Posts

গল্প

ফুলের ন্যায় বাচ্চা মেয়েটির অসহায়ত্ব।2

November 18, 2025

Najmim Sultana

25
View

বাবার বিয়ের পর মেয়েটি একটি সঙ্গী পায়।ভেবেছিলো মায়ের অভাব পূরণ হবে। তবে তা আর হয়না বাড়িতে যে ঠাঁই পায় তাই অনেক। প্রথমদিকে খুব ঝগড়া করতো পরবর্তীতে একটু মিল হয় তবে ঝগড়া যে স্থগিত হয় এমন না।সত মা যেমন হয় তেমনি তবে বাকীদের থেকে আলাদা ধরতে গেলে ভালোই। কিন্তু মেয়ে তার মায়ের স্থান অন্য কাউকে দিতে পারছে না।।।।।।

এইভাবেই কেটে যায় আরো ৫/৬ বছর। পরিবারে অনেক ঝামেলা অশান্তির সৃষ্টি হয়।সব ঝড় যায় মেয়েটির উপর দিয়ে।কারন মেয়ে যে এখন বড় হয়ে গেছে।এখন বয়স তার ১৬ বছর। বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। মেয়ের মনের অবস্থা, তার শৈশব সবই যায় যুদ্ধ করতে করতে। একটু শ্বাস নিবে এই পর্যায়ে আসে আরেক ঝামেলা। মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দিয়ে দাও নয়তো তুমাদের সম্মান বেঁচে খাবে!!!

সারাজীবন মেয়ে এতো আত্মত্যাগ করলো কেউ দেখলো না এখন চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে! কখনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলেনি, বান্ধবীরাও তেমন ছিল না।ছিল না বলতে তার বাবা পছন্দ করতো না।বাবা ঠিক যা চাইতো মেয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাই করতো। একদম অনুগত ছিল। জীবনে কোনো ছেলের অস্তিত্ব নেই। ছেলে বলতে শুধু মাত্র ভাই আর বাবা।

মেয়েটি এইবার আর মানতে পারছেনা ।সে ভাবতে পারেনি যে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।এত অনুগত, মার্জিত,সভ্য থাকার পরেও একি ঝড়!!!! যেখানে মেয়েটির স্বপ্ন ছিল সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে।সব অসহায়দের সেবা করবে।সব স্বপ্ন যেন কাঁচের ন্যায় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে । বাবার কথায় বাইরে যাওয়া অসম্ভব।মূলত বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। বাবার জন্যই এতো কষ্টের পরেও বেঁচে আছে।সেই বাবাই যখন তাকে না জানিয়ে বিয়ের ঘর নিয়ে আসে বার বার। মেয়েটি তখন মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়ে। এসএসসি পরীক্ষাও ঠিকভাবে দিতে পারে না।যার কারণে রেজাল্ট খারাপ হয়।সে একেবারে ভেঙে পরে। পরিবারের কারো ইচ্ছা ছিল না তাকে পড়ানোর,নিজ চেষ্টায় এই পর্যন্ত এসেছে। তবে ঝড়ে তার ভিতরটা মাটির নিচে চাপা পড়ে। এতো খারাপ রেজাল্ট হয়,সে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। নিজের চোখের সামনে তার স্বপ্ন গুলো সব শেষ হয়ে যায়। নিজেকে একাকীত্ব আরো গ্রাস করে। অন্ধকার ঘরে নিজেকে বন্দি করে নেয়। এতে যেন কারো কিছু যায় আসে না। আবারো বিয়ের জন্য সবাই উতলা হয়ে উঠে।এই খারাপ অবস্থাতেও। মেয়েটি বাচ্চাকালে মরার খুব চেষ্টা করেছে।বার বার বিষ বানানোর চেষ্টা করেছে,যেন খেয়ে মরতে পারে।গলায় রশিও দিয়েছে। হাস্যকর? আমাদের কাছে হাস্যকর তবে একটা ৮/১০ বছরের বাচ্চার এরূপ চেষ্টা!!! কী সাংঘাতিক ব্যাপার!!

যাই হোক মেয়েটি নিজের মনের কথা কখনো কাউকে বলতে পারেনি। কেউ জানতে ও চায়নি।তার শৈশব ও কৈশোর সবই অসহায়ত্বে ভরপুর।না বলতে পারা প্রত্যেকটা কথা আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে আর মানতে না পেরে পারি জমায় ওপারে একটু শান্তির আশায়।

                তবে শান্তি কী মিলবে? শেষ পরিনতিটা এমন না হলেওতো পারতো। শুধু একটা সুন্দর পরিবার আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন চেয়েছিলো। সুন্দর আর সরল হওয়া কি অপরাধ। নিজের আত্মত্যাগের পরিনতির ফল কী এমন হয়????? ধৈর্যের শেষ পরিনতি কী ধ্বংসের কারন হয়?!মা ব্যতীত একটা বাচ্চার জীবন ঠিক কেমন হতে পারে!১০ বছর মাকে ছাড়া পথচলা কী খুবই সহজ ছিলো????!!১৭ বছরেই নিজেকে বিলীন করে দিতে হলো সাধের দুনিয়ার একাকীত্ব, মানসিক, শারীরিক নির্যাতনে🙂।     

          (সবশেষে প্রত্যেকের মুখে শোনা যায়,"মেয়েটি এতো আদরের ছিলো যে, মা মাটিতে রাখেনি পিঁপড়ায় খাবে, মাথায় রাখেনি উকুনে খাবে অথচ মেয়েটার শেষ পরিনতি এ কেমন???!!!!!) 

Comments

    Please login to post comment. Login