার বাচ্চা মেয়েটি যে ভিতরে ভিতরে মারা যাচ্ছে তার খবর নেই। তিনি ভেবেছিলেন মেয়ে হয়তো ভালোই আছে কেননা যেই বাড়িতে মেয়েকে রেখে যায় সেইটা তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি।ওই বাড়ির বড় মেয়ে যেই বিদ্যালয়ে পড়তো মেয়েকেও সেই বিদ্যালয়ে দেয় যাতে মেয়েটির ওই বড় বোন তাকে দেখে রাখে। তবে মেয়েটির বড় বোনই তাকে অত্যাচার করতো। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে মেয়েটিকে শারীরিক মানসিক অত্যাচার করতো। তাকে তার টিফিন খেতে দিত না, তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার থেকে তার আপু ২ বছর টাকা নিয়েছে।এক কথায় মেয়েটি স্কুলে বুলির শিকার হতো।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কখনো খাইতে পারতো আবার কখনো না খাইয়াই দিন কাটতো।ওই বাড়ির এক কোনায় পড়ে থাকতো। অতিরিক্ত শীতেও বিছানায় জায়গা পেতো না,কাজ করতো, কিছু দিলে খেতো। মেয়েটি ক্লাস ৫ এ পড়ে তখন। নিজের যত্ন নিতে পারে না,কেউ শিখায়নি তবে পড়াশোনায় খুব ভালো। মায়ের গর্বের কারন ছিল।৫ এও এতো ঝড়,বাধা, বিপত্তি পার করে জিপিএ ফাইভ পায়।সবাই খুব খুশি।
ক্লাস ৬ এ উঠলে মেয়েটি যথেষ্ট বড় অন্যের বাড়িতে যেতে চায়না।তার উপর যেই অত্যাচার হয় তা একবার মুখ ফুটে বাবাকে বলে তবে বাবা বিশ্বাস করে না। ওইদিন অন্যের বাড়িতে না যাওয়ার জেদ ধরলে বাবা খুব জোড়ে গালে থাপ্পড় মারেন। গালে দাগ পড়ে যায় অবশ্য তিনিও কষ্ট পেয়েছেন কারন তিনি আর নিতে পারছেনা এতো চাপ,খুব ক্লান্ত তিনি।এরপর বাবাকে বার বার বলার পর তাকে আর ঐ বাড়িতে পাঠানো হয়না। তাকে তার দূরসম্পর্কের নানী বাড়িতে রাখা হয়।বাবাও ভরসা পায় না,যেই বাড়িতে ছেলে থাকে ঐ বাড়িতে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সকালে দিয়ে যায় রাতে নিয়ে আসে।ঐ নানী বাড়িতেও মেয়েটির সাথে একই ঘটনা ঘটে। ওইখানেও একটা আধা বয়স্ক লোকের নজর পড়ে মেয়েটির উপর। মেয়েটি তখন বড় সে নিজেকে বাঁচাতে লোকটি তার কাছে আসলে লোকটাকে মারে।তার নানীও কিছুটা হয়তো জানতো তবে কিছুই বলতো না। মেয়েটা ঐ বাড়িতেও ভয়ে ভয়ে থাকে।আর যেতে চায় না।এক পর্যায়ে বাবা দীর্ঘ ৪.৫ বছর পর আরেকটা বিয়ে করলেন বাধ্য হয়ে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,